বনেদিবাড়ির ঐতিহ্য, ইতিহাস, রোমান্টিকতা শুধুমাত্র কলকাতাতে আটকে থাকে না, পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে অসংখ্য বনেদিবাড়ি রয়েছে—বরং সেখানে অনেক বেশি রং এবং গভীরতা। ইতিহাসের পাতায় যেমন অমর হয়ে থাকবে এসব বাড়ি, তেমনই তাদের রান্নাঘরও। রান্নার কিছু কিছু পদ কোনও কোনও পরিবারের হাত ধরে ঢুকে পড়ে ইতিহাসের খাতায়, সর্বসাধারণের হেঁশেলে। দেশিয় থেকে কন্টিনেন্টাল, আমিষ থেকে নিরামিষ, নোনতা থেকে মিষ্টির নানান পদ আজও ‘পাক’ হয় সেই সব পরিবারের উত্তরসূরির রন্ধনশালায়। প্রতিটি বনেদি পরিবারের খাওয়া-দাওয়াতেই থাকত এক-একটি সিগনেচার পদ। শতক পেরিয়ে ধুমধাম, আনন্দ-জৌলুসে ঘাটতি পড়লেও রীতি ভাঙতে পারেনি এখনও বহু পরিবার। বাংলার বিভিন্ন অভিজাত পরিবারের বিশেষ বিশেষ পদের কথা, তাদের বিচিত্র সব নাম শুনলে জিভে জল আর মনে কৌতূহলের উদ্রেক হয় বইকি!

হাওড়া শিবপুরের রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো শুরু হয় ১৬৮৫ সালে। পুজো শুরু করেন রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরী। পরিবারের বিশ্বাস, স্বপ্নে মায়ের আদেশ পেয়ে রামব্রহ্ম বাড়িতে এই পুজো শুরু করেন। এ পুজো আসলে মা চণ্ডীর পুজো। বর্তমানে এলাকায় বারোয়ারি পুজোর রমরমা হলেও তিনশো বছর পেরিয়ে এসেও শিবপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির পুজো এখনও সমান জনপ্রিয়। পুজোয় আগের সেই রাজকীয় জৌলুস হয়তো আর নেই, তবে নিয়ম নিষ্ঠা এবং আড়ম্বর যথাসম্ভব বজায় রেখে চলেছেন ‘শ্রী শ্রী দূর্গা-কালীমাতা এস্টেট’-এর সম্পাদক শিবপুরের রায়চৌধুরী পরিবারের বিশ্বনাথ রায়চৌধুরী। রায়চৌধুরী পরিবারের এই পুজো ‘সাঁঝের আটচালা’ নামেই এলাকায় পরিচিত। শিবপুর বাজার থেকে মন্দিরতলার দিকে এগোলেই হিন্দু গার্লস স্কুল। সেখান থেকে ডান দিকের রাস্তা ধরে মিনিটখানেকের হাঁটা পথেই দেখা মিলবে সাঁঝের আটচালার। এবার আসি আসল কথায়।

রায়চৌধুরীদের দুর্গাপুজোয় নবমীর দিন হোম সম্পন্ন হলে, হাঁড়িকাঠ উঠিয়ে বাড়িতে পংক্তিভোজনের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও নানা রকম মিষ্টান্ন তো থাকেই। মা দুর্গার সামনে রাখা বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে নিরামিষ আমিষ নির্বিশেষে অন্যতম হচ্ছে কলার বড়ার পায়েস বা কদলী পায়েসান্ন।

রায়চৌধুরীদের দুর্গাপুজোয় নবমীর দিন হোম সম্পন্ন হলে, হাঁড়িকাঠ উঠিয়ে বাড়িতে পংক্তিভোজনের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও নানা রকম মিষ্টান্ন তো থাকেই। মা দুর্গার সামনে রাখা বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে নিরামিষ আমিষ নির্বিশেষে অন্যতম হচ্ছে কলার বড়ার পায়েস বা কদলী পায়েসান্ন। চালের পয়েসে ডোবানো কলা আর নারকেলের এই অভূতপূর্ব মিষ্টান্নটি স্বাভাবিক কারণেই বছরের পর বছর ধরে প্রতিদিন ভোগ হিসেবে দেবীর সামনে দেওয়া হয় পুজোর সময়ে। আজ পাঠকদের জন্যে রইলো সেই রেসিপি।

আরও পড়ুন: দামোদা : ঠাকুরবাড়ির পদ, বিলুপ্তপ্রায় এই মিষ্টান্নে মেশানো হতো মনের মাধুরী

কলার বড়ার জন্যে যা যা লাগবেঃ

২টো পাকা কাঁঠালি কলা
এক কাপ নারকেল কোরা
১/২ কাপ গুড়
১/২ কাপ ময়দা
ভাজার জন্য তেল

পায়েসের জন্যেঃ

১.৫ লিটার দুধ
১/৬ কাপ গোবিন্দভোগ চাল
৩ চামচ কাজু
২ চামচ কিশমিশ
১/৪ কাপ গুড়
২ এলাচ গুঁড়ো করা
২ তেজপাতা

প্রণালী
কলার বড়ার জন্যে:

১. গুঁড়ো করা নারকেল আর গুড় নিয়ে আঁচ দিয়ে ৭-৮ মিনিট ধরে পাত্রে নাড়ুন, তারপর নামিয়ে নিয়ে ঠান্ডা হতে রেখে দিন।
২. একটি বাটিতে কলামাখা নিয়ে তার মধ্যে নারকেল-গুড়ের মিশেল আর ময়দা দিন। ভালো করে নাড়ুন, হাল্কা জল দিন একটি গাঢ় ব্যাটারের মতো মিশ্রণ তৈরি হওয়া পর্যন্ত।
৩. ভাজার জন্যে তেল গরম করুন। তারপর সাবধানে ব্যাটারটিকে একটু একটু করে তেলের মধ্যে নামান, ভাজুন যতক্ষণ পর্যন্ত একটি খয়েরি সোনালি রং না হয়। রং এলে নামিয়ে রেখে দিন।

কলার বড়ার পায়েস:

১. কিশমিশকে জলে ভিজিয়ে রাখুন।
২. চালকে ১৫ মিনিটের জন্য জলে ভিজিয়ে রেখে তারপর জলটা ফেলে দিয়ে শুকনো করে রাখুন।
৩. দুধটা একটি পাত্রে মাঝারি আঁচে ঢেলে তেজপাতা আর এলাচ গুঁড়ো যোগ করে ১৫-২০ মিনিটের জন্য রাঁধুন।
৪. দুধের মধ্যে চাল দিয়ে দিন, মাঝারি আঁচে রেখে নাড়তে থাকুন, যতক্ষণ না চালটা সিদ্ধ হচ্ছে।
৫. কাজু আর কিশমিশ যোগ করে দুধটি নাড়তে থাকুন। ৮-১০ মিনিট ধরে রেখে দিন যতক্ষণ না মিশ্রণটি আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে।
৬. এ বার কলার বড়া দিয়ে ঢেকে দিয়ে দু’মিনিটের জন্য রেখে দিন।
৭. আঁচ বন্ধ করে দিয়ে গ্রেট করা গুড় দিয়ে দিন, তারপর নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না গুড়টি সম্পূর্ণভাবে দুধে মিশে যায়। ঠান্ডা হতে দিন। পরিবেশন করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.