বারাণসী হতে চলেছে ভারতের সবথেকে উন্নত ঐতিহ্যবাহী স্মার্ট সিটি! নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব শুরু হয়েছে দুরন্ত কাজ।

বারাণসীর (Varanasi) ইতিহাস ইতিহাসের থেকেও প্রাচীন আর এই কথাটি ইংরেজি লেখক লেখক mark twain বলেছিলেন। আজকে স্মার্ট সিটির ব্যাপারে কিছু প্রাচীন শহরের মহান ঐতিহাসিকতা ও ঐতিহ্যগত উপাদানসমূহকে ধরে রেখে উন্নয়ন করা খুব কঠিন।  অনেক বছর ধরে বারাণসীর উন্নয়নের জন্য কোনো কার্য করা হয়নি যার জন্য ক্রমাগত উন্নতি হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে বা থেমে গেছে বলেই চলে। পূর্ববর্তী সরকার দ্বারা কাশির সাথে অন্য প্রাচীন শহর গুলির উপর নজর না দেওয়ায় আজকে এরকম অবস্থা যে বিজয়নগর ও হাম্পির মতো শহর জীর্ণ হওয়ার অবস্থায় আছে। ২০১৪ এর পর নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্র সরকার হওয়ার পর ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের পুনরুজ্জীবনের উপর আরো বেশি নজর দেওয়া হলো। নিজে নরেন্দ্র মোদী এই লক্ষের কারণে বারানসীকে নিজের সংসদীয় এলাকা হিসাবে বেছে নিয়েছিল। কেন্দ্র সরকারের শহর বিকাশ মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল হেরিটেজ সিটি ডেভেলপমেন্ট এন্ড এগমেটেশন পরিকল্পনার শুরু ২১ জানুয়ারি ২০১৫ তে করেছিল। এই পরিকল্পনার লক্ষ দেশ জুড়ে থাকা ঐতিহাসিক ভবনের সংরক্ষণ তথা তার পুনঃউদ্ধার করে। এর অধীনে ১২টি শহরের নির্বাচন করা হয়েছে। যারমধ্যে আজমের,অমৃতসর, বাদামী, দ্বারকা,গয়া,কাঁচিপুরোম,মথুরা, পুরী, বারাণসী, বেলঙ্কননী ও   ওয়ারাঙ্গাল এর ঐতিহাসিক ভবনের পুনঃউদ্ধার করা হয়। এই কাজগুলি একেবারে শেষ পর্যায়ে চলছে।

বর্তমান সরকার স্মার্ট সিটি বিকশিত করার অর্ডারে সেই শহরের পুরাতন গুরুত্ব ধরে রাখার সম্পুর্ন চেষ্টা করছে। এই বিষয় কাশিরর উপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। এক রিপোর্ট অনুযায়ী নতুন মেট্রো নীতির মান অনুযায়ী বারাণসী ও গোরক্ষপুরে মেট্রোর সঞ্চালন শুরু করা সম্ভব নয়। নতুন মেট্রো নীতি অনুযায়ী দুটি শহরেই সংকীর্ণ গলির কারণে  মেট্রোর সঞ্চালন সম্ভব নয় এবং সরকারের জন্য এটি লোকসানের সম্মুখীন হবে। এই কারণে কেন্দ্রীয় বাসস্থান ও শহরী কার্য মন্ত্রালয়ে দ্বারা বারাণসী ও গরোক্ষপুর এই দুটি শহরে মেট্রোর স্থানে কোনো অন্য বিকল্পের ব্যাপারে বিচার করছে। আর এই অন্য ভালো বিকল্প হলো  রোপ ওয়ে।

গত বছর নভেম্বরে নিতিন গডকারী এক বৈঠকে বলেছিল যে রোপ ওয়ে বা কেবল কার ভিড় বহুল শহর গুলিতে কানেক্টিভিটি বিকল্প হতে পারে। এই বিকল্প বারাণসীর মতো শহরে কার্যকর প্রমাণিত হবে। এর জন্য বারাণসীতে পরিকল্পনা মোটামুটি শুরু হয়ে গেছে। সরকার স্মার্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট সার্ভিল্যান্স সিস্টেম ও স্মার্ট পার্কিংকে মিলিয়ে ‘পরিবহন সংগম’ নাম দিয়েছে যার অধীনে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যাটফর্মের বিকাশ ও বুদ্ধিগম্য বানানো হবে। যদি কেন্দ্র ও প্রদেশের যোগী সরকারের এই চেষ্টা সফল হয় আর যদি বারাণসীতে রোপ ওয়ে ব্যাবস্থা তৈরি করা হয়,তবে বারাণসী দেশের প্রথম শহর হবে যেখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের রূপে রোপ ওয়ে শুরু হবে।

