WhatsApp ইউজাররা যদি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে তারা এতকাল যা কিছু মেসেজ WhatsApp এ শেয়ার করে এসেছেন সব প্রাইভেট রয়ে গিয়েছে, কেউ জানতে পারে নি, এমনকি WhatsApp এর সার্ভারও না, তাহলে তাদের মত বুদ্ধু লোক বোধ করি আর হয় না।

স্বামী স্ত্রীকে মেইল করলে মেইল আগে যায় আমেরিকায় গুগলের সার্ভারে। স্ত্রী জানবার আগে গুগল জানতে পারে মেইলে কি লেখা আছে। তারপর গুগলের সার্ভার থেকে সেই মেইল রিডাইরেক্ট করে পাঠানো হয় স্ত্রীকে। অর্থাৎ একই বাড়ির এক ঘর থেকে আর এক ঘরে কেউ যদি ই মেইল করে, তবে তা এঘর থেকে ওঘরে যায় via অ্যামেরিকা। প্রাইভেসি কোথায়?

অনুরূপভাবে, যতই end-to-end encrypted হোক, encrypted ল্যাঙ্গুয়েজে কনভার্টেড হওয়ার আগে অরিজিনাল মেসেজের একটি কপি WhatsApp এর সার্ভারে কি থাকে না? থাকা স্বাভাবিক। অর্থাৎ পরকীয়া করতে গিয়ে প্রাক্তন মেয়র তার প্রেমিকাকে কি মেসেজ WhatsApp করলেন, তা আর কেউ না জানুক, WhatsApp জানে। WhatsApp এর সার্ভারে তা থাকে বলেই বিশ্বাস‌ করি।

প্রাইভেসি রইল কোথায়? বাস্তব হল—গুগলের জমানায় প্রাইভেসি আদতে exist করে না এবং বিগ টেক কম্প্যানিগুলি তা জানে। বিগ টেক কম্প্যানিগুলি এ-ও জানে যে প্রাইভেসি বিষয়টির প্রতি মানুষের দুর্বলতা স্বতঃস্ফূর্ত হলেও সেই সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আছে ইন্টারনেট-নির্ভর সমস্ত পরিষেবা ও সুবিধা নেওয়ার ষোল আনা লোভ। সুতরাং এই গ্যাপটিকে ব্রিজ করে মানুষকে সান্ত্বনার ল্যাবেঞ্চুস ধরানোর একটি পদ্ধতি ওয়ার্ক আউট করে বানানো হয় WhatsApp. WA conceptualize করে encrypted message. মানুষকে বোঝানো হয়— ‘আপনার মেসেজ আপনি আর রিসিভার ছাড়া আর কেউ জানবে না, এমনকি WhatsApp ও নয়।’ কিন্তু টেকনিক্যালি অরিজিনাল মেসেজের একটি কপি WhatsApp এর সার্ভারে থাকে না, এই জমানায় এ প্রায় অসম্ভব ও অবিশ্বাস্য একটি ক্লেইম যা WhatsApp এতদযাবৎ করে এসেছে। কিন্তু মানুষ যেহেতু ইন্টারনেট-নির্ভর পরিষেবা ও এন্টারটেইনমেন্টগুলি নিতে অতিমাত্রায় লালায়িত হয়েই আছে, ফলে প্রাইভেসির niche টিতে WhatsApp এর এই encrypted message এর গল্প তারা সহজেই খায় (কারণ এমন গল্প খাওয়ার জন্য তারা উদগ্রীব, ইন্টারনেট ব্যবহার করেও তাদের প্রাইভেসি বজায় থাকছে এমন একটি চিন্তা করার মাধ্যমে নিজেদের মনকে প্রবোধ দিতে চাওয়ার জন্য সদা-উৎসুক তারা) এবং এই সরল বিশ্বাসে মশগুল হয়ে থাকে যে তার মেসেজ সে আর রিসিভার ছাড়া আর কেউ দেখতে পাচ্ছে না, এমনকি WhatsApp সার্ভারও না।

ভারতের নতুন আই টি আইনে comply করলে WhatsApp এর এই marketing niche টি হাতছাড়া হবে। ‘প্রাইভেসি বজায় রেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকুন একমাত্র WhatsApp এর মাধ্যমে’ —এইটিই WhatsApp এর প্রোমোশনাল USP. নতুন আই টি আইন মানতে হলে এই প্রোমো-ইউএসপিটিই WhatsApp এর আর থাকবে না। অন্য পাঁচটা সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের সঙ্গে একাসনে গিয়ে বসতে হবে WhatsApp কে।‌ তাদের আপত্তির কারণও সেইটি। সেই কারণেই তারা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে কেস করেছে। করতে পারে। ব্যবসায়ী হিসেবে তাদের ব্যবসার marketing niche ও promo-USP বজায় রাখার চেষ্টা তারা করবে এ-ই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো দেশে ব্যবসা করতে গেলে সে দেশের আইন মানতে হবে বৈ কি।

কিন্তু এর ফলে WhatsApp ইউজাররা যদি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে তারা এতকাল যা কিছু মেসেজ WhatsApp এ শেয়ার করে এসেছেন সব প্রাইভেট রয়ে গিয়েছে, কেউ জানতে পারে নি, এমনকি WhatsApp এর সার্ভারও না, তাহলে তাদের মত বুদ্ধু লোক বোধ করি আর হয় না।

ধন্যবাদান্তে—
দেবযানী ভট্টাচার্য্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.