এক গুপ্ত আত্মোন্নতির কথা : প্রথম পর্ব

একদিন শতবর্ষ আগে

চঞ্চল পুলক রাশি

কোন স্বর্গ হতে ভাসি

নিখিলের মর্মে আসি লাগে

নবীন ফাল্গুন দিন

সকল বন্ধনহীন উন্মত্ত অধীর

উড়ায়ে চঞ্চল পাখা

পুষ্পরেনু ঘন্ধ মাখা দক্ষিণ সমীর

সহসা আসিয়া তারা

রাঙায়ে দিয়েছে ধরা

যৌবনের রাগে

তোমাদের শতবর্ষ আগে

সেদিন উতলা প্রাণে

হৃদয় মগন গানে

কবি এক জাগে

কত কথা পুষ্প প্রায়

বিকশি তুলিতে চায়

শত অনুরাগে

একদিন শতবর্ষ আগে….

Anushilan Samiti

১৯০২ খ্রিস্টাব্দ ২৪ শে মার্চ , কলকাতার মদন মিত্র লেনে মহামান্য সতীশচন্দ্র বসু ও তাঁর সহকারী ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র প্রতিষ্ঠা করলেন বাংলার স্মরণীয় বিপ্লবী সংগঠন #অনুশীলন_সমিতি। ওই বছরই গুজরাটের বরোদা থেকে অরবিন্দ  ঘোষ প্রেরিত দূত যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা কলকাতার আপার সার্কুলার রোডে একটি গুপ্তসমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় যা অচিরেই অনুশীলন সমিতির  সঙ্গে মিলিত হয়ে যায়। ঠিক এরম ভাবেই একদেহে বিলীন হয়ে গিয়েছিল #আত্মোন্নতি_সমিতি নামের পূর্বেকার একটি দল ।প্রকৃত প্রস্তাবে ভারতের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে বিপ্লবী আন্দোলন বা সশস্ত্র বৈপ্লবিক পদ্ধতির গুরুত্ব অহিংস পদ্ধতির গুরুত্ব থেকেও অধিক উল্লেখ্য ছিল।যদিও স্বাধীনতার পর একটি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে বুদ্ধিজীবী মানুষেরা সেই ইতিহাসকে সমাধি দিতে বেশি ভালোবাসেন। 

Jatindra Nath Banerjee (Niralamba Swami) (19 November 1877 – 5 September 1930) was one of two great Indian nationalists and freedom fighters – along with Aurobindo Ghosh (Sri Aurobindo) – who dramatically rose to prominence between 1871 and 1910


সশস্ত্র বৈপ্লবিক পদ্ধতি আন্দোলন অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলনের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ,এর সঙ্গে একথাও ভীষণভাবে সত্য যে বাংলার বিপ্লবী আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে অনুশীলন সমিতি হল পথিকৃৎ। তবে অনুশীলন সমিতি দীর্ঘকাল সশস্ত্র বিপ্লবী পদ্ধতিতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় বিপ্লবী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেও এবং পথিকৃতের শিরোপা পেলেও অনুশীলন সমিতি কলকাতায় প্রথম বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি নয়। এর কৃতিত্ব দাবি করতে পারে অন্য একটি সমিতি , তার নাম আত্মোন্নতি সমিতি।

