স্বাস্থ্যের কারণে আমায় পাকাপাকিভাবে কলকাতা ছেড়ে দিল্লীতে চ’লে আসতে হ’ল। বাংলার সংস্কৃতি ও রাজনীতির এই সুমহান অথচ ঝঞ্ঝাবিধ্বস্ত কেন্দ্রটিতে আমি দীর্ঘ বারো বছর কাটিয়েছিলাম। বলা চলে যে আমি একরকমভাবে কলকাতার রাজনীতিতে অংশও নিয়েছিলাম। এটা আমার দুর্ভাগ্য যে আমি ঐ একই উৎসাহ নিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির উৎসমুখ হ’তে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুধাপান করিনি; যে সংস্কৃতি এই সেদিন অব্দিও ভারতবর্ষের অন্তরতম আত্মার পুনর্জাগরণের সঙ্গে সমার্থক ছিল। বাংলা নিজেও এই সুমহান ঐতিহ্যের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ক্রমশঃ বাইরে হ’তে আমদানি করা একটি মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়ছিল, যা তাকে ক্রমশঃ আধ্যাত্মিক দিক থেকে রিক্ত ক’রে তুলছিল।

কিন্তু আমার একটি গভীর সম্পর্ক গ’ড়ে উঠেছিল বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে, যে সাহিত্যকে আমি ভারত কেন, সমগ্র বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য ব’লে মনে করি। আমি মনে করি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন আধুনিক কালের শ্রেষ্ঠ কবি, তেমনই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকদের সঙ্গে একাসনে বসবার অধিকারী। বৈষ্ণব কবি এবং বাউলরা আমায় গভীরভাবে টানেন, যাঁদের পদাবলী কীর্তন এবং নিগূঢ় আধ্যাত্মিক অনুধ্যানের ঐতিহ্য আজও বাংলার সংস্কৃতির জীবন্ত উপাদান। দেবত্বের দিকে আত্মার অনুগমনের তীব্র সাধনার ভাবে জারিত এই গাইয়েদের কয়েকটি আসরে উপস্থিত থাকবার সৌভাগ্য আমার কপালে জুটেছিল।

দিল্লীতে আমার চাকরিটি আমার হাতে প্রচুর অবসর সময় এনে দিয়েছিল। পড়াশুনো করবার, ভাববার, এবং নয়াদিল্লীর জনবিরল রাজপথে হাঁটতে হাঁটতে আমি নিজের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখবার অবকাশ পেতাম। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা সন্ধ্যেগুলো আমি রাম স্বরূপের সান্নিধ্যে কাটাতে পেতাম। আমি দেখলাম যে তার অনুসন্ধান এখন আরো গভীরতর একটি বাঁক নিয়েছে। আগের মতোই ভারতের সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির হাল-হকিকত তার নখদর্পণে ছিল। কিন্তু তার এই অনুসন্ধিৎসা এখন এক সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা পেয়েছিল। তার কাছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলি আর আগের মতো স্রেফ বহিরঙ্গের শক্তি কিংবা মস্তিষ্কজাত ধারণাদের সংঘাত অথবা সমাহার রইল না, বরং তারা হয়ে উঠল কতকগুলি মানসিক অবস্থার প্রতিফলন, যে মানসিক অবস্থার মধ্যে কোনো একটি সমাজের সদস্যেরা থাকতে চায়। তার সিদ্ধান্ত ও বিচারগুলি এখন এমন একটি গভীরতা লাভ করেছিল যে সেগুলি বুঝে উঠতে পারা আমার পক্ষে প্রায়ই শক্ত হ’ত।

রাম স্বরূপ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধ্যানে ডুবে থাকতে লাগল। তার আলাপ-আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে উঠল বেদ, উপনিষদ, গীতা, মহাভারত এবং গৌতম বুদ্ধ। মাঝে মাঝে সে আমাকেও তার সঙ্গে ধ্যান অভ্যাস করতে আমন্ত্রণ জানাত। আমি চেষ্টা করতাম। কিন্তু আমি এতই অস্থির প্রকৃতির ছিলাম যে দীর্ঘ সময় ধ’রে একাসনে ব’সে, চোখ বুজে, বহির্বিশ্বের দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে এনে ভেতরের অপার শূন্যতার দিকে নজর দিয়ে নতুন নতুন ধারণা উপলব্ধির চেষ্টা করা আমার কম্ম ছিল না। তার চেয়ে বরং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে গরম গরম কথা লেখবার কাজে নিজেকে উজাড় ক’রে দিতেই আমি বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করতাম। কিন্তু আমার লেখা ছাপবে কে?

