বৃথা কেন আজ শিরদাঁড়ার খোঁজ ? রিটায়ারমেন্টের দিনেই বা কেন ! কোন ভাবনার শত্রুকে বধের লক্ষে ?

মিটেও মিটছে না আলাপন পর্ব । খুব দরকার ছিল অবসরের পরও চিঠি ধরানো ? কেউ কেউ বলছেন । অবস্থা বুঝে জহর সরকাররা এখন মুখে একটু লাগাম টেনেছেন । মিডিয়ার কীর্তন গাইয়েরা এখন ব্যস্ত – বাঙালির প্রতি অন্যায় তত্বে – ঘোর অন্যায়, ঘোর অন্যায় বলে প্রচারে ব্যস্ত ।

আরেক দল আলাপনকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ? আলাপনের মধ্যে যাঁরা শিরদাঁড়া খুঁজে পেয়েছেন তাঁদের চ্যালেঞ্জ করছেন ।

বাস্তবতাটা কি ?

আলাপন যে শিক্ষিত মানুষ, মেধাবী মানুষ, রুচিশীল মানুষ এ নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই, সংশয়ও নেই । আমলা হিসেবে কতটা দক্ষ ? অবশ্যই পারফার্মার, শাসকের চোখে । না হলে এই উচ্চতায় যেতেই পারতেন না ।

পোস্টিং গুলো ভাবুন । সর্ব ভারতীয় পরীক্ষায় বাংলায় প্রথম হয়ে রাইটার্স-এ ও এস ডি । তারপর জেলা শাসক হয়ে উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা ঘুরে হাওড়া । এরপর কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট, কে এম ডি-এ ঘুরে ক্ষুদ্র শিল্প দফতর থেকে পরিবহন সচিব । সেখান থেকে স্বরাষ্ট্র দফতর হয়ে কেরিয়ারের শেষ লগ্নে চিফ সেক্রেটারি । লক্ষ করে দেখুন কলকাতা এবং কলকাতারই কাছে গঙ্গার এপার ওপার করে একটা কেরিয়ার কাটালেন এবং শেষ করলেন আলাপন । শাসকের মন না বুঝলে এটা সম্ভব ? লম্বা এই যাত্রাপথে ১৯৮৭ থেকে ২০১১ প্রায় ২৪ বছর বাম আমলের আমলা ছিলেন । বুদ্ধবাবুও ভীষণ পছন্দ করতেন তাঁকে । আমার ধারণা বাম আমল হলে অনেক আগেই আলাপন চিফ সেক্রেটারি হয়ে যেতেন । একটা সাকসেসফুল কেরিয়ারের সব উপাদান ছিল, আছেও এই মানুষটির মধ্যে ।

কিন্তু শিরদাঁড়া ? যার উপাদানে তাঁকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা হচ্ছে আচমকা ? সবাই জানে খুব কম আমলারই থাকে সেটা, সব আমলে, সব রাজত্বেই । নতুন কিছু নয় । আলাপন যে ভাবে, যে দ্রুততায় সরে গেলেন তাতে শিরদাঁড়ার জোর নয়, বুদ্ধিমত্তার ছাপ আছে । কিন্তু স্বকীয়তা ? যাঁরা এই সরে যাওয়ার মধ্যে অন্য মহিমা খুঁজতে ব্যস্ত ? সত্যিটা কি ? একটু ইতিহাসে যাই ।

কিছুদিনের জন্য এ রাজ্যের অস্থায়ী নির্বাচন কমিশনার হয়েছিলেন আলাপন । যে কলঙ্ক জনক নির্বাচন সেদিন করিয়েছিলেন বিধাননগরে সে ইতিহাসতো কোন শিরদাঁড়ার সাক্ষ্য বহন করে কি ? কিম্বা স্বরাষ্ট্র সচিব থাকার সময় যে সীমাহীন সন্ত্রাসে বাংলা বিদ্ধ থেকেছে তার জন্য তাঁর কোন কার্যকরী ভূমিকা বাংলা দেখেছে কি ? কিম্বা মদন মিত্রের পরিবহন সচিব থাকাকালীন যে ভাবে নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে তাতে তাঁর বাধা দান কি দেখেছে বাঙালি ? মনে পড়ে না । বিদ্যাসাগর মূর্তি ভাঙার তদন্তে তিনি তো ওয়ান ম্যান কমিশনের প্রধান হয়েছিলেন । দু বছর বাদেও তার রিপোর্ট পেশ করেননি কেন ? কিম্বা ২০২০ তে আড়াই হাজার কোটি টাকার স্বাস্থ্য ভবনের আর্থিক কেলেঙ্কারির ওয়ান ম্যান তদন্ত কমিশনের প্রধান হয়েছিলেন তিনি । কাকে রক্ষা করতে ? কোন সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রিয়জনকে রক্ষা করতে ? শিরদাঁড়ার সন্ধান তো এসব ক্ষেত্রেই মেলে । তালিকা দীর্ঘ । বিদায়কালে এসব প্রশ্ন তোলা উচিত নয় । তবু তুললাম যাঁরা তাঁর অবসরের মুহূর্তের মধ্যে এক বিরলের থেকেও বিরল ব্যক্তিত্ব খুঁজছেন তাঁর মধ্যে । খুঁজে চলেছেন নিরন্তর ।

আলাপন বুদ্ধিমান মানুষ, শিক্ষিত মেধাবী ডিপ্লোম্যাট আমলা । কিন্তু ব্যতিক্রমী বাঙালি আদৌ নন । তাঁকে দিয়ে অনেক কু কাজও এনডোর্স করিয়েছে শাসক । সময়ে সময়ে । ভুলি কি করে সেই ইতিহাস ? তার অনেক দলিল তো তিনি তাঁর সময় কালেই রেখে গেলেন ।

তাহলে বৃথা কেন আজ শিরদাঁড়ার খোঁজ ? রিটায়ারমেন্টের দিনেই বা কেন ! কোন ভাবনার শত্রুকে বধের লক্ষে ?

অবুঝ বাঙালি সব জেনেও কেমন অবুঝ থাকার ভান করে । কি অদ্ভূত ভাবে !!

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (;৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.