এই মামলায় বিকাশ কর্তৃত্বের নগর পরিকল্পক মনোজ কুমার রবিবার বলেন রোপ ওয়ের জন্য  এক কোম্পানি ডেভেলপমেন্ট সার্চ করে পুরোনো কাশির এক প্রান্ত রাজঘাট থেকে মাধোদরী, বিশ্বেসরগঞ্জ, মৈদাগীন, চৌক,  গৌদলীয়া, সোনারপুর, অসসি, হয়ে দ্বিতীয় প্রান্ত অসসি ও বিএচইউ অব্দি প্রথম রুট স্থায়ী করেছে। শহরের এই অংশটি সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা আছে এবং এখানে জ্যাম এর সমস্যা সবচেয়ে বেশি। অন্য রুটটি বিএচইউ ও কেন্ট থেকে মলদহিয়া, লোহুরাবীর হয়ে মৈদাগীন অব্দি প্রস্তাবিত।ডোপেলমের পায়লট প্রজেক্টের অধীনে একটি রুটে ব্যাবস্থা শুরু করতে বলেছেন।

রোপ ওয়ে প্রজেক্ট মেট্রো থেকে অনেক বেশি গুন সস্তা হবে। যেখানে মেট্রোয় এক কিলোমিটার নির্মাণের জন্য ৩৫০ কোটি খরচা হয়, সেখানে রোপ ওয়ে বা কেবল কার  মাত্র ৫০ কোটি টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। এটি স্থির করা হয়েছে যে আরআইটিইএস ( রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল সার্ভিস) ও পরিবহন আধারিত গঠনের এলাকায় বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্সি কোম্পানি এই প্রজেক্টের দেখাশোনা করবে। অস্ট্রিয়ার ডোপেলমের পৃথিবীর সব থেকে বড় রোপ ওয়ে নির্মাণকারী কোম্পানি যার কাছে আধুনিক রোপ ওয়ে টেকনোলজি আছে। এই কোম্পানি বিশ্বে ১৫০০০ এর বেশি রোপ ওয়ের স্থাপনা করেছে।রোপ ওয়েকে বরুন ও গঙ্গা জল পরিবহন থেকে যুক্ত করার পরিকল্পনাও আছে। এতে বরুনের দুটি রিভার এর সদরে রোপ ওয়ে এবং শহরের পুরোনো ও নতুন অংশকে যুক্ত করা বাবতপুর এয়ারপোর্ট রেলওয়ে সেটেশন অব্দি কেবল কার এর সঞ্চালনের  রূপরেখা বানানো হচ্ছে। রোপ ওয়ে ও জল পরিবহন এর সাথেই  ফিডর বস সেবা যুক্ত করা হবে।

এর আগে গঙ্গার ঢেউয়ে যাত্রী জাহাজ ( ফেরী সার্ভিস) চালানোর জন্য গঙ্গা ওয়াটার হাইওয়ের আগে মাল্টি-মডেল বারাণসী টার্মিনাল থেকে রাজঘাটের মধ্যে পাসেঙ্গের প্লাটফর্ম বানানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। কাশি বিশ্বনাথ মন্দির বিস্তারিকরণের অধীনে ৩৯ হাজার বর্গ মিটার এরিয়ায় তৈরি হওয়া বিশ্বনাথ করিডোর (বিশ্বনাথ ধাম) ফেরী সার্ভিসের প্রধান কেন্দ্র হবে। ললিতা ঘাট অব্দি করিডোর নির্মাণের পর সেখান থেকে সোজা  মন্দিরের সংযোজন হবে। তখন ফেরী সার্ভিসের মাধ্যমে পূর্নাথীরা সহজেই রাজঘাট  বা খিরকিয়াঘাট, ও দ্বিতীয় ছোড়ে রামনগর থেকে সোজা ললিতঘাটে নেমে সেখান দিয়ে মন্দিরে যেতে পারবে। ওনাদের শহরের জ্যাম এর সমুখীন হতে হবে না। এছাড়া এটি ভ্রমণব্যবস্থাকে সাহায্য করার জন্য যোগী সরকার নদীর সৌন্দর্যের উপরও কাজ করছে।

গত পাঁচ বছরে যেই ভাবে বারাণসীতে বিকাশ হয়েছে তা বারাণসীর নবজীবন ঘটিয়েছে ও সেখানের জনতাও মোদী সরকার দ্বারা করা ক্রিয়াকলাপের প্রশংসা করেছে। সে রেলওয়ে স্টেশনকে নিয়মানুগ করা হোক কিংবা স্বচ্ছতাকে ধরে রাখার ব্যাপার হোক বা ভালো রোডের নির্মাণ হোক, এরকম অনেক কাজ বারাণসীর বিকাশের জন্য করা হচ্ছে। এইসবের মধ্যে রোপ ওয়ে নির্মাণের খবর কাশির বাসিন্দাদের জন্য অনেক বড় খুশির খবর। জানিয়ে দি যে বারাণসীর সভ্যতার বিকাশের কাহিনী বৈদিক ইয়োসিন। এখানে যেই এসেছে এখানে হয়ে থেকে গেছে আর ধীরে ধীরে বাড়ন্ত জনসংখ্যার কারণে বারাণসীর এই গলি-গালা সংকীর্ণ হতে থাকে আর আজ এইসব গলি বারাণসীর পরিচয় হিসাবে ধরা হয়, এইসময় কেন্দ্র সরকার বারাণসীর পরিচয়কে নজরে রেখে উচিত পদক্ষেপ নিচ্ছে যা সত্যি প্রশংসনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.