ঠিক এই সময়েই অর্গানাইজার পত্রিকার মৃদুভাষী এবং সদাহাস্য সম্পাদক শ্রী কে.আর. মলকানি নিজের পত্রিকার তরফ থেকে আনুকূল্যের হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। কয়েক বছর যাবৎ প্রায় নিয়মিতভাবেই আমি অর্গানাইজার-এ লেখালেখি করেছিলাম। আমার দীর্ঘ প্রবন্ধমালাগুলির মধ্যে একটি ছিল পণ্ডিত নেহরুর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে, যেটির কারণে শেষমেশ আমায় চাকরি খোয়াতে হ’ল। আমি অর্গানাইজার-এর জন্যে লিখি শুনে কয়েকজন বন্ধু ভ্রূকুঞ্চন করতেন। এঁদের প্রতি আমার বাঁধা উত্তর ছিল : তথাকথিত প্রসিদ্ধ সংবাদপত্রগুলির দরবারে সেলামি দিতে ছোটে তারাই, যাদের নিজস্ব কোনো মতামত নেই এবং স্রেফ মোটা মাইনে পেয়েই যারা খুশি। সে জায়গায় শ্রী মলকানি ছিলেন একজন অত্যন্ত বিবেকবান সম্পাদক। আমার সঙ্গে আগাম আলোচনা ছাড়া আমার কোনো লেখার একটি মাত্রা কি ফুটকি পর্যন্ত তিনি এদিক-ওদিক করতেন না।

ঐ একই সময়ে দিল্লীতে অপর যে মহৎ ব্যক্তিত্বটির সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল তিনি হলেন প্রখ্যাত হিন্দি ঔপন্যাসিক তথা হিন্দু সংস্কৃতির প্রবক্তা শ্রী গুরুদত্ত। খুব বেশি না ভেবেচিন্তেই মৃদুস্বরে আমার সদ্যসমাপ্ত একটি উপন্যাসের কথা আমি তাঁর কাছে পাড়লাম। তিনি কিন্তু তৎক্ষণাৎ বেশ উৎসাহের সঙ্গে আমার কাজের প্রতি আগ্রহ দেখালেন। আমি যা-ই লিখি না কেন, তা যাতে ছাপা হয় তা তিনি দেখবেন ব’লে আশ্বাসও যোগালেন। তিনি কথা রেখেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার কারণে তাঁর প্রকাশককে কিছুটা লোকসানের মুখ দেখতে হয়েছিল। তবে আপাত-কঠিন বহিরঙ্গের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই কোমল প্রকৃতির মানুষটির অন্তঃকরণ আমায় মুগ্ধ করেছিল। বয়সে তিনি আমার চাইতে কুড়ি বছরেরও কিছু বেশি বড় ছিলেন। এই শতকের[1] কুড়ির দশক থেকে শুরু ক’রে ঘ’টে চলা দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উত্থানপতনের সজাগ সাক্ষী ছিলেন মানুষটি। একেবারে নিজস্ব মতাদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী বিভিন্ন ঘটনা ও ব্যক্তিবর্গের সম্পর্কে একটি সুসংহত বিশ্লেষণ গ’ড়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে কখনোই অন্যদের উপর নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের বোঝা চাপিয়ে দিতে আমি দেখিনি। বরং দেখেছি যে তথ্য ও যুক্তির অবতারণার দ্বারা বিপরীত মতের প্রতি তাঁর প্রত্যয় জন্মাতে পারলে তিনি নিজস্ব মতামত পাল্টাতেও সদা প্রস্তুত থাকতেন। নবীন প্রজন্মের সঙ্গে তাদের মতো ক’রে মিশতে পারবার এক অসাধারণ ক্ষমতা তাঁর মধ্যে ছিল।

