তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে এত দিন পরিচিতি ছিল তাঁদের। সেই সঙ্গে ছিল অসম্মান ও অবহেলার পাহাড়ও। কিন্তু সম্প্রতি, তাঁদের অস্তিত্বকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই স্বীকৃতি বহু দিনের লড়াইয়ের পালে হাওয়া জুগিয়েছে বলেই মনে করছেন এলজিবিটি সদস্যরা। সেই হাওয়াতেই এবার এগিয়ে এসেছেন ওড়িশার তিন রূপান্তরকামী মহিলা।
তাঁদেরই এক জন হলেন মীরা পারিদা। মহিলা জনতা দলের সহ-সভাপতি মীরাই প্রথম রূপান্তরকামী, যিনি কোনও রাজনৈতিক দলের আধিকারিকের পদে রয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে ওড়িশার খুরদা জেলায় বেগুনিয়া কেন্দ্র থেকে লড়বেন তিনি।
অল ওড়িশা থার্ড জেন্ডার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মীরার কথায়, “আমাদের নিয়ে প্রশ্নটা কোনও দিনই যোগ্যতা বা দক্ষতার ছিল না। প্রশ্নটা ছিল, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার। আমাদের সুযোগই দেওয়া হয়নি কোনও কিছুতে নিজেকে প্রমাণ করার। আমাদের মানুষ হিসেবেই মেনে নেওয়া হয়নি! সেই জায়গা থেকে, সুপ্রিম কোর্টের স্বীকৃতিকে অবলম্বন করে, আমরা রাজনীতিতে পা রেখেছি।”
মীরা একা নন। তাঁর সঙ্গে আছেন কাজল নায়েক। ২৭ বছরের এই রূপান্তরকামী তরুণী ওড়িশার জজপুর জেলার কোরেই কেন্দ্র থেকে লড়ছেন বহুজন সমাজবাদী পার্টির হয়ে। ভুবনেশ্বরের একটি আসন থেকে আবার বিজেপির হয়ে লড়ছেন মেনকা কিন্নর, আর এক রূপান্তরকামী তরুণী। মেনকা বলছেন, “কথাতেই আছে, নারীশক্তি ছাড়া সমাজের অগ্রগতি কার্যত অসম্ভব। আমি বলতে চাই, শুধু নারী নয়। আমরা, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিরাও কোনও অংশে কম নই।”
২০১১ সালের শেষ আদমসুমারি অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সংখ্যা পাঁচ লক্ষ। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, তাঁদের মধ্যে ভোটের খাতায় এখনও পর্যন্ত নাম রয়েছে মাত্র ৩৯ হাজার জনের। সেই জায়গা থেকে, একই রাজ্যের তিন তিনটি কেন্দ্র থেকে তিন জন রূপান্তরকামীর প্রার্থী হওয়ার ঘটনাকে বাহবা জানাচ্ছে নাগরিক সমাজ।
আজ থেকে চার বছর আগে, ২০১৫ সালে রাইগড়ের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রথম রূপান্তরকামী, মধু কিন্নর। এর পরেও রাজনীতিতে যোগ দিয়ে শিরোনামে এসেছেন অপ্সরা রেড্ডি, বীনা সেন্দ্রা, স্নেহা কালে-দের মতো রূপীন্তরকামীরা। নির্বাচনেও প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। গত বছর শবনম মউসি নামের এক রূপান্তরকামী তরুণী ইতিহাস তৈরি করেছিলেন বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে।
২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট স্বীকৃতি দিয়েছিল তৃতীয় লিঙ্গের। কিন্তু আইন করে সমাজের বদল করা কখনওই সহজ হয়নি। আইন যতই স্বীকৃতি দিক, ওঁদের সমাজ কখনওই স্বীকৃতি দেয়নি খোলা মনে। রাজনীতির প্রতিনিধি হিসেবে তো নয়ই, আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের মতোও ন্যূনতম সম্মান পাননি ওঁরা। বরং শুধুমাত্র লিঙ্গের কারণে হিংসারও শিকার হয়েছেন তাঁরা। কয়েক মাস আগেই হায়দরাবাদের একটি কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত এক জন রূপান্তরকামী প্রচার চালাতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান।
এই আবহে অন্য পথ দেখাচ্ছে ওড়িশা। একই রাজ্য থেকে তিন-তিন জন রূপান্তরকামীর ভোটের লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।