আজ কার্গিল যুদ্ধজয়ের ২২ বছর উদযাপন দিবস

জম্মু ও কাশ্মীর কে নিজের সীমানার অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা বিগত বেশ কিছু বছর ধরে পাকিস্তান ও তাদের মদতপুষ্ট উগ্ৰ ইসলামিক সংগঠন করে চলেছে , কিন্তু দূর্গের দ্বাররক্ষীর মতোই সদা জাগ্ৰত  অতন্দ্রপ্রহরীরা সেই বৃথা চেষ্টাকে বারংবার ব্যার্থ করেছেন ও যোগ্য জবাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।
ইংরেজরা আমাদের অখন্ড মাতৃভূমিকে শুধু খন্ডিতই করেনি , অর্থনৈতিক, সামাজিক , সাংস্কৃতিক প্রায় প্রতিটি দিক থেকেই ভারতবর্ষকে শোষণ করেছিল ,আর এই প্রক্রিয়া চলেছিল প্রায় ১৫০ বছর ধরে।১৯৪৭ সালের রচিত ষড়যন্ত্রে ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দেওয়ার নামে এক অযোগ্য নেতৃত্বের হাতে আমাদের মাতৃভুমি কে তুলে দেওয়ার  নির্লজ্জ প্রয়াস  এবং  একটি নিয়ম তৈরী করা হয়েছিল যেখানে বলা হয় -স্বাধীন  রাজ্যগুলি  ভারতবর্ষ ও নব নির্মিত পাকিস্তানের আধিপত্যে যোগদান করতে পারবে  এবং এই অধিকার দেওয়া ছিল রাজ্যের শাসকের ওপর । জম্বু ও কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ১৯৪৭ সালের ২৬ শে অক্টোবর ভারতবর্ষের সঙ্গে Instrument Of Accession স্বাক্ষর করেন ও তৎকালীন ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ২৭ শে অক্টোবর এই চুক্তি মেনে নেন। পাকিস্তান আশা করেছিল যে জম্বু ও কাশ্মীর পাকিস্তান এর সঙ্গে যুক্ত হবে কিন্তু স্বপ্নভঙ্গ হয় , ফলস্বরূপ পাকিস্তান জম্বু ও কাশ্মীর আক্রমন করে ,ভারতীয় সেনাবাহিনী জম্বু ও কাশ্মীর পৌঁছায় , ইতিমধ্যে পাকিস্তান জম্বু ও কাশ্মীরের বেশ কিছুটা অংশ দখল করে নিয়েছিল ,ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য করে ও পাকিস্তান কর্তৃক অবৈধভাবে দখল করা অঞ্চল খালি করে দেয় । ১৯৪৮ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু পাকিস্তানের আগ্ৰাসনের বিষয়টি জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরেন , নেহেরু আর্ন্তজাতিক শক্তি ও তাদের সমর্থনের বিভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে পড়েছিলেন যার জন্য এখনও জম্বু ও কাশ্মীরের কিছুটা অংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ( মিরপুর, ভীম্বর , কোটলি , বাঘ, গিলগিট , বালুচিস্তান , ইত্যাদি) ।