ঐ তিন-চার বছরে অবসর সময়ে সুযোগ পেলেই আমি আমার সংস্কৃতের বিদ্যেটি ঝালিয়ে নিতাম। এতে ক’রে আমি অনেকখানিই অগ্রসর হতে পেরেছিলাম, কারণ সেসময় হিন্দি বা ইংরেজি অনুবাদের সাহায্য ছাড়াই স্রেফ সংস্কৃত ভাষায় রচিত ভাষ্যগুলির সহায়তায় আমি বেশ দুরূহ কিছু গ্রন্থের মর্মোদ্ধার করতে পারছিলাম। অবশেষে আমি গীর্বাণ ভারতীতে[2] রচিত মূল মহাভারত গ্রন্থ পড়তে সক্ষম হলাম। গীতা প্রেস কর্তৃক চার খণ্ডে[3] প্রকাশিত সংস্করণটি এক্ষেত্রে খুবই কাজে লেগেছিল। আজ অব্দি ঐ পাঠের অভিজ্ঞতার তুলনা মেলা ভার।

সন্ধেবেলাগুলোয় যে দীর্ঘ সময়টা আমি রাম স্বরূপের সঙ্গে কাটাতাম, সেসময় আমি তার সঙ্গে মহাভারত সম্পর্কে আমার পর্যবেক্ষণগুলির তুলনামূলক আলোচনা করতাম। তবে রাম স্বরূপ মহাভারতকে একদম আলাদা দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করত। সে একেবারে বেদের সঙ্গে এর সংযোগ দেখাতে চাইত। তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই মহাকাব্যের শক্তিমান চরিত্রগুলি হ’ল বৈদিক ঋষিদের আধ্যাত্মিক দর্শনের মূর্ত এবং জীবন্ত রূপ। কিন্তু যা আমায় আরো বেশি ক’রে বিস্ময়বিমুগ্ধ করত তা হচ্ছে রাম স্বরূপ কর্তৃক মহাভারতে বিধৃত ধর্মের ব্যাখ্যা। আমি চিরকালই ধর্মকে নৈতিক মান, বাহ্যিক নিয়মকানুন, এবং কর্তব্য-অকর্তব্যের ব্যাপার ব’লে মেনে এসেছি, যেগুলি ইচ্ছাশক্তির জোরে জীবনে লাগু করতে হয়। এবারে আমায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হ’ল যে ধর্ম হচ্ছে মানুষের অস্তিত্বের গভীরতর বিধান; তার মানসিক বিবর্তন, তার আধ্যাত্মিক ক্রমোন্নতি, তার নিজের এবং নিজের সমাজের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি বাহ্যিক জীবন গ’ড়ে তোলবার এক বহুমাত্রিক গতিশীলতা।

এর ঠিক পরপরই যে কাজটিতে আমি হাত দিলাম তা হচ্ছে শ্রীঅরবিন্দের গুরুত্বপূর্ণ রচনাগুলি বারংবার ক’রে পাঠ এবং দিনের পর দিন রাম স্বরূপের সঙ্গে সেগুলির তাৎপর্য আলোচনা করা। যোগদর্শন সংক্রান্ত তাঁর অসংখ্য রচনার সঙ্গে পরিচিতি থাকা সত্ত্বেও আমার কাছে শ্রীঅরবিন্দ একজন দুর্বোধ্য দার্শনিকই থেকে যেতেন, যদি না রাম স্বরূপ আমায় ব্যাখ্যা ক’রে দেখিয়ে দিত কেন এই ঋষি আমাদের যুগে বৈদিক দর্শনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রবক্তা। সে আমায় বলেছিল যে শ্রীঅরবিন্দের বাণী আসলে সেই একই পুরাতন বৈদিক বাণী – যা আমাদের অন্তর্নিহিত দেবত্বের কথা বলে, এবং এ জগতে আমাদের দেবতুল্য জীবন যাপন করতে আহ্বান জানায়। শ্রীঅরবিন্দ ভৌতিক, প্রাণিক, মানসিক এবং অতীন্দ্রিয় বলতে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন সেকথা আমায় সে ব্যাখ্যা ক’রে বুঝিয়ে দিয়েছিল। সে দেখিয়েছিল যে এই পারিভাষিক শব্দাবলী আসলে উপনিষদের পঞ্চকোষের তত্ত্বের সঙ্গে জড়িত।