Anushilan Samiti Logo

 আজ থেকে একশো ষোলো বছর আগে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় আত্মোন্নতি সমিতি।  রঘুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১৩ বি ওয়েলিংটন স্ট্রিট যার বর্তমান নাম রাজা সুবোধ মল্লিক স্কয়ার, সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় আত্মোন্নতি সমিতি। তাঁর সহযোগী ছিলেন হরিশচন্দ্র সিকদার, নিবারনচন্দ্র ভট্টাচার্য,সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সুরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভুবনেশ্বর সেন, রাধারমন দাস, রুক্মিণী মুখোপাধ্যায়, নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ । পরে যাঁরা যোগ দেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন প্রভাসচন্দ্র দে, ইন্দ্রনাথ নন্দী এবং বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী । ১৯০২ খ্রিস্টাব্দ অনুশীলন সমিতির সঙ্গে মিশে যায় আত্মোন্নতি সমিতি। 
 উক্ত সমিতির প্রত্যেকেই যেহেতু স্বর্গত সুতরাং তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন করে কিছু জানার উপায় নেই । তবে নানা বিপ্লবীর রচনা এবং সমসাময়িক সরকারি-বেসরকারি নথিপত্র এবং নানাবিধ উপকরণ থেকে এই সমিতি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে কিছু ধারণা করা যেতে পারে।


সত্যেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত #বিপিন_দা_স্মরণে ও  #বাংলার_গুপ্ত_সমিতি_ও_আত্মোন্নতির_গোড়ার_কথা এদুটি সাপ্তাহিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এবং সেখান থেকেই জানতে পারা যায় আত্মোন্নতি সমিতির কথা। এ ছাড়াও সত্যেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের আরো বেশকিছু রচনায় এই সমিতির হদিস পাওয়া যায় ।
গুপ্ত সমিতি নিয়ে আলোচনার করার আগে দুটো প্রশ্ন উত্থাপন করা খুব দরকার এক , বিপ্লবী আন্দোলন বলতে স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা কি বুঝতে পারি ? দুই, এই আন্দোলনে যারা যুক্ত ছিলেন তাঁদের কি নামে অভিহিত করা হবে ?


প্রথম প্রশ্নের উত্তর  :  উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে ভারতের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষের ফলে একদিকে যেমন জাতীয়তাবাদে প্রসার ঘটেছিল, বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তাঁদের কার্যকলাপ শুরু হয়েছিল তেমনি বৈপ্লবিক আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। তার প্রসার ও ব্যাপ্তি ঘটেছিল বিংশ শতাব্দীতে। বিপ্লববাদ সংগ্রামী জাতীয়তাবাদের একটি অংশবিশেষ ।স্পষ্টভাবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, এই পন্থায় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ করার জন্য যে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা, প্রয়োজনে বোমা বন্দুক বা যেকোন অস্ত্র ব্যবহার করা এবং সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসী হয়ে দল গঠন করে দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে তীব্র আন্দোলন ও সংগ্রাম গড়ে তোলার নামই হচ্ছে বিপ্লববাদ । 
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর :  এই যে একটা সময় ব্রিটিশ শাসকরা তো বটেই এমনকি ভারতীয় বহু লেখকদের রচনায় চরমপন্থা বিপ্লবকে #বিপ্লবী_সন্ত্রাসবাদ বলে এবং চরমপন্থী বিপ্লবী দের #সন্ত্রাসবাদী বলেই উল্লেখ করা হতো । কিন্তু এই অভিধা সম্পূর্ণ #বিভ্রান্তিমূলক । তাঁরা শাসকশ্রেণীর মনে ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইলেও তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল বিপ্লবীপন্থায় ভারতবর্ষ স্বাধীন করা। তাই তাঁরা সন্ত্রাসবাদী বা আজকালকার ভাষায় আতঙ্কবাদী জঙ্গি নন.. তাঁরা বিপ্লবী । তবে যেহেতু সমাজ পরিবর্তন বা সমাজের সাম্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিপ্লববাদের সঙ্গে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে ঔপনিবেশিকতা থেকে দেশকে স্বাধীন করার বিপ্লবী প্রচেষ্টার মধ্যে চরিত্রগত ও আদর্শগত পার্থক্য আছে তাই এঁদের #জাতীয়_বিপ্লবী বলা সংগত ।

