বীরনারায়ণ সিং- এক ভারতীয় জমিদার যিনি অহিংসার পরিবর্তে হিংসাকে বেছে নিয়ে ইংরেজদের দেখিয়েছিলেন তরোয়ালের শক্তি

ভারতবর্ষের হৃৎপিণ্ড হিসেবে পরিচিত বঙ্গদেশে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের যে স্ফুলিঙ্গ উঠেছিল, তা ধীরে ধীরে পুরো ভারতে আগুন রূপে ছড়িয়ে পড়ছিল। ছত্রিশগড়েও (Chhattisgarh) ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম বড়ো রূপ ধারণ করে নিয়েছিল। ছত্রিশগড়ে বেশকিছু মহাপুরুষ জন্ম নিয়েছিলেন যারা অহিংসার পরিবর্তে সশস্ত্র সংগ্রাম করতে মাঠে নেমেছিলেন। বহুজন দেশের জন্য নিজের প্রাণ বলিদান দিতেও পিছুপা হননি। এর মধ্যে বীরনারায়ণ সিংহের (Veer Narayan Singha) নাম বিশিষ্টভাবে সবার আগে আসে। শহীদ বীরনারায়ণ সিংহের জন্ম ১৭৯৫ সালে সোনাখানের জমিদার পরিবারে হয়েছিলেন।

সোনাখান রাজত্ব সপ্তদশ শতাব্দীতে সরানগড় জমিদার বংশধর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। সোনখানের প্রাচীন নাম ছিল সিংগড়, সেখানকার সোনার খনি সম্পর্কে তথ্যের পরে সেই জায়গার নাম সোনাখান হয়ে যায়।

বীরত্বের কারণে ব্রিটিশ সরকার সোনাখানের যুবরাজ নারায়ণ সিংহকে “বীর” উপাধিতে ভূষিত করেছিল। কথিত আছে যে যুবরাজ নারায়ণ সিং তাঁর ঘোড়ায় চড়ে এলাকা দেখাশোনা করতে যেতেন।একবার তিনি তাঁর এলাকায় এক নরখাদক সিংহের কথা জানতে পেরেছিলেন, যার সন্ত্রাস লোকজন আতঙ্কিত হয়েছিল।

যুবরাজ নারায়ণ সিংহ সেই নরখাদকটি খুঁজে পেয়েছিলেন এবং তার তরোয়াল দিয়ে সিংহ টিকে কেটে ফেলেন। এর পর থেকেই উনি বীর উপাধি পেয়েছিলেন। ইংরেজরা ভারতের সম্পত্তি লুটে নিয়ে যাচ্ছে এটা দেখার পর যুবরাজ নারায়ণ সিংহ সংগ্রাম শুরু করে। উনি তত এলাকায় ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন শুরু করে দেন। প্রজাদের উপর ইংরেজদের অত্যাচার দেখার পর বীরনারায়ণ সিং বন্ধুকধারী সেনা বাহিনী তৈরি করেন। এই সেনারা ইংরেজদের গুদাম লুট করে সেই অর্থ প্রজাদের মধ্যে বিতরণ করে দিত।

বীর নারায়ণ সিং এর এমন কান্ড দেখে ইংরেজরা ভয়ভীতি হয়ে পড়েছিল। স্থানীয় কৃষক, কোল, ভিল, মুন্ডা সকলে মিলে বীর নারায়ণ সিং এর সাহায্য করে। তরোয়াল ও বন্ধুকের জোরে ছত্রিশগড়ে ইংরেজদের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিলেন বীরনারায়ণ সিং। এরপর ব্রিটিশ সরকারের কমিশনার এলিয়ট, ক্যাপ্টেন স্মিথকে বীর নারায়ণ সিংহকে ধরার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন স্মিথ অন্যান্য ভারতীয় জমিদারদের সাহায্যে বীর নায়ায়ন সিংকে ধরে ফেলে। বীর নারায়ণ সিংয়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা চাপিয়ে জয়স্তম্ভ চৌককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল এবং তার দেহটি পরে একটি কামান দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এভাবেই আজকের দিনে অর্থাৎ ১০ই ডিসেম্বর ১৮৫৭ সালে ভারতের এক মহান দেশপ্রেমিকের জীবনকাল শেষ হয়েছিল। আজ এই মহান ব্যাক্তির বলিদানি দিবসে জানাই কোটি কোটি প্রণাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.