ত্রিপুরায় শাসক দল এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সমস্ত কুৎসার জবাব দিয়েছে বিজেপি৷ পাশাপাশি বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিতেও ভুলেনি দল৷ আজ বিশাল মিছিল শেষে আয়োজিত এক পথসভায় ত্রিপুরা মন্ত্রিসভার সদস্য রতনলাল নাথ বলেন, গত এক বছরে ২৫৬টি জনমুখি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি জোট সরকার৷
তাই, বিরোধীদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে৷ এজন্যই রাজ্য সরকার এবং বিজেপির বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করেছেন বিরোধীরা৷ তিনি সিপিএম এবং কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেন, নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন৷ নইলে মানুষ আইন হাতে তুলে নিলে আমরা দায়ী থাকব না, সতর্ক করে বলেন রতনলাল নাথ৷
ত্রিপুরায় বিজেপি ষড়যন্ত্রের শিকার, এই ইস্যুতে বৃহস্পতিবার আগরতলায় সদর জেলা কমিটির উদ্যোগে মিছিলের আয়োজন করেছিল শাসক দল৷ ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় রবীন্দ্র ভবনের সম্মুখ থেকে মিছিলটি শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে প্যারাডাইস চৌমুহনিতে গিয়ে সমাপ্ত হয়েছে৷ সেখানে এক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়৷ পথসভায় প্রদেশ বিজেপির শীর্ষ নেতারা বক্তব্য পেশ করেন৷ সবশেষে বক্তব্য পেশ করেন ত্রিপুরা মন্ত্রিসভার বরিষ্ঠ সদস্য রতনলাল নাথ৷ তিনি শুরু থেকেই সিপিএম এবং কংগ্রেসকে নিশানা করে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন৷ তাঁর কথায়, বিজেপি জোট সরকার এক বছরে ২৫৬টি জনমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে৷ শুধু তা-ই নয়, ৪ লক্ষ ২৩ হাজার মুদ্রা লোন দেওয়া হয়েছে৷ এর মাধ্যমে ১,৭৮৮ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে৷ তিনি জানান, বিএড অনুপ্রেরণা যোজনায় পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রীর বিএড কোর্সের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা-সহ সুদ এবং দায়ভার রাজ্য সরকার বহন করছে৷
রতনলাল নাথ আজ গত এক বছরে জনগণের জন্য কাজের দীর্ঘ খতিয়ান তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, জাতীয় সড়কে নয়টি চার লেনবিশিষ্ট রাস্তার অনুমোদন, পিপিপি ৭-টি ডিগ্রি কলেজ, ৪-টি বিএড কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গত এক বছরে নেওয়া হয়েছে৷ ৮,৩৮৯ কোটি টাকা জনজাতি কল্যাণে বিশেষ প্যাকেজ কেন্দ্রের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে৷ শুধু তা-ই নয়, গৃহ দফতরের চাকরিতে মহিলাদের জন্য দশ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি জোট সরকার৷ তিনি তুলনা করে বলেন, বামফ্রন্ট জমানায় মাত্র ৪-টি একলব্য স্কুল স্থাপন হয়েছে৷ কিন্তু, গত এক বছরে ১৮টি একলব্য স্কুল স্থাপনের অনুমোদন মিলেছে৷ তাছাড়া, ৩-টি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় স্থাপনেরও অনুমোদন মিলেছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ওটিপিসি-র শেয়ার ৫ শতাংশ বেড়ে ২৬ শতাংশ কিনেছে ত্রিপুরা সরকার৷ এই হিসাব তুলে ধরে তিনি অভিযোগ করেন, নতুন চিন্তাধারা নিয়ে যখন বিজেপি জোট সরকার কাজ করে চলেছে তখনই বিরোধীরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে৷ রাজনীতির মান এতটাই নীচে নামিয়েছে, যে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার নিয়েও কুৎসা রটানো হচ্ছে৷ রতনলাল নাথ বলেন, ত্রিপুরায় অনেক আগেই কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতে পারত৷ কিন্তু দিল্লির সাথে গোপন বোঝাপড়ায় এ-রাজ্যে দীর্ঘকাল সিপিএম শাসন করেছে৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, এখনও কেউ কেউ মনে করেন অন্য চিন্তা করতে হবে৷ তাঁদের উদ্দেশে রতনলাল নাথ বলেন, মানুষকে অযথা বিভ্রান্ত করবেন না৷ এ-রাজ্যে কংগ্রেসের একটি আসনও নেই৷ সরকার গঠনের দুঃস্বপ্ন দেখবেন না৷ রতনের কথায়, দেশ আজ যোগ্য নেতার হাতে রয়েছে৷ শক্তিশালী ভারত গঠন করতে পারবেন শুধু নরেন্দ্র মোদীই৷ রতনের দাবি, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মোদী আসার আগে ভারত ১১-তম স্থানে ছিল। এখন কয়েক ধাপ উপরে উঠে দাঁড়িয়েছে পঞ্চম স্থানে৷ তাঁর আরও দাবি, ২০২৪ পর্যন্ত মোদী ক্ষমতায় থাকলে ভারত আর্থিক দিক দিয়ে সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে যাবে৷ সাথে যোগ করেন, যদি ২০২৯ পর্যন্ত মোদী কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকেন তা-হলে বিশ্বের এক নম্বর আর্থিক শক্তিশালী দেশ হতে ভারতকে কেউ আটকাতে পারবে না৷
আজ রতনলাল নাথ বিজেপি জোট সরকারের সাফল্য তুলে ধরেই থেমে থাকেননি৷ বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণকে উদ্দেশ্য করে তাঁর কড়া হুঁশিয়ারি, চক্রান্তকারীরা সতর্ক হোন৷ কারণ, মানুষ এখন ভীষণ সচেতন, জাগ্রতও৷ তাঁর কথায়, আমরা আইন হাতে নেব না৷ বিজেপি কর্মীদেরও বলব, আইন হাতে নেবেন না৷ কিন্তু, মানুষ আইন হাতে নিলে আমরা দায়ী থাকব না৷ রতনলাল নাথের সাফ কথা, চক্রান্ত ধরা পড়লে কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না৷ নোংরা রাজনীতির বদলে গঠনমূলক আলোচনা এবং শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টিতে সাহায্যের জন্য বিরোধীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন তিনি৷