আপনার অনুগামী এবং অনুপ্রাণিত ক্যাডার ছাড়া পৃথিবীর করো ১০০ দিনের কাজের বেশী আয় করার অধিকার নেই

হর্ষ গোয়েঙ্কা একবার টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে লিখেছিলেন মাড়োয়ারিরা টেকনোলজি ব্যবসায় সফল নয় l রামকৃষ্ণ মিশন অনেক আগে শিশুমঙ্গলের মত প্রতিষ্ঠান খুলেছে, কিন্তু সাঁইবাবা আশ্রমের মত চিকিৎসায় Centre of Excellence তৈরি করতে পারলেন না কেন? স্বাধীনতার পর প্রযুক্তিক্ষেত্রে ব্যবসায় এগিয়ে থেকেও (DCL, দাস্তুর বা স্টুপ, CES ), কলকাতা ১৯৯১ এর পর ধীরে ধীরে এই ক্ষেত্র থেকে সম্পূর্ণ আজ বাইরে l আর মমতা ব্যানার্জী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নতির অনেক চেষ্টা করেও, আজ ডিপ্লোমা ডাক্তারের জন্য তাঁকে কাঁদতে হচ্ছে কেন? চারটি আলাদা সমস্যা হলেও, কারণ এক l নিয়োগকর্তা হিসেবে চারজনের একই দর্শন l তারা সব ক্ষেত্রে খরচ করবেন, শুধু কর্মচারীকে প্রাপ্য বেতন দেবেন না l

মার্ক্স যতই সাম্যবাদের কথা বলুক, যোগ্য মানুষকে সঠিক বেতন দিতেই হবে l সফটওয়্যার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নব্বইএর দশকে হঠাৎ প্রচুর মাইনে বাড়ে কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় l কর্মচারীকে বেতন দিতে সব মালিকেরই কষ্ট হয় l তাই নারায়ণ মূর্তির মত লোকও একসময় বলেছিলেন, বছরে ২০০০০ পিএইচডি দরকার l উদ্দেশ্য একটাই l পিএইচডি হোল্ডারের বেতন ১০০ দিনের কাজের বেতনে নামিয়ে আনা l তবে দুঃখে ব্যবসা বন্ধ করেন নি মূর্তি l পেনশনভোগী সরকারি আধিকারিক বাড়ী বসে বছরের পর বছর পেনশন নেন, DA বৃদ্ধির দাবী করেন, কিন্তু কাজের লোক পুজোর পর মাইনে বাড়াতে বললে তাঁকে বিদায় করেন l DA নিয়ে পাড়ায় চিৎকার করা বহু মানুষ অতিমারীর সময় কাজের লোককে পয়সা দেননি l অবশ্য রাজস্থানের এবং দিল্লির এই প্রজন্মের মাড়োয়ারিরা কিন্তু কিছুটা হলেও মানসিকভাবে এগিয়ে l সেই জন্য কোটা বা FIITJEE বা DPS এ মাইনের হার কলকাতার স্কুলগুলোর থেকে ভাল l ওরা মানের উপর জোর দেয়, কলকাতায় লাভের উপর l

বিরোধী হিসেবে মমতা ব্যানার্জীর যতই সমালোচনা করি, একটা সত্য মানতে হবে যে, তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের উন্নতির চেষ্টা করেছিলেন l শিক্ষা, শিল্প, পরিকাঠামোর মত জলে ভাসিয়ে দেন নি এই ক্ষেত্রকে l কিন্তু গতকালের ‘ডিপ্লোমা’ মন্তব্যই তাঁর ব্যর্থতা তুলে ধরে l মমতা ব্যানার্জী ক্ষমতায় এসে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, প্রশাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনলেও, আনতে পারেন নি ভাল ডাক্তার l কারণ কম বেতন l আজকের DA হীন বেতনে গ্রামে গিয়ে কোন ডাক্তার কাজ করবে না l যারা গ্রামে যাচ্ছেনও, তারা অধিকাংশ সময় বেসরকারি নার্সিংহোম বা অসুধের দোকানে প্রাকটিস করেন l মমতা তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নিতে পারেন না, কারণ সেক্ষেত্রে যে কয় জন আছেন, তারাও চলে যাবেন l ডাক্তাররা ইঞ্জিনিয়ার নয় l তাঁদের সরকারি চাকরি গেলে তাঁদের কিছু আসে যায় না l গত কয়েক বছরে কেন্দ্র সরকারি চাকরি থেকেও বহু ডাক্তার VRS নিয়েছেন l কিন্তু ডাক্তার প্রচুর আছেও l তাই, ডিপ্লোমা ডাক্তারের কথা না ভেবে উনি যদি ডাক্তারদের গ্রামে পাঠাতে চান, ওঁনাকে কিছু ব্যাবস্থা নিতে হবে l

