প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর বেয়ার গ্রিলসের অরণ্য-অভিযান নিছকই পর্যটনের প্রসার নয়, এর পিছনে রয়েছে জাতীয় উদ্দেশ্যও, এমনটাই জানানো হয়েছে ডিসকভারি চ্যানেল ও প্রধানমন্ত্রী দফতরের তরফ থেকে। মোদী-গ্রিলস ‘ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড’-এর সেই বহু প্রতীক্ষিত পর্ব শুধু দেশ নয়, সম্প্রচারিত হয়েছে বিশ্বের আরও ১৬৫টি দেশে। প্রধানমন্ত্রী দফতরের আধিকারিকদের কথায়, এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য একটাই। দেশের মাটিতে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের বার্তা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা। পাশাপাশি, এই অনুষ্ঠান থেকে উঠে আসা টাকা প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে জমা করা।
ডিসকভারি চ্যানেলের তরফে বলা হয়েছে, ‘বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে ভারতের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করাই এই শো-এর লক্ষ্য। বাঘ সংরক্ষণে ভারতের চেষ্টা প্রশংসনীয়। এই অনুষ্ঠান থেকে আয় হওয়া সব টাকাই যাবে দেশের বাঘ সংরক্ষণ খাতে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এবং নমামি গঙ্গে প্রকল্পে।’
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য, সার্ভাইভাল ইনস্ট্রাকটর. অ্যাডভেঞ্চারার বেয়ার গ্রিলসের ‘ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড’ শো-এর জনপ্রিয়তা বিপুল। এর আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে আলাস্কার দুর্গম জঙ্গলে অ্যাডভেঞ্চারে মেতেছিলেন গ্রিলস। এ বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তরাখণ্ডের জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে গত ফেব্রুয়ারিতে এই শ্যুটিং যখন চলছিল, কাশ্মীর তখন উত্তপ্ত পুলওয়ামার বিস্ফোরণে। গতকাল মোদী-গ্রিলসের এই শো দেখে তাই অনেক তির্যক মন্তব্যই ছেয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। কারোর দাবি ছিল এই অনুষ্ঠান নিছকই পর্যটনের প্রসার, কারোর মন্তব্য ছিল, পুলওয়ামা যখন রক্তে ভাসছে, মোদী তখন ব্যস্ত ছিলেন শ্যুটিংয়ে।
প্রধানমন্ত্রী দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের জন্য একাধিক প্রকল্প নিয়েছে মোদী সরকার। দেশ জুড়ে চলছে বাঘ সংরক্ষণের প্রচার। বাঘ সুমারির হিসেব বলছে, উত্তরাখণ্ডেই ২০১০ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ৩৪০টি। ২০১৮ সালে এসে সেইসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪২টিতে। বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণর প্রয়াসকেই আন্তর্জাতিক ভাবে তুলে ধরতে ভারতের হাত ধরেছে ডিসকভারি চ্যানেল।
গতকাল রাত ৯টায় আপামর দেশবাসীর চোখই ছিল টিভির পর্দায়। মোদী-গ্রিলস ‘ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড’ শো-কে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ বলেছেন ‘বন কি বাত!’ হেলিকপ্টারে জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কের উপর চড়কি খেয়ে কোর এলাকার কিছু দূরেই ল্যান্ড করলেন গ্রিলস। পিএমও দফতরের অফিসারদের কথায়, হাতির মল শুঁকে প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে যাওয়াটাও অভিযানের একটা অংশ। কাঠকুটো, বাঁশ, প্লাস্টিক দিয়ে বানানো ছোট ভেলায় চেপে নদী পার হওয়ার সময়ই গরম জল আর নিম পাতার চায়ে শুরু হয় চর্চা। মোদী শোনার তাঁর কুমিরছানা ধরার গল্প, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা। অফিসারদের কথায়, ‘‘নদীপথে ভয়ের কারণ তেমন ছিল না। কারণ প্রধানমন্ত্রী ও গ্রিলসকে ঘিরে ছিল স্লেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের অফিসাররা। ওবামার সঙ্গে অভিযানে নদী থেকে স্যামন মাছ ধরে গ্রিল করে খেয়েছিলেন বেয়ার গ্রিলস। কিন্তু মোদী নিরামিষাশী, তাই নিম পাতার চায়েই জমে ওঠে গল্প।’’
শুরু থেকেই অভিযানের ছায়াসঙ্গী ছিলেন এসপিজি, বন দফতর, সম্প্রচার মন্ত্রকের আধিকারিকরা। পিএমও-র আধিকারিকদের কথায় তিনটি চ্যালেঞ্জ নেওয়া হয়েছিল এই শো-য়ে। এক দুর্গম অরণ্যে পদযাত্রা, দ্বিতীয় নদীপথে ছোট ভেলায় চেপে অভিযান এবং অবশ্যই প্রকৃতি সংরক্ষণের বার্তা। জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কের কোর এলাকায় বিপদের ঝুঁকি আছে জেনেও মোদী নিজের সঙ্গে কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখেননি। যে পোশাক পরেছিলেন সেটাও নিজে পছন্দ করেছিলেন।
দেশের তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা ছিল, “জীবনে ওঠা নামা থাকবে। কিন্তু ইতিবাচকতা যেন না চলে যায়।” আমি কে, আমি কী, কখনও তা নিয়ে ভাবিনি। শুধু ভেবেছি কাজ নিয়ে। উন্নয়ন নিয়ে।”