আশঙ্কার প্রহর গুণছে জম্মু ও কাশ্মীর। উপত্যকার অধিকাংশ এলাকায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। রবিবার রাতে গৃহবন্দি হয়েছেন কাশ্মীরের বহু রাজনৈতিক নেতা। বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। মোবাইলের ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ রাখা হয়েছে। ঠিক কী ঘটতে চলেছে স্পষ্ট করে জানে না উপত্যকার আম জনতা। তবে তারা একটা বিষয় নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছে। তবে কি জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা খারিজ করার পথে হাঁটতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার?
সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায় মন্ত্রিসভায় বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। গোটা কাশ্মীরের চোখ এখন সে দিকেই।
গত শুক্রবার থেকে থমথমে রয়েছে কাশ্মীর। জঙ্গি নাশকতার আশঙ্কায় আচমকাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অমরনাথ যাত্রা। মোতায়েন হয়েছে ৩৫ হাজার অতিরিক্ত সেনাও। সরকারের কথায়, অনুপ্রবেশ হয়েছে উপত্যকায়। তাই নিরাপত্তা বজায় রাখতেই এই সেনা মোতায়েন হয়েছে। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতৃত্বের আশঙ্কা সেখানকার ‘স্পেশ্যাল স্ট্যাটাস’ প্রত্যাহার করে নিতে পারে কেন্দ্র। অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে সে কারণেই। যাতে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ ঘিরে উপত্যকায় আগুন জ্বললে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে দিল্লি।
গত ৬ দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবিধানিক ভাবে বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীর। সংবিধানের ৩৫ এ ধারা অনুযায়ী সেখানকার ভূমিপুত্র ছাড়া ভারতের আর কোনও নাগরিকের সেখানে স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নেই। ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু কাশ্মীরের নাগরিকরা আরও কিছু বিশেষ সুবিধা পান। কিন্তু এই দুই ধারা বিলোপের ব্যাপারে বহুদিন ধরে সওয়াল করছে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার। বিজেপি-র নির্বাচনী ইস্তেহারে বারবার এসেছে এই দুই ধারা বিলোপের প্রসঙ্গ। কিন্তু সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে তা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী জমানার প্রথম মেয়াদেও রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু ছিল বিজেপি তথা এনডিএ।
কিন্তু এখন, অনেকে মনে করছেন এ বার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনে পদক্ষেপ করতে পারেন মোদী-শাহ। আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারের তরফেও এ ব্যাপারে চাপ রয়েছে। তবে সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকের অ্যাজেন্ডা ঠিক কী তা এখনও স্পষ্ট করেনি কেন্দ্র। সাড়ে ন’টায় বৈঠক শুরু হবে। আন্দাজ করা হচ্ছে, সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ ১১ টার আগে তা শেষ হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, সংসদের বাদল অধিবেশন এখন চলছে। প্রথা অনুযায়ী অধিবেশন চলাকালীন মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাইরে ঘোষণা করা যায় না। তা আগে সংসদকেই জানাতে হয়।
কেন্দ্রের তরফে স্পষ্ট করে কিছু না জানালেও ওমর আবদুল্লা, মেহেবুবা মুফতিদের আশঙ্কা সংবিধানের মন্ত্রিসভার এই বৈঠকই কাশ্মীরের জন্য বড় বার্তা বয়ে আনতে পারে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ৩৫ এ ধারা বিলোপের জন্য এখন প্রকাশ্যে সওয়াল শুরু করে দিয়েছেন অরুণ জেটলিরা। তাঁরা বলছেন, একই দেশে এই বৈষম্য চলতে পারে না। জম্মু কাশ্মীরে এই কারণেই কোনও শিল্প গড়ে ওঠেনি, কোনও বেসরকারি হাসপাতাল নেই, কোনও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। বাইরে থেকে কেউ সেখানে ব্যবসার জন্য গেলে, সেখানে তাঁর ছেলেমেয়ের সরকারি স্কুল কলেজে ভর্তি হওয়ার অধিকারটুকুও নেই। জেটলিদের এও বক্তব্য, ৩৫ এ ধারার দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংবিধানে সংশোধন করে সংবিধানে রাখা হয়নি। তা রাষ্ট্রপতির নির্দেশের মাধ্যমে সংবিধানে ঢোকানো হয়েছিল। অনেকে মনে করছেন, মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশের মাধ্যমেই তা প্রত্যাহারের পথে হাঁটতে পারে মোদী সরকার।