চোরাই বন্দুক বেচতে ওয়েবসাইট! লালগড় অস্ত্রচুরি কাণ্ডে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের

অনলাইন শপিংয়ের মতো বন্দুক কেনাবেচা করতেও ওয়েবসাইট! যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পছন্দসই বন্দুক দেখে নেওয়া ছাড়াও মিলছে লাইসেন্সও। দেশজুড়ে এবিস্ফোরক তথ্য কাধিক রাজ্যের বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক ও ডেপুটি কালেক্টরেটের ভুয়ো স্ট্যাম্প বানিয়ে চলছে এই বেআইনি বন্দুক কারবার। জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার কেন্দায় ছ’মাস আগের আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের ঘটনায় লালগড় থানার বন্দুক মাওবাদীদের কাছে পাচার-সহ এই তথ্যও হাতে এল রাজ্যের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) কাছে। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই বিভিন্ন রাজ্যের দুষ্কৃতি গ্যাং ছাড়াও বাহুবলীদের কাছে বেআইনি বন্দুক পাচার হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সেই ওয়েবসাইটের আবেদন পত্র ঘেঁটে এখন সেইসব বেআইনি বন্দুকের খোঁজ করছে এসটিএফ। এই ঘটনায় গত বুধবার বিহার থেকে ধৃত মাও লিঙ্ক ম্যান রবিকান্ত কুমারকে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া আদালতে তোলে রাজ্যের ওই বাহিনী। ধৃতের সাত দিন পুলিশ হেফাজত হয়েছে।

এসটিএফ-র আইজি অজয় নন্দা বলেন, “ওয়েবসাইট খুলে আন্ত: রাজ্য বন্দুক পাচার চক্র চলার তথ্য হাতে এসেছে l ওয়েবসাইট খুলে বন্দুক পাচারের ঘটনা এই প্রথম l ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছেl” লালগড়ের উদ্ধার হওয়া বন্দুক পুরুলিয়ার চন্ডী কর্মকারের কাছ থেকে কেনে এই বন্দুক পাচার কারবারিরা বলে এসটিএফ জানিয়েছে l

পু্‌লিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এসটিএফের দুই ইন্সপেক্টর তীর্থেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় ও অমিতাভ দাসের নেতৃত্বে সাতজনের একটি টিম গত মঙ্গলবার রাতে বিহারের ঔরঙ্গাবাদে রবিকান্তের ডেরায় হানা দেয়। ওবরা থানার শান্তিনগর এলাকায় বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে লালগড় থানার মালখানা থেকে দু’টি বন্দুক ছাড়াও একাধিক ভুয়ো বন্দুকের লাইসেন্স, ফাঁকা লাইসেন্সের ফর্ম, ভারত সরকারের আইকার্ড উদ্ধার হয়েছে। সেই সঙ্গে ধৃতের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে দেশের একাধিক রাজ্যের বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক ও ডেপুটি কালেক্টরেটের ভুয়ো স্ট্যাম্প। এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধৃত রবিকান্ত ও তার চক্রের সঙ্গে বেআইনি বন্দুক প্রস্তুতকারকদের যোগ রয়েছে। এই চক্রের মাধ্যমেই দেশের বিভিন্ন দুষ্কৃতি গ্যাং ও বাহুবলীদের হাতে খুব সহজেই বেআইনি বন্দুক পৌঁছে যেত। এমনকি বহু নিরাপত্তা সংস্থার সিকিউরিটি গার্ডও এই ভুয়ো লাইসেন্সের বন্দুক কিনেছে এই চক্রের কাছ থেকে।

চলতি বছরের গত ১২ জানুয়ারি পুরুলিয়া–মানবাজার রাস্তায় কেন্দা থানা এলাকায় একটি অ্যাম্বাসাডারের সিটের তলা থেকে পাচার হওয়া বন্দুক উদ্ধার করে ওই গাড়ির চালক-সহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। তার মধ্যে ছিল একসময়ের বন্দুক কারবারী পুরুলিয়ার স্টেশন পাড়ার বাসিন্দা চন্ডী কর্মকার। এখন অবশ্য ওই কারবারী জামিনে ছাড়া পেয়েছে। শহর পুরুলিয়ার হাটের মোড়ে একটি বন্দুকের দোকান ছিল তাঁর। সেই দোকান থেকেই এই বন্দুক পাচার কারবারে হাত পাকায় প্রৌঢ় চন্ডী। তাকে জেরা করেই সম্প্রতি ঝাড়খন্ডের হাজারিবাগ থেকে চিরঞ্জীবি ওঝাকে গ্রেপ্তার করে। ওই সূত্র ধরেই ধৃত রবিকান্তকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে এসটিএফ জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.