বিপজ্জনক নয়, বরং ভারত এখন বাঘেদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত আশ্রয়, আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস উপলক্ষে এমন কথাই জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, ২০১৮ সালের বাঘ সুমারির হিসেব অনুসারে ২০১৪ সালে যেখানে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৪০০-তে, সেখানে ২০১৮ সালে এসে সেই সংখ্যা ৩০০০ ছুঁয়েছে।
বাঘের সংখ্যাবৃদ্ধির প্রমাণ আগেই মিলেছিল, রিপোর্ট দিয়েছিলেন সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা। জানা গিয়েছিল, গত কয়েকবছরে বাঘের দেখা মিলেছে বহুবার। এমনকি বাঘের আক্রমণে প্রাণহানির ঘটনাও বেড়েছে। এর আগে শিকার ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল হাতে গোনা। বাঘ সুমারির বর্তমান রিপোর্ট দেখে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “বাঘ সুমারির বর্তমান সমীক্ষা পশুপ্রেমীদের আনন্দ দেবে। দেশের জন্যও খুবই আনন্দের খবর।” সলমন খানের ‘এক থা টাইগার’ ছবির প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, “গল্পটা শুরু হযেছিল ‘এক থা টাইগার’ দিয়ে, এখন আর অতীত নয়, বরং আমাদের দেশে ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়।’”
জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের (ন্যাশনাল টাইগার কনজ়ারভেশন অথরিটি বা এনটিসিএ) সমীক্ষা বলছে, রাজ্যে রাজ্যে ব্যাঘ্র প্রকল্পগুলি এখন অনেক ফলপ্রসূ। ২০১১ সালে মানস জাতীয় উদ্যান এবং ভুটানের ‘রয়্যাল মানস জাতীয় উদ্যানে’ প্রথম বার ক্যামেরায় বাঘের ছবি তোলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সে বার ১৪টি বাঘের ছবি মেলে। ডব্লুডব্লুএফ (ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড) এবং ডব্লুআইআই (ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়া) ২০১৪ সালের সুমারির পর জানিয়েছিল সুন্দরবনে অন্তত ১০১টি বাঘ রয়েছে। যেখানে ২০১৪ সালের আগে বন দফতরের পরিসংখ্যান দাবি করেছিল সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ২৭৪টি।
২০১৮ সালে প্রথম ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনে বাঘ গণনা শুরু হয়। সুন্দরবনে বাঘ গণনা হত বাঘের পায়ের ছাপ দেখে, গলায় রেডিও কলার লাগিয়ে অথবা জঙ্গলে ক্যামেরা ট্রাকিং করে। পরে সেই পদ্ধতিতে বদল আনা হয়। শুধুমাত্র বাঘের পায়ের ছাপ নয়, নৌকোয় করে বিভিন্ন নদী, খাঁড়ি, জঙ্গলে বাঘের খাদ্য তৃণভোজী প্রাণী হরিণ, বুনো শূয়োর-সহ বিভিন্ন জন্তুর সমীক্ষা করা শুরু হয়। বাঘের মল, মূত্র, গাছের গায়ে আঁচড়-সহ অন্যান্য চিহ্ন সংগ্রহ করা হয়। তা ছাড়া, ইনফ্রারেড রশ্মিচালিত স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরার মাধ্যমেও চলে নজরদারি। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫-১৬ সালে আমাদের দেশে প্রথম বাঘ গণনা হয়। তখন সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘের হদিস মিলেছিল। এ বার সেই সংখ্যাটা অনেক বেশি।
ডব্লুডব্লুআইয়ের বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছিলেন, দেশ জুড়ে সুমারি শেষে সংখ্যাটা ছিল সাকুল্যে ১,৪১১। সেখানে ২০১৮ সালে এসে সংখ্যাটা প্রায় হাজার তিনেক ছুঁতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “ন’বছর আগেই সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। সেই লক্ষ্যই ছোঁয়ার পথে। বন্যপ্রাণীদের জন্য অরণ্যের পরিবেশ এখন অনেক সুরক্ষিত ও নিরাপদ। “