জাভেদ আব্বাস পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের লেঃ কর্নেল থাকাকালীন তাঁকে একটি গবেষণা প্রকল্প, ‘ভারত- একটি স্টাডি প্রোফাইল’ অর্পণ করা হয়েছিল। তিনি তিন বছরে তাঁর অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন এবং ১৯৯০ সালে প্রকাশ করেছিলেন।  যদিও, এই গবেষণাটি ৮০  এর দশকের শেষদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মানসিকতাকে প্রতিফলিত করছিল, ভারত সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরী করেছিল।দেশ বিভাগের সময় থেকেই,  পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জম্বু ও কাশ্মীর কে অসম্পূর্ণ এজেন্ডা হিসাবে বিবেচনা করেছে। আইয়ুব খান ছিলেন প্রথম সেনা জেনারেল, যিনি সামরিক আইন চলাকালীন রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জার কাছ থেকে জোরপূর্বক পাকিস্তানের লাগাম নিয়েছিলেন। আইয়ুব খান বিশ্বাস করতেন ভারতীয়রা অসুস্থ এবং খুব দুর্বল। তাঁর মতে ‘ভারতীয়দের মনোবল খুব কম ছিল, তাই তারা আর বেঁচে থাকতে পারে না।এই ভুল ধারণার জন্য  ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খান ভারতে আক্রমণ করেছিলেন। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো আইয়ুব খানকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ভারত আন্তর্জাতিক সীমান্ত আক্রমণ করবে না। আইয়ুব খান  তাঁর সেনাবাহিনী সম্পর্কে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ১৯৬৫ সালের ৩ রা ডিসেম্বর, যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী লাহোরের চূড়ায় পৌঁছেছিল, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তার সকালের রুটিন অনুশীলনে ব্যস্ত ছিল। আইয়ুব খান ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়ায় এতটাই কাঁপিয়েছিলেন যে, তাঁর মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, “আমি ৫ মিলিয়ন কাশ্মীরিদের জন্য ১০০ মিলিয়ন পাকিস্তানীকে বিপদে ফেলতে পারি না”। আইয়ুব খান ভারতের সাথে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পর কখনও তার ভাবমূর্তি উন্নত করতে পারেননি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আরেক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঠিক আইয়ুব খানের মতোই ভারত সম্পর্কেও একই ভ্রান্তিতে ভুগছিলেন। ১৯৭১ সালে কিছু জ্যোতিষী ইয়াহিয়া খানকে বলেছিলেন যে তিনি আগামী দশ বছরের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান হবেন, যা তাকে অত্যন্ত আনন্দিত এবং আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল।  স্ব-প্রশংসায় আচ্ছন্ন,  ইয়াহিয়া খান ও তাঁর দলকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে আপনি কীভাবে ভারতের সাথে লড়াই করার পরিকল্পনা করেছেন? তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল ‘মুসলিম যোদ্ধাদের ঐতিহাসিক শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিতে’
তবে, পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণ সম্পর্কে যখন বলা হয়েছিল, তখন এই মেরুদণ্ডহীন রাষ্ট্রপতির প্রতিক্রিয়া ছিল, “আমি পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে কী করতে পারি, আমি কেবল প্রার্থনা করতে পারি।” পাকিস্তানের নৌ-প্রধান পাকিস্তান রেডিওর মাধ্যমে ভারতের বিমান হামলা সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন, তাঁর অফিসে যাওয়ার সময়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে নিয়াজি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের মাধ্যমে এই বিমান হামলার বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন। আইয়ুব খান যেমন কাশ্মীরিদের দোষ দিয়েছিলেন, ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, “বাঙালির পক্ষে আমি পশ্চিম পাকিস্তানকে বিপদে ফেলতে পারি না”।

১৯৬৫ ও ১৯৭১ উভয় যুদ্ধেই পাকিস্তান পরাজিত হয়েছিল, যদিও এই পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা বদলায়নি। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের আগে দু’বার পাকিস্তান সেনাবাহিনী কারগিলের দিক থেকে ভারত আক্রমণ করার প্রস্তাব করেছিল এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে এগুলি উপস্থাপন করা হয়েছিল, তবে উভয়বারই এই পরিকল্পনা রাজনৈতিক নেতারা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।হামলার  পরিকল্পনা বেনজির ভুট্টোর কাছে উপস্থাপনকালে সেনাবাহিনীর ডিজিএমও ছিলেন পারভেজ মোশাররফ, যিনি কারগিল যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন।মোশাররফের পাশাপাশি আরও তিন সেনা কর্মকর্তা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন, তারা হলেন, লেঃ জেনারেল মোহাম্মদ আজিজ খান, লেঃ জেনারেল মেহমুদ খান এবং মেজর জেনারেল জাভেদ হাসান।

