৫ অগাস্ট, ২০১৯। ওইদিন কিছু একটা ঘটবে। কাশ্মীরে বিভিন্ন নিরাপত্তা রক্ষী সংস্থার কর্তাদের একথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ১১ দিন আগে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে তাঁদের বলা হয়েছিল, যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন। তাঁরা নানা সূত্রে জানতে পেরেছিলেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করা হবে। সেইমতো যে কোনও অশান্তি ঠেকানোর জন্য শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। রবিবার রাত দু’টোর মধ্যে প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।
জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন, এবার রাজ্য জুড়ে যেমন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরে কেউ দেখেনি। প্রথমেই কাশ্মীর উপত্যকায় বাড়তি আধা সেনা মোতায়েন করা শুরু হয়। রবিবার সিআরপিএফের ৪৩ টি কোম্পানি অর্থাৎ ৪৩ হাজার আধা সেনা কাশ্মীরের নানা জায়গায় গোলমাল ঠেকাতে তৈরি ছিল। তাদের কাশ্মীরে উড়িয়ে আনা হয়েছিল সি-১৭ হেলিকপ্টার মারফৎ।
একইসঙ্গে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়, রবিবার রাত থেকে মোবাইলে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা বন্ধ করতে হবে। শুধু তাই নয়, রবিবার রাতে শ্রীনগরে ফোনেও সহজে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। যে কোনও ধরনের গুজব ঠেকাতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে বহু সংখ্যক স্যাটেলাইট ফোন দেওয়া হয়।
কোথাও দাঙ্গা-হাঙ্গামা হলে যাতে সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সেজন্য ৬০ জন স্পেশ্যাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাঁদের বলা হচ্ছিল ‘মোবাইল ম্যাজিস্ট্রেট’। নিরাপত্তা রক্ষীরা যাতে দ্রুত কাউকে গ্রেফতার করতে পারে সেজন্য তাদের সাহায্য করাই ছিল মোবাইল ম্যাজিস্ট্রেটদের কাজ।
গত কয়েকদিনে গ্রেটার শ্রীনগর অঞ্চলে যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের রাখা হয়েছে ছ’টি অস্থায়ী জেলে। যে সরকারি ডাক্তাররা বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন, তাঁদের বলা হয়েছে, যে কোনও সময় কাজে যোগ দিতে হতে পারে।
জম্মু-কাশ্মীরের ইতিহাসে এই প্রথম বাইরে থেকে আসা সাংবাদিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা সবাই যেন সরোবর পোর্টিকো হোটেলে চলে যান। সেই হোটেল ঘিরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সরকার জানিয়েছে, সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্যই ওই ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
কাশ্মীরে আর কতদিন নিরাপত্তা নিয়ে এমন কড়াকড়ি চলবে? প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী ১৫ অগাস্টের আগে কড়াকড়ি শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।