পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এক নাটকের ন্যায় দিন দেখছেন। নারদা মামলায় ৪ হেভিওয়েট নেতার গ্রেফতারি থেকে CBI-DIG এর অফিসের সামনে মমতার অবস্থান। কিন্তু এর মাঝেই নিজাম প্যালেস আজ মজে করিয়ে দিল কাশ্মীরের কথা।
পাথর ছোড়া নিয়ে কাশ্মীরে যে ধুন্ধুমার কান্ড হয়ে এসেছিল এতদিন তা দেখেছে দেশবাসী। বিভিন্ন ভাবে কেন্দ্রীয় সেনাদের উত্তপ্ত করা থেকে শুরু করে পাথর ছোড়া কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ডেইলি রুটিনের মধ্যে পড়ত। অবশেষে ২০১৭ এর এপ্রিল মাসের সেই ঐতিহাসিক দিন, আর্মি মেজর লেতুল গোগৈ একজন কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীকে জিপের সামনে বেঁধে নিয়ে যায় রাস্তা দিয়ে আর তারপর থেকে কাশ্মীরে পাথর ছোড়ার ঘটনা অনেক কমেছে। ৩৭০ তোলার পর তো এই ঘটনা প্রায় নগন্য হয়ে গেছে।
আর নিজাম প্যালেসে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনির দিকে ছুটে এল সেই পাথর, ইঁট । কেন্দ্রীয় বাহিনীকে শুনতে হল গালিগালাজ, উষ্কানীমূলক কথা। আর এতকিছুর পরও কেন্দ্রীয় বাহিনী যে সংযম দেখিয়েছে তা প্রশংসনীয়।কিন্তু এবার এই কাজ করার পিছনে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নেই, আছে শাসক দল অর্থাৎ তৃণমূলের কর্মী সমর্থক। মুখ্যমন্ত্রী আজ শত শত তৃণমূল সমর্থককে নিয়ে যে কার্যকলাপ আজ করল তা কোনো রাজ্যের বা দেশের শাসন ব্যবস্থায় কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।
১৫ তারিখ রাজ্যের মুখ্যসচিব, মুখ্যমন্ত্রী ৩০ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করলেও তা বিন্দুমাত্র প্রতিফলিত হলো না সিবিএই দপ্তরের সামনে। রাজ্যের লকডাউন অর্ডারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধার্মিক কোনোরকমেরই জমায়েত করা যাবে না। লকডাউনে বাজার খুলে রাখা থেকে ব্যাংক খুলে রাখা সব রকমের সময় উল্লেখ করা আছে, সেখানে সাধারণ মানুষও বিনা কারণে বা সময়ের পর বাইরে বেরোলে বিভিন্ন ভাবে পুলিশের কাছে তার রীতিমত লাঠি খাচ্ছে, কিছু মানুষকে এজন্য গ্রেফতারও করা হয়েছে। সেখানে খোদ কলকাতাতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই কিভাবে জমায়েত করতে দেওয়া হল?! কলকাতা পুলিশের বড় বড় অধিকর্তারা থেকেও তারা চুপ কেন ছিল?! সারাদিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই ধরণের জমায়েত প্রকাশ্যে রাস্তার মধ্যে করতে দেখা গেছে। তবে কী করোনা নিয়ন্ত্রণেও রাজনৈতিক রং বেশি গুরুত্বপূর্ণ! এর থেকেও বড় কথা যেখানে রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রীর তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এ ধরণের ঘটনাকে উৎসাহ দেন সেখানে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক। হয়তো কোভিড ভাইরাসও ঘাসফুল দেখলে কাছে যায়না তাছাড়া মমতা ব্যানার্জী কিভাবে রাজ্যের এত মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিতে যাবেন!
মুখ্যমন্ত্রীর এই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আজ নুতন না। কিন্তু আজ এই ভয়াবহ মহামারীর সময়েও এই ভিরকে কেন আটকালো না পুলিশ! মুখ্যমন্ত্রী কী আদৌ সিবিএই এর কাজে এভাবে বাধা দিতে পারে সে নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। খোদ সিবিআই এর ডিজি দিল্লিতে ই-মেল করে জানতে চেয়েছেন ।
কিন্তু আজকের ঘটনায় কয়েকটি মূল প্রশ্ন উঠছে,
প্রথম, আইনের পরিধির মধ্যে এসে আজ ৪ হেভিওয়েট তৃণমূল নেতার গ্রেফতার হয়েছে, কিন্তু মমতা ব্যানার্জী কী আইনের উপর আস্থা রাখেন না যে এভাবে সিবিআই এর অফিসে গিয়ে অবস্থানে বসলেন?
দ্বিতীয়, লকডাউন থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কেন এই জমায়েত করতে দিল, যেখানে নিজাম প্যালেসকে রীতিমত ঘিরে ফেলা হয়েছিল, এটা কী শাসক দলের কর্মী হওয়ার “বিশেষ সুবিধা” !
তৃতীয়, খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি এভাবে আইন অবমাননা করেন বা করতে উৎসাহ প্রদান করেন তাহলে তৃণমূলের নিচু তোলার ক্যাডাররা কী আইনের সীমা আদৌ কোনোদিন মানবে?!
চতুর্থ, যেখানে রাজ্যের রাজ্যপালের বাসস্থানের সামনে গিয়ে তৃণমূল সমর্থকেরা এভাবে ঝামেলা করতে পারে তাহলে সাধারণ মানুষ কতটা সুরক্ষিত থাকবে তৃণমূলের কর্মীদের থেকে?!
রাজ্যের শাসনব্যবস্থা কোন পথে যাচ্ছে তা নিয়ে সাধারণ মানুষ চিন্তাপ্রকাশ করলে তা খুবই স্বাভাবিক হবে।