যশবন্ত বাসুদেব কেলকরজী ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ’ –এর কার্যপ্রণালীকে সশক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান। ওঁর জন্ম ১৯২৫ সালের ২৫শে এপ্রিল বর্তমান মহারাষ্ট্রের পন্ঢরপুর নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শিক্ষা বিভাগে চাকরি করতেন ও সংরক্ষণপন্থী ছিলেন, কিন্তু মাতা জানকীদেবী জাতিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে সমানতার কথা ভাবতেন। কেলকরজীর ওপর তাঁর মায়ের প্রভাব বেশি ছিল। যশবন্তজী ছোটবেলা থেকেই ভালো ছাত্র ছিলেন। তিনি সর্বদাই প্রথম শ্রেণী পেতেন, মারাঠি ও ইংরেজী সাহিত্যের প্রতি তাঁর বিশেষ আকর্ষণ ও ব্যুৎপত্তি ছিল। পুনেতে কলেজে পড়বার সময় তিনিনি সঙ্ঘের স্বয়ংসেবক হিসেবে শাখায় যাওয়া শুরু করেন।
১৯৪২ সালে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ব্যর্থতার পর তিনি বিপ্লবী আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হন। এই সময়কালে উনি ইতালিয়ান বিপ্লবী জোসেফ মাৎজিনির জীবনী অধ্যয়ন করেন ও ডেম্ব্রিনের জীবনী মারাঠিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। ঐ সময়েই তিনি বোমা বানানোর প্রশিক্ষণও লাভ করেন।
১৯৪৪-৪৫ সালে সঙ্ঘ শিক্ষাবর্গ সমাপ্ত করে তিনি প্রচারক হয়ে নাসিকে যান। ১৯৫২ সালে সোলাপুর জেলার প্রচারকের দায়িত্ব পালন করেন, তারপর শিক্ষা সম্পূর্ণ করবার উদ্দেশ্যে পুনেয় ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর বিভাগে ভর্তি হন, এবং ইংরেজী সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি সংগঠন ও শিক্ষালাভ দুই ক্ষেত্রেই উৎকর্ষতার পরিচয় দেন। স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মুম্বাইয়ের কে.সি কলেজে অধ্যাপক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন ও পরের বছর তিনি ন্যাশনাল কলেজে যান ও সেখানেই ১৯৮৫ সালে অবসর নেওয়ার আগে অবধি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৮ সালে সহকর্মী ইংরেজীর অধ্যাপক শশীকলা দেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের তিন পুত্রসন্তান রয়েছে।
১৯৪৭-৪৮ সালে সঙ্ঘ নিষিদ্ধ থাকাকালীন অবস্থায় এক মঞ্চ হিসেবে বিদ্যার্থী পরিষদের জন্ম হয়েছিল, যা ১৯৪৯-এ সংগঠন হিসেবে নথিভুক্ত হয়। ১৯৫৮ সাল অবধি বিদ্যার্থী পরিষদের কাজ ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সীমিত ছিল, কিন্তু যশবন্তজীকে দায়িত্ব দেওয়ার পর সংগঠন এক নতুন দিশা ও উৎসাহ লাভ করে।
পরিষদের বিচার ও কার্যপ্রণালীকে উনি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন ও সংগঠনের রাষ্ট্রীয় অধিবেশনও শুরু করা হয়। দীর্ঘদিন পরিষদের কার্যালয় তাঁর বাড়িতেই ছিল, এবং অধ্যাপনার পর সমস্ত সময় তিনি সংগঠনের জন্য উৎসর্গ করতেন। ১৯৬৭ সালে তিনি সংগঠনের রাষ্ট্রীয় অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান ও এক বছর পরেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করেন। তিনি সবার অলক্ষ্যে কাজ করবার প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলেন, বস্তুতঃ পরিষদের দ্বিতীয় তথা তৃতীয় স্তরের নেতৃত্বের নির্মাণ ওঁর হাতেই সম্পন্ন হয়। ১৯৭৫-এ জরুরী অবস্থার সময় সঙ্ঘ ও সঙ্ঘের অন্যান্য সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করা হলেও বিদ্যার্থী পরিষদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি না হওয়ায় গণতন্ত্রের হত্যার বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ করার জন্য তাঁকে মিসা আইনে গ্রেফতার করা হয়।
অক্লান্ত ও পরিশ্রমী যশবন্তজীর জন্যেই নাসিক রোড জেলে এক শিবির গঠন হয়েছিল। বিধিমত শারীরিক ও বৌদ্ধিক কার্যক্রম চলতে থাকে, এমনকি কেবলমাত্র ড্রাম নিয়ে পথসঞ্চালনেরও ব্যবস্থাপনা করা হয়। জেলে অন্যমতাবলম্বীদের সঙ্গে তিনি সুমধুর সম্পর্ক তৈরী করেন। জরুরী অবস্থার পর যশবন্তজী তাঁর সমস্ত মনোযোগ বিদ্যার্থী পরিষদে নিয়োগ করেন। ১৯৮৪ সালে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর ষাটতম বর্ষপূর্তি সারা দেশে পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানগুলিতে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, বিদ্যার্থী পরিষদ ও হিন্দুত্বের বিষয়ে বক্তৃতা করেন।
এর মধ্যেই তিনি প্লীহা ও উদরী রোগে আক্রান্ত হন, চিকিৎসা সত্ত্বেও শারীরিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকে। ১৯৮৮ সালের ৬ই ডিসেম্বর তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
2019-04-25