মহাঋষি সুশ্রুত প্রাচীন ভারতে এবং মানব ইতিহাসের প্রথম সার্জন বা শল্যচিকিৎসক। সুশ্রুত আর আত্রেয় জন্মেছিলেন একই সময়ে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে।
∆∆ ঋষি বিশ্বামিত্রের পুত্র ছিলেন সুশ্রুত। অনেকে বলেন ধন্বন্তরীর (ধন্বন্তরী ছিলেন কাশী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) কাছেই সুশ্রুতের শিক্ষা। ছোটবেলা থেকেই রোগ নিরাময়ের বিষয়ে তাঁর খুব আগ্রহ ছিল। সেখানকার পাঠ শেষ করে সুশ্রুত নিজেও ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
∆∆ সুশ্রুত বিশ্বাস করতেন, একজন ভালো চিকিৎসক হতে হলে অবশ্যই একজন ছাত্রের মেডিসিন আর সার্জারি উভয় বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। তা না হলে সে হয়ে যাবে এমন একটি পাখির মতো যার কেবল একটি ডানা। তার ছাত্রদেরকে সৌশ্রুত বলা হতো।
∆∆ মহাঋষি সুশ্রুত ‘সুশ্রুত সংহিতা’ একটি সংস্কৃত বই লেখেন যা সার্জারির আদি পুস্তক। বহু দেশের নানা ভাষায় বইটি অনুবাদ করা হয়। প্রথম অনুবাদ হয় আরবি ভাষায়। সময়টা ছিল আট শতক। বইটির নাম হয়েছিল ‘কিতাব-ই-সুসরুদ’। উনিশ শতকে এই বইটি লাতিন, জার্মান, ইংরেজি ও আরও নানা ইউরোপিয় ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। ১৯০৭ এর দিকে প্রথমবার কবিরাজ কুঞ্জলাল ভীষগরত্ন তিন খণ্ডে বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেন।
∆∆ এই বইটিতে ১৮৪ টি অধ্যায় আছে, যেখানে ১১২০ টি রোগের বর্ণনা,৭০০ ভেষজ উদ্ভিদের কথা,৬৪ টি রাসায়নিক মিশ্রনের বর্ণনা যা বিভিন্ন খনিজ থেকে তৈরি হয় এবং আরও ৫৭ টি মিশ্রন যা প্রানিজ উপাদান থেকে প্রস্তুত করা হত। মূল লেখাটি ছিল, তালপাতার ওপর সংস্কৃত ভাষায় এ পাণ্ডুলিপিটি। ১২০ রকমের সার্জারির যন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে, তার ৫৬টির বিশদ বর্ণনা। আধুনিক বিজ্ঞান এ সব পদ্ধতির পুনরাবিষ্কার করেছিল উনিশ শতকে। প্রাচীন এ পাণ্ডুলিপির ঐতিহাসিক মূল্য ও গুরুত্ব বিবেচনায় এনে **** ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
∆∆ অস্ত্রোপচার করার জন্য ১২১টি বিভিন্ন যন্ত্রপাতির উল্লেখ রয়েছে এই বইয়ে। যন্ত্রগুলিকে সুশ্রুত দুভাগে ভাগ করেছিলেন। যেগুলো ভোঁতা, নাম দিলেন যন্ত্র। আর যেগুলো সরু ও ধারালো তার নাম দিলেন শস্ত্র। যন্ত্র ছিল ১০১ রকম। শস্ত্র ছিল বাকি ২০ রকম। কামারদের কাছ থেকে কী করে অতি সূক্ষ সেসব যন্ত্র বানিয়ে নিতে হবে, তারও উপদেশ রয়েছে তার বইয়ে।
∆∆ সুশ্রুতের দেওয়া যন্ত্রগুলোর নাম হল: মণ্ডলাগ্র ছুরিকা, করপত্র ব্রীহিমুখ, বৃদ্ধিপত্র, নখ
সংগৃহিত।