তিনি রামভক্ত ভানুভক্ত, রামায়ণের নেপালী অনুবাদক। নেপালে শ্রীরামকে জনপ্রিয় করেছিলেন তিনি। নেপালী কবি এবং প্রখ্যাত লেখক ভানুভক্ত আচার্যের (১৮১৪ — ১৮৬৪) শুভ জন্মদিনে (১৩ ই জুলাই) সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। সংস্কৃত ভাষা থেকে নেপালী ভাষায় রামায়ণ অনুবাদ তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব। রামনাম-কে নেপালের সাধারণ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আচার্য ভানুভক্তের যথার্থ স্মরণ – মনন এবং রামায়ণের নেপালী অনুবাদের ব্যাপক প্রচার নেপালকে বাঁচাতে পারে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে, সেই সঙ্গে ভারতের দার্জিলিং ও সন্নিকটস্থ পাহাড় রাজ্যকে। পাহাড়কে হাসাতে হলে রামনাম গাইতে হবে, ভানুভক্তের রামনাম। চেষ্টা চলুক। আমার সমস্ত নেপালী ভাই ও বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাই। শুভেচ্ছা সকল ভারতবাসীকেও।
ভানুভক্তের রামায়ণ পাঠ করার আগ্রহে বহু নেপালী নিরক্ষরতা পরিত্যাগ করে বর্ণ পরিচয় ও পঠন-পাঠনের দৌলতে সাক্ষরতার দিকে এগিয়ে যায়।, এই রামায়ণকে কেন্দ্র করেই নেপালী ভাষা গঠনমূলক পর্যায়ে পৌঁছে বিশ্বে স্থায়ী একটি ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে। ভানুভক্ত এক নেপালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটোবেলা থেকে ঠাকুরদাদার কাছে তাঁর প্রারম্ভিক পড়াশোনা শুরু, সংস্কৃত শেখা। এরপর তিনি উচ্চতর সংস্কৃত ও সংস্কৃতির পাঠ নিতে আসেন ভারতের বেনারসে। তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত নেপালী-রামায়ণ সম্পর্কে মানুষ জানতে পারেন নি। ১৮৮৭ সালে ভানুভক্ত রচিত রামায়ণের পাণ্ডুলিপি ছাপানোর জন্য মোতিরাম ভট্ট বেনারস আনেন, সাংস্কৃতিক বিশ্ব তখনই জানতে পারেন তাঁর অবদান। নেপালী ক্যালেন্ডারের ২৯ শে আষাঢ় বা ইংরেজি ১৩ ই জুলাই তাঁর জন্মদিন। সাড়ম্বরে এই দিনটি পালিত হয় নেপালে এবং নেপালী-ভাষা অধ্যুষিত দার্জিলিং, কালিম্পং সহ ভারতের নানান জায়গায়। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, দার্জিলিং-এর ম্যালে বসানো হয়েছে আদিকবি ভানুভক্ত আচার্যের পূর্ণাবয়ব মূর্তি, আপনিও দেখেছেন সে মূর্তি, ছবিও তুলেছেন। নেপাল তাঁর স্মরণে দু’টি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। তারমধ্যে একটি ডাকটিকিট তাঁর জন্মদ্বিশতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত হয়। মূল সংস্কৃত থেকে নেপালী ভাষায় রামায়ণ অনুবাদ করে তিনি রামনামের মাহাত্ম্য প্রচারক হয়েছিলেন। জন্মদিকে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই।
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।