ভারতবর্ষে বিপ্লবীদের উদ্ভব এবং প্রসারের কারণ প্রধানত চারটি-
 প্রথমত : মতাদর্শগত – উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে অনেক মনীষী তাদের বক্তৃতায় দেশবাসীকে শক্তি অর্জনের কথা , সংগঠনের উপর জোর দেওয়ার কথা, আত্মশক্তি বাড়ানোর কথা, প্রয়োজনে অস্ত্র ধরার কথা বলে আসছিলেন। যা যুবসমাজের মনে নব নব চেতনা ও শক্তির সঞ্চার করে।
 দ্বিতীয়ত : শাসনতান্ত্রিক – ভারতের ব্রিটিশ সরকার দেশবাসীর রাজনৈতিক অধিকারি শুধু হরণ করেনি ,এর সঙ্গে তাদের বর্ণবিদ্বেষ অত্যাচার ও ভারতবাসীকে অপমান করার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দেশের প্রতিকার চাইছিল ।
তৃতীয়ত : অর্থনৈতিক – ব্রিটিশ সরকারের অর্থনৈতিক শোষণ এবং দেশের সম্পদ বহির্গমনের ফলে ভারতবাসী দারিদ্র বৃদ্ধি পায়। বিপ্লবী পন্থায় এই দূরাবস্থা মোচন অনেকের লক্ষ্য হলো।
চতুর্থত :  রাজনৈতিক- ব্রিটিশ শাসনের কুফল ও রাজনৈতিক অধিকার হরণ সত্ত্বেও, #ড্রেন_অফ_ওয়েলথ বিষয়ে অবহিত হওয়া সত্বেও ভারতীয় জাতীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতাগন নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। তাঁরা আবেদন-নিবেদনের রাজনীতিকে পরিত্যাগ করতে পারেননি। ফলত এই নরমপন্থার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হিসাবে নরমপন্থী কংগ্রেসে চরমপন্থী নেতার যেমন আবির্ভাব ঘটে, তেমনি উদ্ভব হয়েছিল বিপ্লববাদের। 
বাংলা ,মহারাষ্ট্র এবং পাঞ্জাবে ব্যাপকভাবে বিপ্লববাদের প্রসার ঘটে। তবে উত্তরকালে ভারতের নানা অঞ্চলে এবং বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে ভারতীয় বিপ্লবী কার্যকলাপ ছড়িয়ে পড়ে । বাংলা বরাবরই ছিল বিপ্লবী আন্দোলনের পীঠস্থান ছিল। অন্যান্য রাজ্যের কথা এই রচনায় আলোচিত না হলেও ভুললে চলবেনা ভারতের নানা অঞ্চলের এবং বহির ভারতের বিপ্লবী দল ও সংগঠন গুলোর মধ্যে যোগাযোগ ছিল। তারা সর্বদা পরস্পর সমান্তরাল ছিল এ কথা যেমন ঠিক নয় তেমনি নানা গোষ্ঠী উপদলের মধ্যে অভ্যন্তর মতপার্থক্য এবং ভিন্নতা যে ছিল না তাও বলা যাবে না ।

 
আমাদের আলোচনার অতঃপর আত্মোন্নতি সমিতি প্রতিষ্ঠা এবং অনুশীলন সমিতিতে মিশে যাওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮৯৭ থেকে ১৯০২ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এই প্রবন্ধে।প্রসঙ্গত, পূর্বেই বলেছি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দ আত্মোন্নতি সমিতি এবং ১৯০২ খ্রিস্টাব্দ অনুশীলন সমিতি দ্বারা গৌরবান্বিত হয়েছিল । এই যে সব দেশহিতের নিমিত্ত এই ব্রিটিশ বিরোধী গুপ্ত সমিতিগুলি স্থাপন হয়েছিল তার আসল ভিত্তিভূমি কিন্তু প্রস্তুত হয়েছিল ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে।  
১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে রাজনারায়ণ বসু প্রতিষ্ঠিত বাংলার প্রথম গুপ্ত সমিতি ছিল #সঞ্জীবনী_সভা। এই সভার সভ্য হিসাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও অবস্থান করতেন। তবে সেটি যে কাজের কিছু করেনি…. তার সাক্ষ্য দিয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি লিখেছিলেন –
” জ্যোতিদাদার উদ্যোগে আমাদের একটি সভা হইয়াছিল ।বৃদ্ধ রাজনারায়ণ বাবু তাহার সভাপতি । ইহা স্বদেশিকের সভা। কলকাতার মধ্যে এক গলির মধ্যে এক পড়োবাড়িতে সেই সভা বসিত। সেই সভার সমস্ত অনুষ্ঠান রহস্যে আবৃত ছিল। বস্তুত, তাহার মধ্যে গোপনীয়তাটাই একমাত্র ভয়ঙ্কর ছিল। আমাদের ব্যবহারে রাজা বা প্রজার ভয়ের বিষয় কিছুই ছিল না।”