এক, ডাক্তারদের আলাদা পে কমিশন করতে হবে এবং IIT/AIIMS এর শিক্ষকদের সমান স্কেল দিতে হবে l আপনার রাজ্যে একজন WBCS আধিকারিক ডাক্তারের চেয়ে বেশী বেতন পায় l এমন হাস্যকর কাজ একমাত্র টেডমিলে তৈরি বাজেটেই সম্ভব l নতুবা ধরে নিতে হবে স্বাস্থ্য আর আপনার অগ্রাধিকারে নেই l

দুই, কাছাকাছি প্রতিটি ছোট শহরে দিকে DPS বা গার্ডেন হাই বা নারায়ণের এর মত স্কুল নিয়ে যেতে হবে, যেখানে একজন ডাক্তার তাঁর সন্তানকে পাঠানোর ভরসা পাবেন সন্তানের NEET বা JEE পরীক্ষার জন্য l ডাক্তার তাঁর ছেলেমেয়েদের শুধু স্পোকেন ইংলিশ শেখাতে স্কুলে পাঠাবে না l দরকারে বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি স্কুল লিজে দিতে হবে l বাচ্চাদের কলকাতায় রেখে কোন ডাক্তার গ্রামে সেবা করবে না এই যুগে l

তিন, ইনকাম ট্যাক্স বা পাসপোর্ট অফিসের মত কোন বড় সফটওয়্যার কোম্পানির হতে প্রশাসন তুলে দিতে হবে, যাতে মানুষের হয়রানি কমে l

চার, অন্যান্য টেকনিশান যথেষ্ট পরিমানে নিয়োগ করতে হবে l

পাঁচ, ১০০% বিনা পয়সায় চিকিৎসা করে দিয়ে, কিছু টাকা নেয়া যেতে পারে APL দের থেকে l স্বাস্থ্য সাথী তো আছেই? আয়ুষ্মানভারত আনছেন না কেন? বীমা কোম্পানির টাকা স্বাস্থ্য দপ্তরে এলে তো আপনার স্বাস্থ্য বাজেট অনেক কমে যাবে? সেই পয়সায় প্রতিটি হাসপাতাল এক বছরে বাতানুকূল হয়ে যাবে l

ছয়, অপারেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডাক্তারদের কিছু কমিশন দিতে হবে মেডিক্লেম থেকে l এটা পেলে কেউ বেসরকারি নার্সিংহোমে ক্ষেপ খেলবে না l

সাত, সরকার যদি বেসরকারি মেডিক্লাইমের টাকা না নিতে পারে কর্পোরেশন খুলুন l

ডিপ্লোমা ডাক্তারের তাল ছাড়ুন l প্রচুর ডাক্তার আছে l সঠিক বেতন দিয়ে নিয়োগ করুন l মাথা থেকে এটা বের করুন যে আপনার অনুগামী এবং অনুপ্রাণিত ক্যাডার ছাড়া পৃথিবীর করো ১০০ দিনের কাজের বেশী আয় করার অধিকার নেই l টিভিতে দেখলাম, আপনি আপনার আধিকারিককে যখন প্রশ্ন করলেন, ডিপ্লোমা ডাক্তার চালু করা যায় নাকি, উনি বললেন খোঁজ করে দেখবেন সম্ভব নাকি l এর মানে আপনি ভালোই বোঝেন ম্যাডাম l সেটা হল ‘অসম্ভব’ l

সুদীপ্ত গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.