চড়টা কে খেল সপাটে ? নবান্ন না বাংলা সংবাদ মাধ্যম ? হাইকোর্টের রায়ে ।
আমাকে কেউ প্রশ্ন করলে বলব আদালতের রায়ে মমতার থেকেও বেশী বে আব্রু হল এক শ্রেণীর বাংলা সংবাদ মাধ্যম । যারা গত তিন মাস ধরে গ্রামের পর গ্রাম লুঠের কাহিনী লুকিয়েছে পাঠক বা দর্শকের কাছ থেকে ।
কীভাবে শুনবেন ? বাংলা বার্তার সুবাদে যখন প্রায় প্রতিদিন গ্রাম, মফঃস্বল কিম্বা প্রান্তিক শহর থেকে অসহায় মানুষের যন্ত্রণার খবর পেতাম ফোনে সেটা নিয়ম করে ফরোয়ার্ড করতাম বাংলা সংবাদ মাধ্যমের বহু সাংবাদিককে । ওয়াটস আপে তারা দেখতেন, চোখ বোলাতেন । কিন্তু ভুলেও সাড়া দিতেন না । জানতে চাইতেন না কোথায় ঘটছে সেই নির্মমতা । বুঝতাম তাঁদের অসহায়তা ।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার বুলডোজার দিয়ে ভাঙা বাড়ির ভিডিও পাঠালাম এক পরিচিত সাংবাদিককে । ফোনও করলাম সর্বাধিক প্রচারিত গ্রুপের সেই রিপোর্টারকে । বললেন, দেখেছি আপনার পাঠানো ভিডিও । দেখছি, কি করা যায় । এখনও তাঁর ফিরতি ফোন আসেনি । ঘটনার দু মাস পূর্তি হতে চলল ।
ফোন করা ওয়াটস আপ করা বন্ধ রেখে অত্যাচারিত মানুষরা ফোন করলেই এই সব বড় চ্যানেলের, সংবাদ পত্রের সাংবাদিকদের ফোন নাম্বার দিয়ে বলতাম সোজা ফোন করুন এঁদের । পরে এই মানুষ গুলোর সঙ্গে কথা বলে দেখেছি দু একটি বাদে কেউ কথা রাখেনি । একজন রিপোর্টারও পাঠায় নি । এই অসহায় নির্মম ভাবে নির্যাতিত মানুষগুলোর কাহিনী তুলে ধরতে বা ছাপতে ।
ছাপলে কি হত ? সম্প্রচার করলে কি হত ? জানাজানি হলে একটু সমঝে চলত লুম্পেনরা । সেটাও চাননি মমতা । নিজের রিমোট দিয়ে কন্ট্রোল করেছেন সংবাদ মাধ্যম । রিপাবলিক, সি এন, টি ভি নাইন ছাড়া সবাই কথা শুনেছে রেখেছে মমতার । আনন্দবাজার, এই সময়, বর্তমান নিজেদের মধ্যে টেক্কা দিয়েছে কে কিভাবে খবর লুকোবে । করেওছে সেটা সব চক্ষু লজ্জার পর্দা উঠিয়ে । এই হতভাগ্যদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে ।
একদিকে গ্রামের অন্ধকারে অসহায়, বিপর্যস্ত গরীব মানুষগুলো মরেছে । ঘর ছেড়ে, ছাদ ছেড়ে ইতি উতি আশ্রয় নিয়েছেন এঁরা দূরে দুরান্তরে আত্মীয় পরিজনের উঠোনে, নির্জন রেল স্টেশনে, কিম্বা বন্ধ কারখানার নীচে ফ্যাক্টরি সেডের তলায় । দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অসহায় ভাবে কাটিয়েছেন । কেউ কেউ তিনদিন জল খেয়ে কাটিয়েছেন ।
হিঙ্গেলগঞ্জ থেকে প্রায় মাঝ রাতে ফোন পেয়েছি – নদীর ধারে জঙ্গলের মধ্যে রাত কাটাচ্ছি বউ বাচ্চা নিয়ে । বাড়ি, ঘর সব লুঠ হয়ে গেল সন্ধ্যেবেলা । পান্ডবেশ্বরে ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া মহিলা ফোনে বলছেন ওরা বলছে বাড়ি ফিরতে পার স্বামীকে আনা চলবে না ।
প্রায় প্রতি সকালে, দুপুরে, রাতে কত অজস্র এমন ফোনের ওপারের কথা আজ মনে পড়ছে । কে কোথায় হারিয়ে গেছেন, কে কিভাবে বেঁচে আছেন জানিনা । শুধু মনে হচ্ছে এঁরা অন্তত আজ একটু স্বস্তি পেলেন এই রায়ে ।
ভাবছিলাম ৪৩ টা মানুষের মৃত্যু কিছুটাতো এড়ানো যেত যদি এই শয়তান মিডিয়া বিক্রি না হত । মমতা তার বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছেন এঁরা সবাই জানতেন । এঁরা জানতেন মমতা চাইছেন কমপ্লিট ব্ল্যাকআউট অফ নিউজ । সেটাই এঁরা করেছেন নিখুঁত ভাবে ।
মরেছে মানুষ, পুড়েছে মানুষ, এঁরা দেখেও তাই দেখেননি ।
আজ আদালতের রায় শুধু নবান্নের নয়, পেটোয়া চাটুকার এই একশ্রেণীর স্পাইনলেস বাংলা সংবাদ মাধ্যমের গালেও একটা সজোরে সপাটে চড় ।
এই চড় খেয়েও কি এঁরা লজ্জিত ?
মনে হয় না । কাগজে এঁদের হেড লাইনগুলোর দিকে একটু নজরে রাখুন । মিলিয়ে নেবেন । ভুল বললাম কি না !
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)