কিন্তু শ্রীঅরবিন্দ শুধু যে বৈদিক আধ্যাত্মিকতার প্রবক্তা ছিলেন তা নয়। তিনি ছিলেন একাধারে একজন কবি, রসজ্ঞ পণ্ডিত, দেশনেতা, এবং একজন উঁচুদরের সমাজতাত্ত্বিক। তাঁর রচিত হিউম্যান সাইক্‌ল্‌  গ্রন্থে ইতিহাসের ব্যাখ্যা এমন কায়দায় করা হয়েছে যে তাতে মানুষের বহির্জীবন ও অন্তর্জীবনে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ লাভ করবার চেষ্টাটিই জগত-পরিচালনার মুখ্য শক্তি হয়ে দেখা দিয়েছে। তাঁর রচিত ফাউন্ডেশন্স অফ ইন্ডিয়ান কালচার  নামক গ্রন্থটি প’ড়েই আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে আমাদের সুমহান আধ্যাত্মিকতা, শিল্পকলা, স্থাপত্য, সাহিত্য, সমাজনীতি ও রাজনৈতিক গঠনতন্ত্রের বহুমাত্রিক ঐতিহ্য একটিমাত্র কেন্দ্র থেকে উদ্ভূত এবং সেটির চারপাশে আবর্তিত হচ্ছে। সেই কেন্দ্রটি হচ্ছে সনাতন ধর্ম, যা ভারতবর্ষের অন্তরতম আত্মা। শ্রীঅরবিন্দ তাঁর উত্তরপাড়া সম্ভাষণে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন যে সনাতন ধর্মের উত্থান ঘটলে তবেই একমাত্র ভারতবর্ষের পুনরুত্থান সম্ভব; আর সনাতন ধর্ম লোপের অর্থ হচ্ছে ভারতবর্ষের বিলুপ্তি।

এই পর্যায়ে অন্য যে মহান লেখকের দ্বারা আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম তিনি হলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর লেখা সবকটি উপন্যাস আমি প’ড়ে ফেলেছিলাম, কিন্তু কেন যে তাঁকে ‘ঋষি’ অভিধায় ভূষিত করা হয়ে থাকে তা কখনো বুঝে উঠতে পারিনি। আমি নিজেও ছিলাম একজন ঔপন্যাসিক, এবং ততদিনে বেশ কয়েকটি মানবিক উপন্যাস লিখে ফেলেছিলাম। আমি জানতাম যে একজন ঔপন্যাসিক মনুষ্যচরিত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ক’রে থাকেন এবং মানবাত্মা কোন শীর্ষে আরূঢ় হতে পারে তথা কোন অতল খাদে পতিত হতে পারে সেই উত্থানপতনের গাথা নিজ লেখনীর মাধ্যমে চিত্রিত ক’রে তোলেন। এহেন ব্যক্তিকে আবার ‘ঋষি’ উপাধি দেওয়া কেন? এত সস্তায় এই উপাধি বিতরণ চলতে থাকলে তো গণ্ডায় গণ্ডায় ঋষিদের দেখা মিলবে। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রের ঋষিত্ব সংক্রান্ত আমার যাবতীয় সংশয় ঘুচে গেল তাঁর সমগ্র রচনাবলীর দ্বিতীয় খণ্ডটি মূল বাংলায় পড়বার পর। হিন্দু সংস্কৃতির অন্তরতম সত্তা সম্পর্কে তাঁর অন্তর্দৃষ্টির যে পরিচয় সেখানে পেলাম তা ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর। তাঁর রচিত রামায়ণের আলোচনা  পড়বার ফলে আধুনিক ভারততত্ত্ব যেসকল অস্বাভাবিক বিকৃতির জন্ম দিয়েছে, সেগুলি আরো স্পষ্ট ক’রে আমার চোখে ধরা পড়ল। তৎক্ষণাৎ আমি এই অপূর্ব গ্রন্থটি হিন্দিতে অনুবাদ ক’রে ফেললাম।

