স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি প্রজাতন্ত্র দিবসেও আমাদের আমরা আমাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি। তবে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন আমরা আদৌ কি পতাকা উত্তোলন করি ? উভয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে কারণ, স্বাধীনতা দিবসের দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা ‘উত্তোলন’ করেন এবং প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ভারতের রাষ্ট্রপতি এটি ‘উত্তোলন’ করেন। এটা হয়তো স্কুলের সব থেকে ছোট্ট শিশুটিও জানে। কিন্তু আসলে আমরা কি জানি না ?
১৫ আগস্ট, ২০২২-এ, আমরা আমাদের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করলাম। যার থিম ছিল ‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসব’। স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রতি বছরের মতো এবছরও আনুষ্ঠানিক উদযাপনের মধ্যে দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন দিল্লির লাল কেল্লায় আমাদের জাতীয় পতাকা ” উত্তোলন” করেছেন৷ কিন্তু, লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের লাইভ সম্প্রচারের সাক্ষীও আমরা হয়েছি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় পতাকা – তেরঙ্গা সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমত, প্রতিটি ভারতীয়ের নিকট স্বাধীনতা দিবস এবং প্রজাতন্ত্র দিবস দুটি মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ দিন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে আমরা যেদিন স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনি , সেইদিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে উদযাপন করি। প্রজাতন্ত্র দিবসটি কার্যকর হয় সংবিধানকে স্মরণ করে। আপাতদৃষ্টিতে, এই দুটি অনুষ্ঠানে সর্বত্র জাতীয় পতাকা দেখা যায়।
কিন্তু , আপনি কি জানেন যে ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে ভারতীয় পতাকা ‘ উত্তোলন ‘ করা হয় এবং ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে উন্মোচন করা হয় ? উন্মোচন এবং উত্তোলনের ক্ষেত্রে পার্থক্য কি?
উত্তোলন এবং উন্মোচনের মধ্যে একটি পার্থক্য আছে এবং সেটি হল পতাকার অবস্থান। স্বাধীনতা দিবসে, আমাদের জাতীয় পতাকাটি নীচে বেঁধে খুঁটির উপরে উত্তোলন করা হয়। এটি একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে ভারতের উত্থানকে চিহ্নিত করে থাকে, যার অর্থ স্বাধীনতা সংগ্রামের অবসান এবং ব্রিটিশ শাসনের অবসান। প্রজাতন্ত্র দিবসে, পতাকাটি পতাকার খুঁটির ডগায় বাঁধা হয় এবং তারপরে তা উন্মোচন করা হয় , যার অর্থ হল যে , ভারত ইতিমধ্যেই স্বাধীন। ২৬ শে জানুয়ারী, ১৯৫০ তারিখে, ভারত নিজেকে একটি সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক এবং প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করে। সুতরাং, শীর্ষে পতাকার অবস্থান তার ইঙ্গিত দেয়।
প্রধানমন্ত্রী, সরকারের প্রধান হিসাবে, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং রাষ্ট্রপতি, সাংবিধানিক প্রধান অর্থাৎ ভারতের প্রথম নাগরিক হিসাবে, জাতীয় পতাকা উন্মোচন করেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারির পূর্বে প্রধানমন্ত্রীই রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। তাই পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুকে এই কার্যটি সম্পাদন করতে হত।
কিন্তু, ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি, ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ যেদিন সংবিধান কার্যকর হয়েছিল সেদিনই কার্যভার গ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৫০ সালে প্রথমবার জাতীয় পতাকা উন্মোচন করেছিলেন।তখন উত্তোলন লাল কেল্লায় হত এবং রাজপথে উন্মোচন করা হত। যদিও দুটি অনুষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য সামান্য, তবে এর একটি গভীর অর্থ রয়েছে যা প্রত্যেক ভারতীয়ের অবগত হওয়া উচিত।
© ও অনুবাদ : দুর্গেশনন্দিনী