রাহুলজি বলছেন, সত্তর বছর যদি আমরা কিছু নাই করি তবে, এতো অ্যাসেট কোথা বিক্রি এলো যা বিক্রি করছে বর্তমান সরকার ? কিন্তু কে বলেছিলো আপনার ঠাকুমাকে এই ডেড অ্যাসেট বানাতে? শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে খরচ না করে, অ্যাসেট বানিয়ে দেশকে ডোবাতে কে বলেছেন? যেই বছর ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হন, সেই 1966 এ কোলকাতার আড়াইগুন আয়তনের সিঙ্গাপুর কিছু জলা জমি নিয়ে নিজের যাত্রাপথ শুরু করে l আজ এশিয়ার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা কেন্দ্র থেকে হাসপাতাল ওই সিঙ্গাপুরে l ওই দেশের সড়ক, রেল, বন্দর, বিমানবন্দর, বোটানিকাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, জলপ্রকল্প, কোন কিছুই সরকারি পয়সায় হয় নি l ভারতের লোহিয়াপন্থী নেতারাও আজ ওই দেশে যাচ্ছেন চিকিৎসা করতে l আর ইন্দিরাজি সেইসময় শিক্ষা, স্বাস্থ্যর জন্য বরাদ্দ টাকা খরচ করেছেন ব্যাংক, স্টিল কোম্পানি থেকে গানের ষ্টুডিও বেচা কেনা করতে l কমতে থাকে কাজের সুযোগ l সেই সময় থেকেই শুরু হয় মেধা পাচার l
কিন্তু মনিটাইসেশন কি? এটা কিন্তু বিক্রি না, আর সেটা আপনিও সম্ভবতঃ জানেন l এই ব্যাবস্থা অনেকটাই ভাড়া দেওয়ার মত l কিন্তু এটা কি প্রথমবার? 2007-08 এ হাওড়া পুরসভা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে হাওড়ার 52 বাস স্ট্যান্ড, সালকিয়া বাজার বেসরকারী সংস্থাকে পিপিপি মোডে দিয়েছিল l 2004-05 এ কলকাতার 100% JNNURM বাস সুভাষ চক্রবর্তী, সুজন চক্রবর্তীদের দেয়া হয়েছিল পিপিপি মোডে l WBIDC রাজ্যসরকারের বহু সম্পত্তি লিজ দেয় এক যুগ আগেই l গ্রেট ইস্টার্ন? তৃণমূল কংগ্রেস আমলে সরকারের হাতের থাকার 90% সরকারি কোম্পানির শেয়ার বেচে দেয়া হয় যার মধ্যে হরিণঘাটা থেকে হলদিয়া সবাই আছে l এখানে নির্মালজি তো লিজ দিচ্ছেন? মালিকানা তো সরকারেরই?
এখন এই ব্যাবস্থায় কি শুধু সরকারের লাভ নাকি জনগনেরও? শিয়ালদা থেকে নৈহাটীর তিন এবং চার নম্বর রেল লাইন এবং প্লাটফর্মগুলির উদাহরণ নেয়া যাক l সারাদিনে হাতে গোনা কিছু ট্রেন যায় এই দুটি লাইনে l অথচ কয়েক লক্ষ যাত্রী এবং ট্রেনের সংখ্যা কম হাওয়ায় উত্তর 24 পরগনার এই অংশের মানুষের কাছে কলকাতায় এসে চাকরি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে l বিটি রোড, কল্যাণী রোডের ক্ষমতাও কম l ট্রেনের এবং প্লাটফর্মের মধ্যে গ্যাপ এতো বেশী যে বয়স্করা ট্রেনে উঠতে পারছেন না l এই সম্পত্তি যদি কোন বেসরকারী, বিশেষ করে বিদেশী রেল অপারেটর কোম্পানিকে, দিয়ে বিনিয়োগ করিয়ে এই দুই লাইন মেট্রো রেলে উন্নীত করা যায় এবং প্রতিটি স্টেশনে নভি মুম্বাইএর মত অফিস বা বাণিজিক কেন্দ্র বানানো যায়, তাতে ক্ষতি কি? যাতায়াত ছাড়াও, ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আসবে কয়েক বছরে l কলকাতা থেকে নৈহাটী অঞ্চলে জমির এবং বাড়ির দাম বহুগুণ বেড়ে যাবে যেমন বেড়েছে মুম্বাইয়ের শহরতলিতে l বিকেন্দ্রীকরণ হবে কলকাতার বাণিজ্যের l শহরতলিতেও চাকরির সুযোগ বাড়বে l উচ্চমানের বেসরকারি চিকিৎসা ব্যাবস্থারও বিকেন্দ্রীকরণ হবে, যা এখন ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের গন্ডির বাইরে প্রায় নেই l তাছাড়া সরকারের ঘরেও লাভের অংশ আসবে, যে টাকায় সরকার অপেক্ষাকৃত কম উন্নত জায়গায় নতুন পরিকাঠামো বানাতে সক্ষম হবে l সবচেয়ে বড় কথ, একটা সময়ের পর মালিকানা সরকারের কাছেই ফিরে আসবে l
শেষে রাহুল গান্ধীকে প্রশ্ন করি, কোনো বাবা মা তাদের আয়ের টাকা সবার প্রথমে কোথায় খরচে অগ্রাধিকার দেয়? শিক্ষা ও স্বাস্থ্য? নাকি বাড়ি ও সোনা কিনতে? যে বাবা-মা এই খাতে খরচ না করে সোনাদানা, বাড়ি বানান, তাঁদের সন্তানের দুঃখের শেষ থাকে না l আর এটা আপনার পূর্বপুরুষরা বোঝেন নি বলেই 1974 এ মুদ্রাস্ফীতি হয় 33%, পরের বছর বেকার সমস্যা আকাশ ছোঁয়ে,1978 এ জিডিপি বৃদ্ধি ঋণাত্মক হয় এবং 1991 তে দেশ দেউলিয়া হবার মুখে চলে যায় l মুক্তবাজার অর্থব্যাবস্থার মূল দর্শন এর ঠিক উল্টো l প্রথম বাবা-মার মত যারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে অগ্রাধিকার দেয় l অথচ আপনাদের দৌলতে সরকারি শিক্ষা ব্যাবস্থা উঠে যাবার মুখে l আমেরিকা, চীন, ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর মুক্তবাজার অর্থব্যাবস্থার পথে গেছে l আর আপনার ঠাকুমার সঙ্গী ছিলেন সোভিয়েত রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপ, কিউবা, উত্তর কোরিয়া l ইতিহাস জানে কে সফল আর কে ব্যর্থ l তাই, অ্যাসেট বানানোর গর্ব না করে, দেশবাসীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে দশকের পর দশক অবহেলার জন্য ক্ষমা চান l তবে যারা আপনার বক্তৃতা লিখে দেন, তারা ওই মিশ্র অর্থনীতি শব্দটা বারবার নিয়ে আসেন আপনাকে খুশি করার জন্য l কারণ এই শব্দের মানে না বুঝলেও, আপনি খুশি হবেন তাদের প্রতি l তবে, এই সব বলে আর লোক হাসানোর আগে মনমোহন সিংজিকে দয়া করে একবার জিজ্ঞাসা করুন আপনার পরিবারের তৈরি অ্যাসেট কোল ইন্ডিয়া, ONGC, SBI কেন বেচেছিলেন উনি? বেচার সময় কি আপনার শ্রদ্ধেয় মাতাজি জানতেন, নাকি তাকে না জানিয়েই……
সুদীপ্ত গুহ