অনেককাল আগে আমি রোম্যাঁ রোল্যাঁ রচিত শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জীবনী পড়েছিলাম। সেসময় স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক প্রদত্ত “মাই মাস্টার” শীর্ষক বক্তৃতাটিও পড়বার সুযোগ হয়েছিল। একবার দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের কক্ষটি দর্শন করতেও গিয়েছি। তাঁর জীবন নিয়ে নির্মিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র দেখবার সুযোগও ঘটেছিল। কিন্তু তাঁর কথামৃত  পাঠ করবার মাধ্যমে আমি যেন এই মহাযোগী, ভক্ত, শাক্ত তথা অদ্বৈতবাদী মহাপুরুষের সংসর্গ ও নৈকট্য অনুভব করতে পারলাম। তাঁর দৈনন্দিন আলাপচারিতায় একবারের জন্যও তিনি কোনো দুরূহ তত্ত্ব অথবা দার্শনিক মতের অবতারণা করেননি। সাধারণ মানুষের চেতনা বলতে যা বোঝায় সেই ধূলিধূসরিত মলিনতা ও জড়তার লেশমাত্র নেই এমন এক শুদ্ধচৈতন্যই তাঁর আলাপচারিতায় মূর্ত হয়ে ধরা দিত। এই শুদ্ধচৈতন্য হতে উৎসারিত উপমা ও রূপকগুলি প্রয়োগের যথাযথতায় ছিল তুলনাহীন; এবং মাত্র কয়েকটি কথায় এরা এমন সব জটিল সমস্যার উপর আলোকপাত করত যাদের গ্রন্থি খুলতে অসংখ্য বিপুলায়তন গ্রন্থও ব্যর্থ হয়েছে। সেই প্রথম আমি অমৃতের হাতছানি টের পেলাম, যার প্রতি এককালে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন কবীর, নানক এবং শ্রীগরীবদাস।

এই পর্যায়ে আমার সর্বশেষ উপলব্ধিটি ঘটে গেল ১৯৫৯ সাল নাগাদ অর্গানাইজার পত্রিকায় রাম স্বরূপের দীর্ঘ প্রবন্ধ “বুদ্ধিজম ভিস-আ-ভি হিন্দুইজম”[4] পড়বার পর। ভগবান বুদ্ধের একটি নীতিমূলক কাহিনীতে একজন তীরবিদ্ধ ব্যক্তি ততক্ষণ অব্দি নিজের চিকিৎসা করাতে রাজি হচ্ছিল না, যতক্ষণ না সে তার সমস্ত বৌদ্ধিক প্রশ্নের জবাব পেয়ে নিজ কৌতূহল সম্পূর্ণরূপে মেটাতে সক্ষম হয়। এই কাহিনীটি যেন একেবারে আমার মণিপুর চক্রে গিয়ে ঘা দিল। এতকাল আমি সারাজীবন ধ’রে কেবল বৌদ্ধিক বিচার ও অনুশীলনেই তৃপ্তিলাভ করেছি। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ কী? এর মধ্যে মানুষের স্থান ঠিক কী? ঈশ্বর আছেন না নেই? তিনিই কি এই জগত সৃষ্টি করেছেন? যদি ক’রে থাকেন তাহলে জগতের এমন দুরবস্থা কেন? মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য কী? সেই উদ্দেশ্য সাধন করবার কাজে মানুষ ঠিক কতটা স্বাতন্ত্র্য উপভোগ করে? নাকি তার ইচ্ছার অতিরিক্ত কোনো শক্তির দ্বারা সে একটি বিশেষ লক্ষ্যের দিকে চালিত হবার জন্য পূর্ব থেকেই নিয়তিনির্দিষ্ট? এইরকম সব হাজারো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ক্রমাগত মস্তিষ্ক চালনাই কেবল ক’রে এসেছি। ভগবান বুদ্ধ একে ‘দৃষ্টিকান্তার’ অর্থাৎ অনুসন্ধানের মরুভূমি ব’লে বর্ণনা করেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেবও বৌদ্ধিক বিচার-বিশ্লেষণকে একখানি নুনের পুতুল ব’লে পরিহাস করেছিলেন, যে কিনা একবার মহাসমুদ্রের গভীরতা মাপতে গিয়েছিল, কিন্তু প্রথমবার ডুব দিয়েই সাগরের জলে সে গ’লে যায়।

এবারে আমি নিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করলাম যে আমার উত্থাপন করা প্রশ্নগুলির মান আমার চেতনা কোন স্তরে আছে তার দ্বারাই নির্ধারিত হচ্ছে। রাম স্বরূপ আমায় জানাল যে ঠিক ঠিক প্রশ্ন ও তার ঠিক ঠিক উত্তর পাওয়ার চাবিকাঠি চেতনার যে স্তরে লুক্কায়িত আছে, সেই স্তরে পৌঁছতে গেলে প্রথমে মনুষ্যচেতনার সাধারণ স্তর বলতে যা বোঝায় সেটিকে অতিক্রম করতে হবে। হাজারো প্রশ্ন এবং কৌতূহল চরিতার্থ করবার চেষ্টায় মনুষ্যচেতনার সাধারণ স্তরটিকে আলোড়িত-বিক্ষুব্ধ করতে থাকলে তার অপর পারে সতত অপেক্ষারত উচ্চতর শুদ্ধচৈতন্যের স্তরে পৌঁছোবার পথটি কেবল অবরুদ্ধ করাই হয়।

