ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাম উঠলেই পণ্ডিত নেহেরুর কথা উঠে আসে, যদিও আজকের দিনে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রবাদী ভারতীয় সমাজ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকেই (Netaji Subash Chandra Bose) অখণ্ড ভারতের প্রথম স্বীকার করে নিয়েছে। তবে বহু ষড়যন্ত্র চালিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে স্বাধীন ভারত পরিচালনা করা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিলব বলে দাবি করা হয়। এখন যদি ভারতীয়রা নেহেরুর স্থানে নেতাজিকে এক মুহূর্তের জন্য প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কল্পনা করে তাহলেও মনের মধ্যে যেন অফুরন্ত আনন্দের উদয় হয়। একই সাথে এক গৌরবশালী, সমৃদ্ধশালী ও শক্তিশালী ভারতবর্ষের ছবি চোখের সামনে ভেসে আসে।
পণ্ডিত নেহেরুর পরিবর্তে যদি ভারত মাতার কালজয়ী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রধানমন্ত্রী পদে বসতেন তাহলে আজকের ভারতবর্ষ এর রুপ কেমন হতো তাই নিয়ে আমরা India Rag এর পাঠক পাঠিকাদের সাথে আলোচনা করবো। প্রথমত, নেতাজি প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতে নেহেরু/গান্ধি পরিবারের নামে যে উপদ্রব চলে তা দেখা জেত না। দ্বিতীয়ত , ভারত ভাগ হতো না, অর্থাৎ বাংলাদেশ-পাকিস্তান নামের কোনও দেশ তৈরি হতো না। চীনের সাথে ভারতের যুদ্ধ হয়ত হতো না আর হলেও যুদ্ধের ফলাফল অন্যরকম হতো।
অনুশাসন সম্পন্ন ভারত:
নেতাজি মনে করতেন ভারতে একটা ভালো নেতৃতের প্রয়োজন রয়েছে। নেতাজি এক অনুশাসন সম্পন্ন ভারতের সপ্ন দেখতেন। তাই উনি স্বাধীন ভারতকে নেতৃত্ব দিলে এক অন্য মানসিকতার ভারত দেখা যেত। যার মাধ্যমে ভারত তার পূর্ণ জনসংখ্যাকে সঠিক কাজে কাজে লাগাতে সক্ষম হত। জানিয়ে দি, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষ অনুশাসনের অভাব বোধ করে, যা জাপানের মতো ছোটো দেশের কাছেও ভরপুর রয়েছে। এই অনুশাসনের শক্তির জোরে পারমানবিক হামলার মার খেয়েও জাপান উন্নত দেশে পরিনত হয়েছে।
যুব নেতৃত্বের হাতে তৈরি হতো ভারতবর্ষ:
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু পণ্ডিত নেহেরুর থেকে ১০ বছরের ছোটো ছিলেন। তাই নেহেরুর পরিবর্তে নেতাজি প্রধানমন্ত্রী হলে ভারত একটা যুব নেতৃত্ব পেত, যার প্রভাব আজকেও স্পষ্ট দেখা মিলতো। নেতাজি শক্তির পূজারী ছিলেন তাই উনার নেতৃত্বে দেশবাসী ভারতীয় সভ্যতাকে পুনর্জীবিত করার একটা বড়ো সুযোগ পেত। অন্যদিকে নেহেরু অহিংসার পথে চলা বিপরীত ধরনের বাক্তি ছিলেন। তাই নেতাজির নেতৃত্ব নিসন্দেহে ভারত দেশের চাল চলনে যুগান্তকারী প্রভাব ফেলতো।
নারীদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া ও জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে নেতাজির যে চিন্তাধারা ছিল তা অত্যন্ত দূরদর্শী। আজাদ হিন্দ ফৌজে মহিলাদের জন্য তিনি ঝাঁসির রানি ব্রিগেড তৈরি করেছিলেন। যা নারী সশক্তিকরণ এর বিষয়ে উনার ধারনাকে ব্যাক্ত করার জন্য যথেষ্ট। জাতিভেদ প্রথার মতো বিষয়কে নেতাজি দেশ থেকে কিভাবে ছুঁড়ে ফেলে চাইতেন তা উনার ভাষণ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। এক্ষেত্রে নেতাজি প্রধানমন্ত্রী হলে এই দুটি ইস্যুতে ভারত সঠিক অবস্থানে থাকতো। অন্যদিকে এই দুটি ইস্যুতেই সম্পূর্ণ ফেল নেহেরুর নেতৃত্ব। আজকের ভারতে জাতিকেন্দ্রিক যে রাজনীতি হয়ে থাকে তা নেহেরুর ব্যার্থতাকে দেখিয়ে দেয়।
বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী সেনা:
একদিকে দেশের নীতি পরিচালনার দিক থেকে নেহেরু ছিলেন অত্যন্ত তথাকথিত শান্তিবাদী , অন্যদিকে নেতাজি ছিলেন শক্তিশালী সেনা গঠনের পরিপন্থী। আজাদ হিন্দ ফৌজের পরিচালনার মাধ্যমেই নেতাজি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে উনি ভারতের এক মহাশক্তিশালী সেনাবাহিনীর স্বপ্ন দেখেন।
বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির সমূল বিনাশ:
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নামের দুই দেশ ভারতকে ভেঙে তৈরি হয়েছে। এখনও বর্তমান ভারতে এমনকিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি রয়েছে যারা কোথাও প্রাদেশিকতাকে উস্কে আবার কোথাও অন্য ইস্যু উস্কে দিয়ে দেশকে টুকরো করার লাগাতার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এই সমস্ত দুর্বলতার জন্য বিশেষজ্ঞরা নেহরুর দুর্বলতাকে দায়ী করেন। নেহেরু নেতাজির স্থানে থাকলে ভারত এই সমস্ত দোষ থেকে মুক্তি পেত।
ধৰ্মনিরপেক্ষতার নামে চলা ভন্ডামির সমাপ্তি:
নেহেরুর আমল থেকে ধৰ্মনিরপেক্ষতার নামে তোষণ নীতির যে বিষ ভারতে ঢুকে পড়েছে তা এখনও অবধি দেশকে বিষাক্ত করে চলছে। নেতাজি স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে চলা ব্যাক্তি ছিলেন। যার নেতৃত্বে এই ধরনের ভণ্ডামি দেশে টিকে থাকা একেবারে অসম্ভব ছিল।