প্রবাসে দক্ষিণবঙ্গে পরম পূজনীয় সরসঙ্ঘচালক , নেতাজী আবির্ভাব দিবসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন

সঙ্ঘের কর্মপদ্ধতি অনুসারে দুইজন সর্বোচ্চ পদাধিকারী সরসঙ্ঘচালক এবং সরকার্যবাহ দেশের প্রত্যেকটি প্রান্তে ভৌগোলিক রচনা প্রান্ত প্রবাস করেন এক বছর অন্তর সেই অনুসারে মোহন ভাগবত এ বছর আমাদের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তে উপস্থিত হয়েছেন।

কার্যপদ্ধতির সুবিধার্থে ভৌগোলিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের তিনটি প্রান্ত । দুই মেদিনীপুর হাওড়া কলকাতা ও হাওড়া মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা নিয়ে দক্ষিণবঙ্গ বাঁকুড়া পুরুলিয়া বীরভূম বর্ধমান মুর্শিদাবাদ নদিয়া জেলা নিয়ে মধ্যবঙ্গ। মালদা উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ার কোচবিহার দার্জিলিং নিয়ে উত্তরবঙ্গ। পাঁচদিনের সাংগঠনিক প্রবাসে মোহনজি সংঘের কার্যকর্তাদের সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বৈঠক করছেন ও করবেন। সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎও করবেন। তবে আমরা সৌভাগ্যবান যে উনি ২৩ শে জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে শহীদ মিনারে স্বয়ংসেবকদের সঙ্গে সমবেতভাবে “নেতাজি শ্রদ্ধাঞ্জলি” কার্যক্রম এর বক্তব্য রাখবেন।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের গঠনতন্ত্রে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার সাংগঠনিক দায়িত্ব ও পরম্পরা হলেন পরম পূজনীয় সরসঙ্ঘচালক । সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আজ পর্যন্ত সঙ্ঘের সাংগঠনিক কাজে এই পরম্পরা বিদ্যমান । সঙ্ঘের বিভিন্ন সাংগঠনিক প্রান্তে বছরে অন্তত দুইবার প্রবাস পরম্পরা রয়েছে। আদ্য সরসঙ্ঘচালক পরম পূজনীয় ডাঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের সময় থেকে শুরু হওয়া এই প্রথা এখন পর্যন্ত চলছে। সেই সূত্র ধরেই ১৯শে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ২৩ শে জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত বর্তমান পরম পূজনীয় সরসঙ্ঘচালক প্রবাসে দক্ষিনবঙ্গ প্রান্তে কলকাতায় উপস্থিত হয়েছেন। সঙ্ঘের রীতি অনুযায়ী এই প্রবাসের সময় ও স্থান একবছর আগেই নির্দিষ্ট হয়ে যায়। এই প্রবাসের বিষয় হিসাবে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের সাথে বৈঠক এবং সমাজের প্রবুদ্ধ ব্যক্তিত্ব যাদের বিভিন্ন সামাজিক অবদান আছে তাঁদের সাথে যোগাযোগ ও বার্তালাপ কার্যক্রম স্থির থাকে।


রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ একটি রাষ্ট্রবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন, যথাযোগ্য সম্মানের সাথে ভারতের সকল মনীষীদের সম্মান জানান। এই সমস্ত দিনগুলিতে আসমুদ্র হিমাচল সঙ্ঘের সমস্ত শাখায় তথা সমস্ত সাংগঠনিক খন্ডে সঙ্ঘের স্বয়ংসেবক সেই মনীষীর কথা স্মরণ করে প্রেরণা লাভ করেন। ভারতমাতার বীরপুত্র নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে সঙ্ঘের প্রথম সরসঙ্ঘচালক ডঃ হেডগেওয়ারের প্রথম সাক্ষাত হয় ১৯২১ সালে কলকাতাতে কংগ্রেসের অধিবেশনে, তখন ডাক্তার হেডগেওয়ার বিদর্ভ কংগ্রেসের সচিব ছিলেন। নেতাজী এবং ডাক্তারজী দুজনেরই সম্পর্ক গভীর। ডাক্তার হেডগেওয়ার কলকাতাতে ডাক্তারি পড়তে আসেন এবং ১৯১৪ সালের জুন মাসে ডাক্তারি পাশ করেন। কলকাতাতে থাকার সময় ডাক্তারজী “অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর” দলের প্রত্যক্ষ কাজে নিজেকে যুক্ত করে স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং অচিরেই বিপ্লবীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন, তার ছদ্মনাম হয় “কোকেন”। পরবর্তী সময়ে নেতাজী এবং ডাক্তারজী দুজনেই কংগ্রেস থেকে বেড়িয়ে আসেন। ডাক্তারজী ১৯২৫ সালে ১২ জন যুবক নিয়ে নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেন এই বিশ্বাস থেকে যে সমাজের মধ্যেকার সংগঠনই দেশকে স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পুর্ন করতে পারবে। নেতাজী এবং ডাক্তারজী দুজনেরই বিশ্বাস ছিল যে রাষ্ট্রীয় ভাবধারায় অনুপ্রাণিত আদ্যন্ত অনুশাসিত সংগঠনই ভারতের স্বাধীনতার একমাত্র পথ। তাই একজন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এবং অন্যজন আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব দিয়েছেন। নেতাজীর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ সম্বন্ধে প্রথম অনুভব হয় একটি চলমান ট্রেনের কামরার জানালা দিয়ে, যখন তিনি সেই ট্রেনটিতে ভ্রমন করছিলেন, নাগপুরের উপর দিয়ে ট্রেনটি যাবার সময় নেতাজী স্বয়ংসেবকদের গনবেশ পরে পথ সঞ্চলন (কুচকাওয়াজ) করতে দেখেন। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এই স্বয়ংসেবকরা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের এবং তার প্রতিষ্ঠাতা হলেন তারই একসময়ের কংগ্রেসের সতীর্থ ডাক্তারজী। তিনি ডাক্তারজীর সাথে দেখা করবার অভিলাষ ব্যক্ত করেন এবং ১৯৪০ সালের জুন মাসে নাগপুরে তাদের দেখা হয়। অনেক ঐতিহাসিকের মতে নেতাজী, ডাক্তারজীর সাথে দেখা করতে গেছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনী এর সাথে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সংযুক্তির অভিপ্রায় নিয়ে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই সময় ডাক্তারজী গুরুতর অসুস্থ ছিলেন এবং এমত অবস্থায় ডাক্তারজীর সাথে নেতাজীর খুব অল্পই সাক্ষাৎ হয়, সেই সপ্তাহেই ডাক্তারজীর তিরোধান ঘটে।

পরম পূজনীয় সরসঙ্ঘচালকের উপস্থিতিতে দক্ষিনবঙ্গ প্রান্তের কলকাতা ও হাওড়া মহানগরের স্বয়ংসেবক দ্বারা আগামী ২৩ শে জানুয়ারি ২০২৩, কলকাতা শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে নেতাজীর ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে “নেতাজী সহ প্রণাম” সকাল নয়টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত এক কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত কার্যক্রমে স্বয়ংসেবকদের দ্বারা শারীরিক ও বৌদ্ধিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে নেতাজীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং নেতাজীর আদর্শ ও দেশমাতৃকার শৃঙ্খলমোচনের জন্য তার আত্মত্যাগকে স্মরণ করে স্বয়ংসেবক শুভানুধ্যায়ীরা অনুপ্রাণিত হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.