তখন আমি ধ্যানযোগ অভ্যাসের সাধনায় আমাকে দীক্ষিত করবার জন্য রাম স্বরূপকে অনুরোধ করলাম। সে বলল যে এ সাধনায় খুব কঠিন কিছু অভ্যাস করবার দরকার পড়ে না। আমি যখন খুশি তার সঙ্গে ধ্যানে বসতে পারি। তারপর ধৈর্য সহকারে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, এক একবারে নিজের অন্তরতর সত্তার গভীরে কতদূর অব্দি যাওয়া সম্ভব হ’ল তা লক্ষ্য করতে হবে; যা কিছু শুভকর ও মঙ্গলপ্রদ চিন্তা উত্থাপিত হয় সেগুলির উপর অভিনিবেশ করতে হবে, তাহলে বাকিটা আপনা থেকেই হয়ে যাবে। মনের ভিতর বেশ কিছু সংশয় নিয়েই আমি তার এই সরল নির্দেশগুলি পালন করতে লাগলাম। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই ফল পেতে শুরু করায় ধ্যান অভ্যাসের জন্য আমার উদ্যম এবং উৎসাহ দুই-ই বেড়ে উঠল।

একদিন আমি ধ্যান করতে আরম্ভ করলাম অহিংসার ধারণাটির উপর, যা এতকাল আমার কাছে স্রেফ একটি দুরূহ এবং বিমূর্ত বিষয় ছিল। কিছুক্ষণ বাদে দেখতে পেলাম যে আমি মনে মনে সেই সকল ব্যক্তির কাছে ক্ষমাভিক্ষা চেয়ে চলেছি যাদের আমি কখনো না কখনো কোনো না কোনো ভাবে আমার কাজে কিংবা কথায় আহত করেছি, অথবা যাদের প্রতি কোনোরকম বিরূপ মনোভাব পোষণ করেছি। এ কোনো সর্বজনীন ক্ষমা চাইবার মতো ব্যাপার ছিল না। সুদূর অতীত থেকে শুরু ক’রে একে একে প্রত্যেকটি ব্যক্তির ছবি আমার সামনে ভেসে উঠতে লাগল, আর আমি অনুতাপ ভ’রে তাদের প্রত্যেকের সামনে ক্ষমাভিক্ষা ক’রে অবনত হতে থাকলাম। এমনকী আমি শেষ পর্যন্ত স্তালিনের কাছেও ক্ষমা চাইলাম, যার বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা ক’রে আমি এত লেখালেখি করেছি এবং যার উদ্দেশ্যে অজস্র বিরূপ মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছি। যে তিক্ততা আমার জীবনকে এত বছর যাবৎ বিষিয়ে তুলছিল, তা যেন অকস্মাৎ স্নায়বিক চাপমুক্ত হবার মতো ক’রে এক লহমায় আমার মন থেকে মিলিয়ে গেল। মনে হ’ল যেন একজন সুনিপুণ চিকিৎসক বিন্দুমাত্র যন্ত্রণা না দিয়েই আমার শরীরকে পীড়িত করতে থাকা সহস্র কাঁটা তুলে ফেললেন। লক্ষ্যে পৌঁছোবার জন্য এই পথই যে সঠিক পথ, সে ব্যাপারে আমার মনে আর বিন্দুমাত্র সন্দেহ রইল না।

একদিন রাম স্বরূপকে জানালাম যে সরস্বতী, লক্ষ্মী, দুর্গা কিংবা কালী – কোনো রূপেই দেবীকে আমি কখনো স্বীকার করতে সক্ষম হইনি। সে হেসে আমায় বললে সেইদিন যেন আমি দেবীকে ধ্যান করি। আমি নিজের মতো ক’রে খুব চেষ্টা করলাম। অনেকক্ষণ অব্দি কিছুই ঘটল না। কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না, মনটা যেন এক অপার শূন্যতা – এমন বোধ হচ্ছিল। কিন্তু পরমুহূর্তেই ঐ শূন্যতাকে ভরাট ক’রে এক মহিমান্বিত সত্তার উপস্থিতি অনুভব করলাম। না, আমি কোনো স্পষ্ট ছবি দেখতে পাইনি। এমনকী কেউ আমার কানে কানে কোনো শব্দও দিয়ে যায়নি। তাসত্ত্বেও স্পষ্ট টের পেলাম যে একটা গোটা জীবনব্যাপী বয়ে চলা গোঁড়ামি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল এবং অন্তর্হিত হ’ল। মা মহামায়া যেন তাঁর পথভোলা সন্তানকে হাতছানি দিয়ে ডেকে নিজের কোলে বসালেন ও তাকে সবরকমভাবে অভয় দিলেন। আমাদের কাছে ডঃ গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ের উদাত্ত কণ্ঠে গীত দেবীস্তুতির একখানা গ্রামোফোন রেকর্ড ছিল। সেইটি চালিয়ে দিয়ে আমি দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা শুরু করলাম।

