কোনটা ঠিক, প্রজ্ঞানন্দ না প্রজ্ঞনানন্দ
রমেশবাবু প্রজ্ঞনানন্দ, উচ্চারণটা হয়ত এটাই হবে। কারণ তিনি যে নামটা লেখেন সেটা হল, Rameshbabu Praggnanandhaa। বিশ্বনাথন আনন্দের পর রমেশবাবু প্রজ্ঞনানন্দ। ভারতের কেবলমাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসাবে দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার পর থেকেই, চেন্নাইয়ের ১৮ বছরের ছেলে উঠে এসেছেন গোটা দেশ, গোটা বিশ্বের শিরোনামে। সোমবার আমেরিকার গ্র্যান্ডমাস্টার ফ্যাবিয়ানো কারুয়ানাকে হারানোর পর থেকেই প্রজ্ঞনানন্দ-কে নিয়ে চলছে তুমুল উচ্ছ্বাস।
২০০৫ এর ১০ই আগস্ট জন্ম। মাত্র ৮ বছরে ২০১৩ সালে বিশ্ব যুব দাবা প্রতিযোগিতা জেতা দিয়ে শুরু। তারপর কোনও দিন আর পিছনে তাকাতে হয়নি প্রজ্ঞনানন্দ-কে। একের পর এক প্রতিযোগিতায় ট্রফি জিতে বাড়ির ক্যাবিনেট ভরিয়ে ফেলেছেন তিনি। ১০ বছর ১০ মাস ১৯ দিন বয়সে আন্তর্জাতিক মাস্টার্স (আইএম) হন, যা গোটা বিশ্বে কনিষ্ঠতম। ২০১৭-য় প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম। পরের বছরের ২৩ জুন ইটালির একটি প্রতিযোগিতায় তৃতীয় নর্ম পেয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার। সেই সময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় কনিষ্ঠ (সের্গেই কারয়াকিনের পরে) খেলোয়াড় হিসাবে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন প্রজ্ঞনানন্দ।
আনন্দ নিজে যেমন চেন্নাইয়ের, প্রজ্ঞনানন্দও তাই। ফলে চেন্নাই থেকেই দুই খেলোয়াড় বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব অর্জন করলেন। প্রজ্ঞনানন্দ নিজেও তাঁর আইডল ‘আনন্দ স্যর’ এর অ্যাকাডেমিতেই (ওয়েস্টব্রিজ আনন্দ চেস অ্যাকাডেমি) অনুশীলন করে। আনন্দ স্যরকেই নিজের আদর্শ বলে মানে।
২০২২ ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বের এক নম্বর কার্লসেনকে, এক অনলাইন চ্যাম্পিয়নশিপে হারান রমেশবাবু প্রজ্ঞনানন্দ। ওই বছরেরই মে মাসে, এয়ারথিংস মাস্টার্স ব়্যাপিড চেস প্রতিযোগিতায় কার্লসেনকে ফের হারিয়েছিলেন প্রজ্ঞনানন্দ। ওই বছরেরই আগস্ট মাসে এফটিএক্স ক্রিপ্টো কাপে ফের একবার, ছয় মাসে বলে বলে তিন-তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কার্লসেনকে দাপটের সঙ্গে হারিয়েছিলেন বিশ্ব দাবার এই বিস্ময়। ফলে এবারের ফাইনালের আগে, বেশ চাপে বিশ্বের একনম্বর ম্যাগনাস কার্লসেন।
বাংলায় এখন জোর বিতর্ক কোনটা ঠিক, প্রজ্ঞানন্দ না প্রজ্ঞনানন্দ? কিন্তু আসল কথা হল, নামে কি আসে যায়? কার্লসেনকে হারিয়ে বিশ্ব দাবার ফাইনালে জিতে, দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যালেঞ্জার হয়ে গতবারের বিজেতা চিনের ডিং লিরেনকে চ্যালেঞ্জ জানানই এখন ভারতের বিস্ময় কিশোরের আসল লক্ষ্য। গোটা দেশের অপেক্ষা ওই দিকে তাকিয়েই।
Copyright: Manab Guha