উন্নাওয়ের ধর্ষিতা দগ্ধ তরুণীর মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার গভীর রাতে। তারপর থেকেই দিল্লির সফদরজং হাসপাতালের বাইরে চলছে বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ চলাকালীন এক যুবতী তাঁর ছ’বছর বয়সী মেয়ের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। এই ঘটনায় যুবতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি শনিবার সকালের। বিক্ষোভ চলাকালীনই সফদরজং হাসপাতালের বাইরে এক যুবতী তাঁর মেয়ের গায়ে পেট্রল ঢেলে দেন। এই ঘটনায় চমকে যান সকলে। মহিলা চিৎকার করে বলেন, “আমার মেয়েকেও কোনওদিন পুড়িয়ে মেরে দেবে। তাই আমিই আগে ওকে মেরে ফেলব।” সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে ওই যুবতীকে ধরে ফেলেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, যুবতীকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁর ছ’বছরের মেয়েকে সফদরজং হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে সে। মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার রাত ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ সফদরজং হাসপাতালে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মারা যান উন্নাওয়ের নির্যাতিতা। এই ঘটনার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। সবাই দাবি করছেন, হায়দরাবাদের ঘটনার মতোই গুলি করে মারা উচিত ধর্ষকদের। এই নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল চলছে।
শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। শনিবারই উন্নাও গিয়েছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢড়া। অন্যদিকে বিধান ভবনের বাইরে ধর্নায় বসার কর্মসূচি নিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব।
এদিন অখিলেশ বলেন, “রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে, আর রাজ্যের সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।” টুইটে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। তিনি বলেছেন, “হায়দরাবাদের ঘটনার পরে উন্নাওয়ের ঘটনা ঘটেছে। কেন নির্যাতিতা তরুণীকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারল না প্রশাসন?” তিনি উন্নাওয়ের অন্য ধর্ষিতার উদাহরণ টেনেছেন। যে মামলায় মূল অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেনগার। গত জুলাই মাসে ওই নির্যাতিতা যখন উকিলের বাড়িতে যাচ্ছিলেন, ট্রাক দিয়ে পিষে দেওয়ার চেষ্টা হয় তাঁদের গাড়িকে। সনিয়া-কন্যা ওই ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেছেন, “একই জেলায় কয়েক মাসে যখন এই ঘটনা ঘটল, তখন কেন প্রশাসন সতর্ক হল না?”
উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে সারা দেশেই ক্ষোভের আগুন ছড়িয়েছিল। দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে শুক্রবার বেশি রাতে ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যু সেই ক্ষোভকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই ঘটনার পর মুখ না খুললেও শনিবার সকালে তড়িঘড়ি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি বলেন, “এর থেকে নৃশংস ঘটনা আর হতে পারে না। এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে অভিযুক্তদের বিচার হবে।” যোগী এও বলেন, অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে। উন্নাওয়ের মতো ঘটনা যাতে উত্তরপ্রদেশে আর না ঘটতে পারে সেজন্য পুলিশ ও প্রশাসন সবরকম চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে, শনিবারই পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের বৈঠকে ডেকেছেন তিনি।