এমনি ক’রে আরো বহুবার ধ্যান করবার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এই পথে আমি দ্রুত অগ্রসর হতে পারিনি, বেশিদূর যেতেও পারিনি। কিন্তু আমি নিশ্চিত হলাম যে এই সেই পথ, যা ধ’রে এগোলে আমি সেই সমস্ত মহান সত্যগুলি নিজে নিজেই পুনরাবিষ্কার করতে সমর্থ হব, যেগুলির কথা আমাদের পূর্বপুরুষগণ হিন্দু শাস্ত্রগ্রন্থে উদ্ধৃত ক’রে গেছেন। এ কোনোমতেই আমার অনুসন্ধানের সমাপ্তি ছিল না, সত্যি বলতে প্রকৃত অর্থে অনুসন্ধান তো সবে শুরু হয়েছিল। কিন্তু যে কূলে আমার জীবনতরীটি ভিড়িয়ে নিশ্চিন্তে নোঙর ফেলে এযাবৎ আমার যাত্রার অবস্থার পর্যালোচনা করতে পারব, এমন কূলের খোঁজে আমার আকুল সন্ধান অবশ্যই শেষ হয়েছিল।

রাম স্বরূপ আমায় বারংবার সতর্ক ক’রে দিয়ে বলেছিল আমি যেন কখনোই অন্তঃকরণের এই প্রশান্ত অভিজ্ঞতার প্রভাবের ফলে আমার বিচারবুদ্ধি ও যুক্তিসত্তাকে বিসর্জন দিয়ে না বসি, তা সে প্রশান্তি যতই গভীর ও নিখাদ হোক না কেন। সে বলেছিল যে এই ফাঁদে পা দিয়েই অনেক সাধক ঐ প্রশান্তিকে চরম লক্ষ্যবস্তু ভাববার ভুল ক’রে বসেন, যেখানে প্রকৃতপক্ষে তাঁরা তখনো লক্ষ্যবস্তু থেকে সহস্র যোজন দূরে।

সেমিটিক ধর্মপ্রণেতাদের কাহিনীটি আরোই মর্মন্তুদ, বিশেষ ক’রে মোজেস এবং মহম্মদের। মনুষ্যচেতনার স্বাভাবিক মলিনতাগুলি দূর করে সে চেতনাকে প্রসারিত ও সূক্ষ্মতর করবার যোগদর্শন সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ধারণাও তাঁদের ছিল না। একটি বাহ্যিক অথচ শক্তিশালী মতাদর্শ তাঁদের পেয়ে বসেছিল, তাঁদের মন্ত্রমুগ্ধ ক’রে রেখেছিল। অবিরত সেই মতাদর্শের অনুধ্যান করা ও সেটির প্রতি অন্ধ আনুগত্যের ফল হিসেবে তাঁরা ঐ মতাদর্শটির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। এই মতাদর্শের স্বরকেই তাঁরা ঈশ্বরের বাণী ব’লে ধ’রে নেন, এবং শেষ পর্যন্ত এরই ফলে সত্যের উপর নিজেদের, এবং সদাচার ও নৈতিক গুণাবলীর উপর আপন অনুগামীদের একাধিপত্যের দাবী ক’রে বসেন। সেদিক দিয়ে দেখলে যীশুখ্রিষ্ট সেই অর্থে সেমিটিক ধর্মপ্রণেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন যোগী, একজন অধ্যাত্ম-জিজ্ঞাসু। কিন্তু তাঁর বিশ্বজনীন বাণী শীঘ্রই পল[5] এবং খ্রিষ্টীয় চার্চের অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতাদের একাধিপত্যকামী ধর্মতত্ত্বের তলায় চাপা প’ড়ে যায়। এঁদেরকেও একখানি বাহ্যিক অথচ শক্তিশালী মতাদর্শ পেয়ে বসেছিল।[i]