 পনেরো বছরের কিশোর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উত্তেজনার আগুন পোহানোর কথা বলেছেন। আবার প্রকৃত বিপ্লবী তৎপরতার কেন্দ্র হিসেবে এই সভার আদৌ কোনো বিশেষ গুরুত্ব নেই তাও ঠিকই বলেছেন ।তবে খামোকা এমন একটা সভা স্থাপিত হল কেন? 
  কারণ , তখন সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তার উন্মেষ ঘটেছে। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন স্থাপিত হওয়ার পর বোঝা গেল  রাজনৈতিক সভা সমিতির নেতৃত্বও ভূস্বামী অর্থাৎ দেশীয় মানুষের হাতে নেই। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে, উঠে এসেছিল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নেতৃত্ব। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত ব্রাহ্মনেতা পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর উদ্যোগে সংগঠিত এক ঘননিবিষ্ট মন্ডলী, যাঁরা অগ্নি সাক্ষী রেখে নিজেদের বুকে রক্ত ছুঁয়ে দীক্ষা নিলেন স্বদেশ ব্রতের। সেখানে আটটি প্রতিজ্ঞা গৃহিত হয় । এর মধ্যে প্রথম প্রতিজ্ঞা ছিল ” স্বায়ত্তশাসনই আমরা একমাত্র বিধাতৃ নির্দিষ্ট শাসন বলিয়া স্বীকার করি। “


উনিশ শতকের ষাটের দশকের থেকেই অবশ্য বাংলায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করলো। ১৮৭০ সালে #হিন্দুমেলা উপলক্ষে অমৃতবাজার পত্রিকায় লেখা হলো অন্য এক সুর :
 এক্ষণে আমাদের মধুরস ছাড়িয়া তিক্ত রসাস্বাদ  প্রয়োজন আছে। আমরা যখন দেখিব হিন্দুমেলার সুবিস্তীর্ণ বঙ্গভূমি মল্লবেশধারী হিন্দুসস্তান-গণে পরিপূর্ণ । বাঙ্গালীরা তেজস্বী অশ্ব অবলীলাক্রমে ও অশেষ কৌশলে সঞ্চালিত করিয়া দর্শককে বিমোহিত করিতেছেন,যখন দেখিব অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হইয়া উদ্যমের সহিত দ্বন্ যুদ্ধে অবতীর্ণ হইয়াছে এবং পরস্পর পরস্পরের আঘাতে আঘাতাতীত হইয়া, রক্তাক্ত কলেবরে কেহ আহত পদে , কেহ আহত হস্তে , কেহ বা আহত মস্তকে রণাঙ্গন পরিত্যাগ করিতেছেন , সেইবার জানিব হিন্দুমেলার মহৎ উদ্দেশ্য , অনেকাংশে সুসিদ্ধ ও সফল হইয়াছে।”

