মুকুল ঝরেছে, রাজীব নামক পদ্মটিও ঝরতি-পরতির দিকে; দিকে দিকে ‘বারোমাসি’-র বোল ঝরছে ঘাসজমিতে। এই মুহূর্তে কার্যকর ছত্রাকনাশক নেই। বাঙালির মেধা উন্নত হলেও ‘স্মৃতিশক্তি’ বড়ই দুর্বল। তাই উদ্যানরক্ষার ওষুধ আগাম প্রয়োগ করতে ভুলে যান। অনেক বাগানে প্রথম কয়ক বছর মুকুল ভেঙে দেওয়া হয়, যাতে পরে গাছ ঝাকড়িয়ে ওঠে। অনেকে আবার প্রথম মুকুলেই দেদার ফসল নিতে চান। তাই কখনও হয়? সবুরে মেওয়া ফলানো যে সব রাজনীতিবিদের কম্ম নয়, ২০২৪ অথবা ২০২৬-এ যে তাদের আবারও পচাসব্জি কিনতে দেখা যাবে না, তা কে হলফ করে বলতে পারেন! কারণ বাঙালির আত্মবিস্মৃতি রোগ সকলেরই জানা
বাংলায় ‘বুদ্ধিজীবী’ যাদের বলা হয়, তারা আদৌও বুদ্ধিবিশারদ কিনা; রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আদৌ কাজে লাগে কিনা, সে নিয়ে কোনো তথ্যনিষ্ঠ গবেষণা হয়নি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শাসকদলের কোনো অধ্যাপক-গবেষক সেই গবেষণায় হাত দিলে নিরপেক্ষতা কেঁচিয়ে দেবেন, ফলে গবেষণালব্ধ ফল পাওয়া মুস্কিল।
চারপাশে এখন জোর জল্পনা — যাবার বেলা ‘ঝরাপাতা ঝড়কে ডেকে’ কাদের নিয়ে যাবেন আর কাদের ‘রাডার’ করে রেখে যাবেন, তার দিকে। বাংলার রাজনীতিতে এখন চূড়ান্ত অবিশ্বাসের বাতাবরণ। ‘অবিশ্বাস’ এতই ছোঁয়াছে যে, আজ বিরোধীশিবির রোগাক্রান্ত হলেও, আগামী দিন শাসকদলের বাঁচার সম্ভাবনাও কিন্তু নেই। এরই মাঝে নেপোয় দই মেরে ‘পশ্চিম বাংলাদেশ’ -এর প্রোপাগাণ্ডা এগিয়ে নিয়ে যাবে। সবচাইতে যেটা খারাপ প্রভাব পড়বে, বাঙালি জাতি আগামী দিনে কেবল ষড়যন্ত্রকারী, অবিশ্বাসের পাত্র হয়েই পরিচিত হবেন। পশ্চিমবঙ্গ যদি ‘পশ্চিম বাংলাদেশ’ হয়ে যায় কোনোদিন এবং বাঙালিকে অন্য রাজ্যে পালিয়ে বাঁচতে হয়, সেখানকার বাড়িতে পরিচারকের কাজেও কেউ নিয়োগ করবে না বাঙালিকে, বিশ্বাসও করবে না তাদের কোনোদিন।
বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে পারে বুঝে কয়েক মাস আগে মৌপিয়া হাওয়াই-মোরগ, বুদ্ধিজীবী ঘাঁটি গাড়তে শুরু করেছিল বিজেপিতে। আগে তারা চেটেপুটে প্রসাদ পেয়েছিল তৃণমূলের শাসকদলের, তারও আগে সিপিএম-এর। তৃণমূল থেকে এরাই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন, অধ্যাপক-বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশ। তারা আরএসএস-কে চিনতেন না, রাষ্ট্রবাদী ভাবনাও ছিল বলে মনে হয় না। কেবল লাভলোকসানের অঙ্ক করে বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চেয়েছিলেন। খোঁজাখুঁজির করছিলেন কোন্ বুদ্ধিজীবীর মাধ্যমে যোগদান সহজতর হবে। কোন্ পদ-পদবী পাওয়া যাবে। আগে থেকে লাইন রেখে গিয়েছিলেন কিছু বুদ্ধিমান মানুষ। তাদের মাধ্যমেই নতুন দলের গুডবুকে আসাটা তাদের কাছে শ্রেয় বলে মনে হয়েছিল। অনেকে ভেতরে ভেতরে মিসড্-কল করে মেম্বারশিপ নিয়ে ফেলেছিলেন; অথচ শাসকদলের ছত্রছায়ায় ঘোরাফেরা করেছিলেন। এরাই এখন ফেরার সুযোগ খুঁজছেন। ভোটে ‘খেলা’ হয়েছে। দলু বদলুরা দল বদলিয়ে আবারও গিরগিটি হবেন। তারা শাসকের আবারও ভিক্ষা ও অনুকম্পা গ্রহণ করবেন। কে কত দক্ষভাবে বিজেপিতে এসে খেলে গেছেন, তা বোঝাবেন, হিসেব দেবেন এবং দলে পুনরায় পদ ও পদোন্নতি নামক পারিতোষিক লাভ করবেন। দিকে দিকে শুরু হয়ে গেছে, তার তৎপরতা। যারা দলের অসময়ে চলে যান, সুসময়ে ফেরেন — দল তাদের কতটা চোখে রাখে সেটাই দেখার। শাসকদলের গুডবুকে থাকার জন্য ফেলে আসা কর্মীদের সাড়ে সর্বনাশ করে ছাড়তে হবে, বিনাশ করে দেখাতে হবে — এই বীভৎস তীক্ষ্ণতার দিকে তাকিয়ে আছে বঙ্গসমাজ।