আমি জানলাম যে পরম সত্য, পরম মঙ্গল, পরম সুন্দর ও পরম শক্তিকে লাভ করবার যে ক্ষুধা আত্মার মধ্যে রয়েছে, তা শরীরের পুষ্টিকর খাদ্য ও পানীয় লাভ করবার ক্ষুধার সমতুল্য। আর মানবাত্মার সেই ক্ষুধাকে দেশকাল নির্বিশেষে সম্পূর্ণভাবে ও চূড়ান্তভাবে যদি কেউ চরিতার্থ করতে সক্ষম হয়ে থাকে তবে তা হ’ল সনাতন ধর্ম। সনাতন ধর্মের অনুসারী ব্যক্তিকে যেন তেন প্রকারেণ নিজের ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ ক’রে কোনো একটিমাত্র গ্রন্থে লিপিবদ্ধ অতিপ্রাকৃত দৈব প্রত্যাদেশের উপর অন্ধ বিশ্বাস স্থাপন করতে হয় না। মোক্ষলাভের জন্য কোনো ঐতিহাসিক ধর্মপ্রণেতার মধ্যস্থতা অথবা কোনো সংগঠিত চার্চের সাহায্যের দরকারও তার পড়ে না। সনাতন ধর্ম বরং নিজের অনুসরণকারী ব্যক্তিকে প্রথমেই আত্মানুসন্ধান করবার জন্য আহ্বান জানায় এবং শাস্ত্রে বর্ণিত সত্যগুলি নিজে হাতে যাচাই ক’রে দেখতে বলে। ধর্মপ্রণেতা, চার্চ এবং শাস্ত্রগ্রন্থ তার সহায়ক হ’লেও হতে পারে; কিন্তু এগুলি আত্মানুসন্ধান, আত্মশুদ্ধি ও আত্ম-অতিক্রমণের বিকল্প কখনোই হতে পারে না।

অবশেষে আমি ফিরে এলাম। ফিরে এলাম আমার সেই আধ্যাত্মিকতার স্বগৃহে, আত্মবিস্মৃতির কারণে যেখান থেকে আমি বহুদূরে, নিরুদ্দেশে চ’লে গিয়েছিলাম। কিন্তু এই ফেরা নিছক পূর্বজদের অনুকৃতি ছিল না। বরং একেবারে তার উল্টোটা। এ ছিল আমার পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্যের প্রতি পুনরায় সজাগ হয়ে ওঠা, যে ঐতিহ্য চিরকাল আমার অপেক্ষায় ছিল – কখন এসে আমি তার দাক্ষিণ্যের উপর নিজের দাবী জানাবো সেই অপেক্ষায় সে রত ছিল। এ ঐতিহ্য সমগ্র মানবজাতির – নানান দেশের নানা কালের মুনি, ঋষি এবং যোগীগণ বারংবার সেকথার প্রমাণ দিয়ে গেছেন। এ ঐতিহ্য ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির কাছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় প্রকাশ পায়। আমার কাছে এটি হিন্দু আধ্যাত্মিকতা এবং হিন্দু সংস্কৃতির সর্বোচ্চ পর্যায়ের ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল। এর ডাক আমি ফেরাতে পারিনি। আমি একজন হিন্দু হয়ে উঠলাম।

 পাদটীকা

[1] বিংশ শতক

[2] অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা

[3] বর্তমানে গীতা প্রেস (গোরক্ষপুর) কর্তৃক প্রকাশিত সমগ্র মহাভারত মোট ছয় খণ্ডে লভ্য

[4] হিন্দুধর্মের আলোকে বৌদ্ধ মত

[5] সেন্ট পল; যীশুর বারোজন শিষ্যের অন্যতম এবং ক্যাথলিক চার্চের প্রতিষ্ঠাতা।

[i] এই কথাগুলি যেসময় লিখেছিলাম, তার পরবর্তীকালে যীশুর সম্পর্কে আমার মত পাল্টে গিয়েছে। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত অধ্যয়ন করবার পর আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে তিনিও একজন মার্কামারা সেমিটিক ধর্মপ্রণেতাই ছিলেন, এবং খ্রিষ্টধর্ম তাঁরই উত্তরাধিকার বহন করছে, পলের নয়। – সীতারাম গোয়েল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.