দেশরক্ষার কাজে সীমান্তে পোস্টেড ছিলেন স্বামী। আরও অনেক উৎকণ্ঠিত স্ত্রীয়ের মতোই উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায় খবরে চোখ রাখতেন স্ত্রী। অনাকাঙ্ক্ষিত খবরটা এসেছিল হঠাৎই। জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলায় এক জঙ্গিকে খতম ও আরেক জঙ্গিকে জখম করে শহিদ হয়েছিলেন তাঁর স্বামী। তার চার বছর পরে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে স্বামীর কর্তব্য পালনের অংশ হয়ে উঠলেন সেই স্ত্রী।
তিনি উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনের বাসিন্দা সঙ্গীতা মাল। আজ থেকে প্রায় চার বছর আগে, ২০১৫ সালে ২ সেপ্টেম্বর যেন জীবনটাই থমকে গিয়েছিল গোর্খা রাইফেলস-এর রাইফেল ম্যান শিশির মালের স্ত্রী সঙ্গীতার।
আচমকা স্বামীর শহিদ হওয়ার খবর আসায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শরীরের ভিতরে তখন বাড়ছে তাঁর সন্তান। এত বড় আঘাতের পরে সেই আশাও শেষ হয়ে যায়। বিপর্যয়ের কয়েক দিনের মধ্যে গর্ভে থাকা সন্তানও নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, চরম মানসিক ধাক্কার মুখে পড়েছেন তিনি। তার ফলেই এই গর্ভপাত।
ফলে সব দিক থেকে মানসিক যন্ত্রণায় ভেঙেচুরে গিয়েছিল সঙ্গীতার জীবন। ২০১৩ সালে শিশিরের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে শিক্ষিকার কাজ করতেন তিনি। কিন্তু শিশিরের মৃত্যুর কয়েক মাসের আগেই মারা যান শিশিরের বাবা, অর্থাৎ সঙ্গীতার শ্বশুর।
ফলে আরও বড় বিপর্যয়ের শিকার হয়েছিলেন শিশিরের মা। এক দিকে স্বামীর অকাল প্রয়াণ, অন্য দিকে ছেলের শহিদ হওয়া। সেই সঙ্গেই তাঁর ছেলের অনাগত সন্তানের মৃত্যু। চোখের নিমেষে সব কিছু যেন ছারখার হয়ে গিয়েছিল শিশিরের মায়ের জীবন থেকে। সেই সময়ে, শত কষ্ট সামলেও, একা হয়ে যাওয়া শাশুড়ির পাশে দাঁড়াবেন বলে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন সঙ্গীতা। পরে অবশ্য ব্যাঙ্কে চাকরির জন্য পড়াশেনা শুরু করেন।
কিন্তু ২০১৬ সালে রানিখেতে ভারতীয় সেনার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে শিশিরের হয়ে মরণোত্তর সেনা মেডেল নেওয়ার সময়েই বদলে যায় সঙ্গীতার মন। তিনি জানান, সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চান তিনি। শিশিরের সতীর্থরাও সেনাতে যোগ দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেন তাঁকে।
এর পরেই সেনায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সঙ্গীতা। শুরু করেন পড়াশোনা, প্রস্তুতি। দাঁতে দাঁত চেপে শুরু হয় লড়াই। এক দিকে সংসারকে দাঁড় কারনোর লড়াই, অন্য দিকে সেনাবাহিনীতে নিজেকে যুক্ত করার লড়াই। সততা আর পরিশ্রম একজোট হলে সহজে হার আসে না। হারেননি সঙ্গীতাও।
তিন বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমের পর সাফল্য আসে শর্ট সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায়। এর পরে গত ৯ মার্চ চেন্নাইয়ের অফিসার ট্রেনিং অ্যাকাডেমি ৪৯ মাসের ট্রেনিং শেষে সরাসরি লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দিলেন সংগীতা।
শিশিরের ভাই সুশান্ত মাল বলেন, “অনেক কষ্ট সহ্য করেছে আমাদের পরিবার। কিন্তু এখন, এটা আমাদের কাছে খুবই গর্বের বিষয় যে বৌদি এক জন অফিসার হিসেবে ভারতীয় সেনায় যোগ দিয়েছেন। আমার বাবা বা দাদা সেনাতে কাজ করলেও, পরিবার থেকে লেফটেন্যান্ট পদে এই প্রথম কেউ যোগ দিল।”
সঙ্গীতা বাড়ি ফিরলে তাঁকে মহাসমারোহে অভর্থ্যনা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে দেরাদুনের বাড়িতে।