HINDU MELA


ন্যাশনাল বা জাতীয়তাবাদ শব্দটি ভীষন প্রিয় ছিল। শ্রদ্ধেয় নবগোপাল মিত্রের সাহায্যে এই হিন্দুমেলার সূত্রপাত করার পিছনে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির ভূমিকা ছিল স্মরণীয়।
এই মেলার এক অধিবেশনে মাত্র পনেরো বর্ষের রবীন্দ্রনাথ পড়লেন এক কবিতা , সেই কবিতা ছিল ভারতীয় জাতির, হিন্দুর রক্তের স্রোতধারা , বাঙ্গালী উন্মাদ হয় জাগ্রত হবার কবিতা-
ব্রিটিশ বিজয় করিয়া ঘোষণা

 যে গায় গাক আমরা গাব না 

আমরা গাব না হরষ গান ।

এসো গো আমরা যে ক’জন আছি

 আমরা ধরিব আরেক তান ।

NABAGOPAL MITRA


#আমরা_ধরিব_আরেক_তান হল স্বজাত্যবোধের , জাতীয়তার এবং শেষ পর্যন্ত আত্মশক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠার। শুধু হিন্দুমেলা নয় , শিশির কুমার ঘোষ এর #ইন্ডিয়ান_লীগ, তারপর সুরেন্দ্রনাথ – আনন্দমোহন বসু -শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখের হাতে তৈরি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন বা #ভারতসভা (১৮৭৬ )  থেকে শুরু করে স্বদেশি চেতনা কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার আগে ছড়িয়ে পড়েছিল । 
দেশের স্বাধীনতার নিমিত্ত , বিপ্লবের নিমিত্ত , অত্যাচারের প্ৰতিকারের জন্য আত্মশক্তিতে নির্ভর করা বিশেষ প্রয়োজন তা অনেকেই অনুভব করতে শুরু করেছিলেন । এ ব্যাপারে বৈপ্লবিক মতাদর্শে প্রভাব ফেলেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তা ধারা। পরবর্তীকালের বৈপ্লবিক আন্দোলনের উপরও এনাদের প্রভাব ছিল অনস্বীকার্য। 

RABINDRANATH TAGOR


১৯১৮  বিচারপতির কুখ্যাত এস.সি.রাওলাট তাঁর সিডিশন কমিটির রিপোর্টে উক্ত বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।  আরও অনেকে বিশেষ ব্যক্তির প্রভাব ছিল তরুণ সম্প্রদায়ের ওপর ছিল ; যেমন – ভারতের প্রথম কেমব্রিজ বাংলার আনন্দমোহন বসু ইতালির ঐক্য আন্দোলনের মাৎসিনি , গ্যারিবলডি প্রমুখের জীবন চিরতকার যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের প্রভাব ছিল ।


অন্যদিকে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারাদন্ড, অস্ত্র আইন, নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করা এবং ভার্নাকুলার প্রেস এক্ট ইত্যাদি আইনে পরিণত হতে না পারা , ইলবার্ট বিলের খসড়া আইনে পরিণত হতে না পারা ইত্যাদির পরেও কংগ্রেস ইংরেজদের ভিক্ষার উপর নির্ভরশীল হয়েছিল। 
একদিকে ব্রিটিশ অত্যাচার অন্যদিকে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার পর নরমপন্থী পদ্ধতিতে আবেদন-নিবেদন বাংলা ও মহারাষ্ট্রে নতুন এক স্রোতের সৃষ্টি করে। তারই মধ্যে দেখা যায় চরমপন্থী বিপ্লববাদের স্রোত। বিলেত প্রত্যাগত অরবিন্দ ঘোষ বরোদায় থাকাকালীন #ইন্দুপ্রকাশ পত্রিকায় নরমপন্থীদের তীব্র সমালোচনা করেন । তাঁর মতে নরমপন্থা ছিল #রাজনৈতিক_ভিক্ষাবৃত্তি । 

JYOTINDRANATH TAGOR

#ক্রমশ:
#দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ বাংলার প্রথম বিপ্লবী গুপ্তসমিতি “আত্মোন্নতি সমিতি”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি
হিন্দুমেলার ইতিবৃত্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.