বর্তমানে সারা বাংলায় খুব হৈ চৈ পড়ে যাওয়া বিতর্কিত বিষয় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল। এটি প্রস্তাবিত। নতুন কিছু অশ্রুতপূর্ব কোনো মৌলিক বিশ্লেষণ নয়, আমাদের নিজেদের রাজ্যে আমাদের বাঙালি আত্মপরিচয়টি অদূর ভবিষ্যতে সংরক্ষিত থাকবে কি না এ নিয়ে ভাবা তো দরকার। বিহারের লোক বিহারী, ওড়িশার লোক ওড়িয়া, পাঞ্জাবের লোক পাঞ্জাবি আর কাশ্মীরের লোক কাশ্মীরি। একই সূত্রে বাঁধা সমগ্র ভারতবাসীর এই ভিন্ন ভিন্ন জাতিগত পরিচয় এর বিশিষ্টতা নিয়েই বৈচিত্র্যময় ভারত। এ কথা সকলেরই জানা। তবে ১৯৪৭-এ নতুন দেশ জন্ম হওয়ার সময় আলোচনা অবশ্যই হয়েছিল যে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষ এই বাংলায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে স্বচ্ছন্দে বসবাস করতে পারবে না। তার বহুবিধ কারণের মধ্যে মনে হয় এগুলোও ছিল যে একজনের যে খাদ্য নিষিদ্ধ আর এক জনের তা প্রিয়, একজন আব্রাহামিক ধর্মের অর্থাৎ ইসলামের এক প্রভুর আরাধনা করে আর একজন আকাশ-মাটি-জল থেকে মানুষ এমনকি পাথরেরও পূজারী। একজন আইনসঙ্গতভাবে মাত্র একটিই স্ত্রী প্রতিপালন করতে পারবে আর একজন অন্তত চারটি। সর্বোপরি যারা দীর্ঘদিন এ দেশ শাসন করেছে তারা পদানত অতীত প্রজার অধীনে থাকবে কি করে? ইত্যাকার কারণগুলি যে সব প্রকাশ্যে ছিল তা বলা যায় না। তবে অন্তর্লীন ঘৃণা যে ছিল তার প্রমাণ মিলতে লাগলো দেশটি খণ্ডিত হতেই। বাংলার সীমানার ওপারে শুরু হলো নির্যাতন। অসহায় বাঙালি কাতারে এপারে আছড়ে পড়লো। ১৯৭১-এ আবার বাংলাদেশ নামে আরো একটি দেশ জন্মালেও বাঙালি নির্যাতনে কোনো খামতি হলো না বরং বাড়লো। এদের সঙ্গে ঢুকতে শুরু করলো যারা দেশভাগ চেয়েছিলো সেই ভিন ধর্মীয়রাও। যদি এদেশে বাড়তি রোজগার করা যায়। এখানে একটি বিতর্কিত বিষয় চলে আসে তা হলো উদ্বাস্তু। যারা ধর্মীয় নির্যাতনে বাধ্য হয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছে আর যারা ধান্দা করতে অন্য দেশে ঢুকেছে। সকলেই জানেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী প্রথমজন উদ্বাস্তু দ্বিতীয়জন অনুপ্রবেশকারী বা অবৈধ আগন্তুক। এই অনুপ্রবেশকারীরা কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে এ বাংলার রাজনৈতিক দলগুলোর খুব প্রিয় হয়ে ওঠে। সিপিএম জমানায় তারা সব বৈধ কাগজপত্র পেয়ে দলের ভোট-সম্পদ হয়ে ওঠে। কেননা উদ্বাস্তু অনুপবেশকারীরা দেশের অন্য জায়গায় কেউ কেউ গেলেও বড় অংশ এ বাঙলাতেই ডেরা গাড়ে, ভোটার হয়ে পার্টিকে ক্ষমতায় রাখে। এই নিয়ে আজকের মুখ্যমন্ত্রী একসময় ক্ষমতা দখল অসম্ভব ভেবে পাগলপ্রায় হয়ে সব আচার সংহিতা জলাঞ্জলি দিয়ে লোকসভার অধ্যক্ষের দিকে উদ্বাস্তু ও অনুপ্রবেশকারীদের তালিকার বান্ডিল ছুঁড়েছিলেন। এ সব ২০০৫-এর ঘটনা। পশ্চিমবাংলার জনভারসাম্যে তখন বিপুল পরিবর্তন এসে