সপ্তদশ লোকসভার প্রাক্কালে দেশ আজ এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক সমীকরণের সাক্ষী। বাইশটি রাজনৈতিক দল যা আসলে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান তারা আজ জোটবদ্ধ হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে পরাস্ত করতে। কয়েকদিন আগেও যারা একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারে লিপ্ত ছিল আজ তারা নিজেদের পরিবারের উত্তরাধিকারীদের অস্তিত্ব সংকটের ভয়ে তথা জায়গিরদারি রক্ষার্থে মরিয়া হয়ে একে অপরের হাত ধরেছে। একদিকে যেখানে ভারতীয় জনতা পার্টির মূল মন্ত্র শুধুই জাতীয়তাবাদ, সেখানে বিরোধী দলগুলির মূল মন্ত্র পারিবারিক প্রতিষ্ঠানবাদ, উত্তরাধিকারীদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাবাদ, আঞ্চলিকতাবাদ। ধর্মীয় বিচ্ছিন্নতাবাদ, জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদ, আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদ যতরকমের বিভাজনের রাজনীতি আছে তার সবগুলিই তারা প্রয়োগ করতে চাইছে। যদি এই বিভাজনের চোরা গলি দিয়ে নতুন কোনও ভোটব্যাঙ্কের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু বিগত পাঁচ বছরে তাদের প্রায় সকল প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে এবং আগামীদিনেও তা ব্যর্থ হবে বলে সকল শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন ভারতবাসীর বিশ্বাস। কিন্তু এই বিশ্বাসের ভিত্তিটা কী? এই প্রশ্নের জবাবে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল নানা মতে বিভক্ত। কারো দাবি নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা, কারো দাবি বিজেপির প্রচার কৌশল ইত্যাদি, কিন্তু আসল কারণ লুকিয়ে আছে আরও গভীরে।
স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের অধিকাংশ সময় একচ্ছত্র শাসনকালে কংগ্রেস যে জাতীয় উন্নয়নের মডেল স্থাপিত করেছিল তাতে ভারতবর্ষে একটি বিশেষ রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্ম হয়েছিল যা হলো দরবারি রাজনীতি। অর্থাৎ দেশের কোনও নাগরিককে সরকার থেকে যে কোনো সুবিধা পেতে গেলে তাকে তার এলাকার প্রভাবশালী নেতার দরবারে সশরীরে হাজির থেকে নতজানু হয়ে সেই সুবিধার জন্য আবেদন করতে হতো। এবং সেই সুবিধা পাবার ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির জাতিগত, ধর্মীয় তথা আঞ্চলিক পরিচয় অনেকাংশেই নির্ণায়ক ভূমিকা নিত। ফলে সরকারের সঙ্গে দর কষাকষিতে নিজের জায়গাটি পোক্ত করার জন্য ক্রমেই তাকে একটি ভোটব্যাঙ্কের শরিক হতে হতো। আর এই জাতিগত, ধর্মীয় বা আঞ্চলিক ভোটব্যাঙ্কের উপর দাঁড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কিছু পরিবার নিজেদের রাজনীতি করে চলতো।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার গঠনের পরপরই এই ব্যবস্থাকে সমূলে উৎপাটনের চেষ্টা হয়েছিল। এবং তা বহুলাংশেই সফলও হয়েছে। আজ দেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় যুক্ত করে তাদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি সুবধাি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, ফলে ধাক্কা খেয়েছে দরবারি রাজনীতি। আজ তাই আঞ্চলিক দলগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে চূড়ান্ত অসহযোগিতা শুরু করেছে এবং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে পুরোদস্তুর প্রকল্প চুরির পথ বেছে নিয়েছে।
বিগত পাঁচ বছরে ভারত যে জাতীয় অগ্রগতির নিরিখে এক নতুন শিখরে পৌঁছেছে শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরে ভারত নামক এই পুণ্যভূমি সামাজিক, আধ্যাত্মিক, ঐতিহ্য ও পরিবেশগত দিক থেকেও তার হৃতগৌরব অনেকটাই পুনুরুদ্ধার করতে পেরেছে। আজ তাই যেমন দেশ আর্থিক দিক থেকে বিশ্বে এগারো তম স্থান থেকে ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে, তেমন অন্য দিকে দেশের প্রতিটি নাগরিককে অন্ন এবং বাসস্থানের পাশাপাশি সুলভ শৌচালয়, দূষণমুক্ত জ্বালানি এবং সাশ্রয়যুক্ত বিদ্যুৎ পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভারতবর্ষের এই আর্থ-সামাজিক উন্ননয়নের শিখরে পৌঁছানো যে কোনও নাগরিক জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কোনও রকম মধ্য স্বত্বভোগী ছাড়া যেকোনো সরকারি সুবিধা নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী সরাসরি গ্রহণ করতে পারছে আর তাতেই ভোটব্যাঙ্ক নির্ভর রাজনৈতিক দলগুলি অশনি সঙ্কেত দেখছে, তাই তারা মহাজোট গঠন করেছে। কিন্তু আজকের ভারত আধুনিক ভারত, যুব সম্প্রদায়ের ভারত যারা, যে যুব সম্প্রদায় এই ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিকে ধূলিসাৎ করে ভারতবর্ষকে আরও উন্নতির শিখরে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। যুব সম্প্রদায় নরেন্দ্র মোদীর নতুন ভারতের সঙ্গে রয়েছে। তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির জন্য বিপুল জয় অপেক্ষা করে আছে এটা নিশ্চিত।
সোমনাথ গোস্বামী