যখন আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা পুষ্টির নিরিখে আমাদের তুলনা করে বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে, তখন বাংলা মিডিয়া সরকারের কঠোর সমালোচনা করলেও, আজ সরকারের এই যুগান্তকারী উদ্যোগের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব

স্বাধীনতার 75 বছর পরেও আমাদের দেশের পুষ্টির নিরিখে বহু এশিয়ান দেশের চেয়েও পিছিয়ে l বিপুল জনসংখ্যা, খাদ্যবন্টনে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি, সামাজিক বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য এবং সম্পদের অসমবন্টন নিঃসন্দেহে এর কারণ l রেশনে চাল পেলেও দুধ, ডিম, পনিরের মত সুষম খাদ্য 135 কোটি মানুষকে কিভাবে পৌঁছানো যায়? সম্ভবতঃ সরকারের সেই ক্ষমতা এখনো হয় নি l উচ্চমধ্যবিত্ত কিম্বা উচ্চবিত্তরা দুধ, ডিম পাওয়ার পরেও, ফুড সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট খেয়ে ভিটামিন বা মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করে l কিন্তু যে দেশের এখনো প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তাদের কাছে ফুড সাপ্লিমেন আর হীরের আংটি সমান l সরকার যদি রেসনে এই ট্যাবলেট দেয়া শুরু করে, তবে দারিদ্র মানুষ সেটা বেচে অন্য কোন নিত্যপ্রয়জনীয় সামগ্রী কিনে নেবে l অথবা ধর্মের দোহাই দিয়ে কোভিড ভ্যাকসিনের মত এই ট্যাবলেটকে ‘হারাম’ বলে ব্রাত্য করে রাখা হল l এমনও হতে পারে, বাড়ির পুরুষরা ওই ট্যাবলেট খেয়ে নিল এবং মহিলাদের দিল না l পুত্র সন্তানকে দেয়া হল, কন্যা সন্তানকে বঞ্চিত করে l তাহলে উপায়?

ই- রুপি যেমন সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দকে সঠিক পথে খরচের গ্যারান্টি দেয়, তেমনই দেশের দারিদ্রতম ও প্রান্তিক সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বর্ষের সূচনায় লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন ‘ফর্টিফায়েড’ চাল বন্টন l ফর্টিফায়েড চাল কি? এর প্রয়োজন কি? দেখা গেছে, দেশের একটা বড় অংশের মানুষ এখনো চাল পেলেও, অভাব থেকে যায় মিনারেল, ভিটামিনসহ ভিন্ন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর l আর সেই অভাব পূরণ করতে রেশনের চাল এবং স্কুলের দুপুরের খাবারের চালে কৃত্তিমভাবে যোগ করে দেয়া হবে এই পুষ্টিকর খাবার, যাকে দেখতে চালের মতই হবে l প্রতি এক কিলো চালে দশ গ্রাম মিশিয়ে দেয়া হবে এই চালের মত দেখতে খাদ্য l এই চালে মূলতঃ থাকবে আইরন, ভিটামিন B 12 এবং ফলিক অ্যাসিড l দ্বিতীয় ধাপে, ভিটামিন A, এবং বিভিন্ন ভিটামিন B যোগ করার কথা ভাবা হচ্ছে l আপাতত, এক কিলো চালে দশ গ্রাম ফর্টিফায়েড চাল মেশালে কাজ হবে? FSSAI এর মতে, প্রতি কিলো এই মিশ্র চালে মানুষের দেহের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি মাইক্রোনিউটিয়ান্ট থাকবে l

চালকে বেছে নেবার কারণ, অধিকাংশ মানুষ এখনো মোট খাবারের 70% চাল খায় l এমনকি পৃথিবীর উন্নততম দেশেও সুষম খাদ্যের অভাব পুরণে এই ফর্টিফায়েড রাইস মিশিয়ে দেয়া হয় কার্বোহাইড্রোটে l মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পানামা, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, ফিলিপিন্স সহ বহু সাত আটটি দেশ এই রাস্তা নিয়েছে l এর একটা সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জনস্বাস্থ্যে l কমবে স্বাস্থ্যখাতে খরচের পরিমান l চালের দাম বাড়বে মাত্র 60 পয়সা প্রতি কিলো l সংশ্লিষ্ট রাজ্য এবং কেন্দ্র শেয়ার করবে এই টাকা l 2024 এর মধ্যে দেশের প্রত্যেক রেশন দোকান ও স্কুল এই চাল পেতে চলেছে l চটের ব্যাগে এই চাল বিতরণ হবে, যেখানে +F চিহ্ন থাকবে l

শেষে বলি, যখন আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা পুষ্টির নিরিখে আমাদের তুলনা করে বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে, তখন বাংলা মিডিয়া সরকারের কঠোর সমালোচনা করলেও, আজ সরকারের এই যুগান্তকারী উদ্যোগের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব l মনে রাখতে হবে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকার বহু উন্নতদেশ এবং চীন এখনো এই উদ্যোগ নেয় নি l

সুদীপ্ত গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.