গিয়েছে। দেগঙ্গা, অশোকনগর, জঙ্গিপুর, নদীয়া ও মালদার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অর্থনীতিতে অনুপ্রবেশকারীরা বড় ভূমিকা নিচ্ছে। রাজমিস্ত্রী জোগাড়ের মতো ব্ল্যাক কলার জব থেকে টোটো চালানো ছোট দোকান দেওয়ার মতো ব্লু কলার জব ও এদের হাতের মুঠোয়। পরিণামে ভূমিপুত্ররা মার খাচ্ছে। ১৯৯০ সালের সংসদে গৃহমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত বলেছিলেন ভারতে এক কোটির ওপর বাংলাদেশি আছে। ঢোকার প্রবাহ বন্ধ হয়নি। এবার অঙ্ক করুন ৯০-এর সঙ্গে ৩০ বছর যোগ করে জোড় সংখ্যায় বউ নিয়ে প্রবল উৎপাদনশীলতা। পরিণতিতে স্বাধীনতার সময়ের বাঙালি হিন্দু নিজভূমে আশি শতাংশ থেকে উনসত্তরে নেমেছে। যারা সারা পৃথিবী রুল বাই নাম্বারের তত্ত্বে বিশ্বসী তারা উনিশ থেকে ত্রিশ শতাংশে পৌঁছেছে। এসব পরিসংখ্যান আপনারা খুঁজে মিলিয়ে নিন। ইতিমধ্যে কট্টর খুনী জঙ্গি সংগঠন আইসিস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এখানের খাগড়াগড় ও অন্যান্য বহু জাগায় দারুল ইসলাম করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তারা এখানেও পদচিহ্ন রাখছে। বহু গ্রামীণ অঞ্চলে শঙ্খ ঘণ্টা ধ্বনি ভালো চোখে দেখা হচ্ছে না। জায়গায় জায়গায় জল এখন পানি হয়ে গেছে। বাংলার সংস্কৃতি নষ্টে উদগ্র উৎসাহী ভোট পিপাসু সরকার আসমান, রংধনু, আপা, আব্বা বীরবিক্রমে চালু করে দিয়েছে। তাহলে অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম সব নিয়েই টানা হেঁচড়া শুরু হয়েছে। গির্জার সন্ন্যাসী ধর্ষণ থেকে এদের নেতৃত্বে নারী পাচার পুরোদমে চলছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে এদেরই সনাক্ত করে ফেরত পাঠানোর কথা আছে। হ্যাঁ, এদের পরিচয়পত্র সব জাল, আপনার নয়। আপনি কেন অনর্থক ভয় পাবেন। আপনি কি আপনার সাধের এই পশ্চিমবঙ্গকে চিরতরে বিপন্ন দেখতে চান? নিজের সন্তান-সন্ততির ভবিষৎ নিরাপদ করতে চান না? যাতে আপনার ভাত কেউ কেড়ে না খায়। দেশের কষ্টার্জিত সাবসিডির চাল-ডালে যেন অনুপ্রবেশকারী লালিত না হয় তা দেখা তো আপনারও দায়িত্ব। অযথা ভয় না পেয়ে সুনিশ্চিত করা উচিত। আপনার পড়শি দেশ থেকে পালিয়ে আসা অসহায় ভাই-বোনদের জায়গা করে দেওয়া। নইলে শ্যামাপ্রসাদের বাঁচানো বাঙালি হিন্দু কি বৃহত্তর বাংলাদেশে সেকেন্ড ক্লাস নাগরিক হবে?
যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও আপনার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয় তাই অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণ এত জরুরি। সারা বিশ্বে তাই হচ্ছে। দেশের, রাজ্যের আত্মপরিচয়, নিরাপত্তা রক্ষা করতে নাগরিকত্ব সংশোধন রাষ্ট্রসঙ্ঘ অনুমোদিত। স্বার্থান্বেষী মিথ্যা প্রচারের দেওয়াল ভেঙে আপনি স্বজাতির প্রতি কর্তব্য পালন করুন।
সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়