পাকিস্তানের মূল লক্ষ্যগুলি ছিল:
১)শ্রীনগরকে লেহের সাথে সংযুক্ত করে জাতীয় হাইওয়েতে সামরিক সরবরাহ বন্ধ করা।
২)ধরে নেওয়া হয়েছিল যে সরবরাহ অবরুদ্ধ করার ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিশোধ গ্রহণে বিলম্ব করবে।
৩)পাকিস্তান নিশ্চিত ছিল যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে তাদের অবস্থান থেকে ফিরিয়ে দিতে ভারতের সামর্থ্যের অভাব রয়েছে।
৪) পাকিস্তান আফগানিস্তানের তালিবনি  প্রধান মোল্লা রাব্বানীকে অনুরোধ করেছিল যে, ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য ২০,০০০-৩০,০০০ যুবককে প্রেরণ করা হোক। স্পষ্টতই, রাব্বানী প্রায় ৫০,০০০ ছেলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আধিকারিকদের খুব খুশি এবং আশাবাদী করেছিল।১৯৬৫ সালের যুদ্ধের আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কারগিলের শিখরে থাকত। সুরক্ষা এবং কৌশলগত কোণ থেকে এই অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ এর  যুদ্ধের পরে এই শিখরগুলির উপরে ভারতের নিয়ন্ত্রণ ছিল এবং  মোশারফ এই শিখর ফিরে পেতে চেয়েছিলেন।
৫)পাকিস্তান কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক সমস্যা  হিসাবে রূপান্তর করতে চেয়েছিল যা পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হতে পারত এবং তৎক্ষণাৎ তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বাধ্যতামূলক।

ভারতের ক্ষমতা সম্পর্কে পাকিস্তান অজ্ঞাত ছিল। এক পর্যায়ে মোশাররফ স্বীকার করে বলেছিলেন যে ভারত কেবল সামরিক পদক্ষেপের দ্বারা নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতির মাধ্যমেও পাল্টা জবাব দিয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১৩ ই জুন ভারতীয় সেনাবাহিনী টোলোলিং চূড়াটিকে পাকিস্তানী আগ্রাসনের  থেকে মুক্ত করে ।শীঘ্রই ২০  শে জুন  ১৯৯৯ টোলোলিং  মিশন  সমাপ্ত করে ৫১৪০  পয়েন্টটি পুনরুদ্ধার করা হয়। ৪ ঠা  জুলাই ১৯৯৯ হ’ল কৃতিত্বের আর একটি দিন যখন টাইগার হিলস অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী সামনের দিকে এগিয়ে চলল এবং শত্রুকে পিছনে ঠেলে বাটালিক সেক্টরের সমস্ত পয়েন্ট পুনরুদ্ধার করা হল ।ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৪ তম রেজিমেন্ট পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের লক্ষ্য করে শক্তিশালী বোফর্স বন্দুক ব্যবহার করেছিল এবং শীঘ্রই ভারত এলওসি-তে বিমান হামলা শুরু করে।
পাকিস্তান তার বিমান বাহিনী ব্যবহার করতে পারেনি, কারণ পাকিস্তান বিশ্বকে জানিয়েছিল যে মুজাহিদিনরা তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে।  বিমান বাহিনী ব্যবহার করে পাকিস্তান বিশ্বের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যেত।কারগিল যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানী সেনা মারা গিয়েছিল। কার্গিল যুদ্ধে নর্দান লাইট ইনফ্যান্ট্রি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কারগিল যুদ্ধের সময় পররাষ্ট্রসচিব শামসাদ আহমদ খান বলেছিলেন যে ‘এ জাতীয় সময় যে কোনও বিদেশি নীতির পক্ষে খুব খারাপ। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি কিন্তু পুরো বিশ্বই যুদ্ধের জন্য আমাদেরকে দায়বদ্ধ ঘোষণা করেছিল। আমাদের বিশ্ব থেকে প্রচণ্ড চাপ ছিল এবং আমাদের পিছু হটতে বলা হয়েছিল, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব পিছু হটানোর সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ’
প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আলী কুলি খান কারগিল পরাজয়কে ইতিহাসে পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে নিকৃষ্ট পরাজয় হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন, যে অনেক নিরীহ প্রাণ হারায়।
কারগিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্কিত অনেকগুলি তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল, এর মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা  মাদক পদার্থে আসক্ত।পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে এমন হৈচৈ হয়েছিল যে তৎকালীন অ্যাডমিরাল জেনারেল ফয়সুদ্দিন বুখারী সরাসরি মোশাররফকে প্রশ্ন করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে ‘ এই অপারেশন সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান না থাকলেও আমি সেনাবাহিনীর এই বিশাল সংঘবদ্ধতার  পেছনের উদ্দেশ্য জানতে চাই? কেন আমরা অনুর্বর জমির জন্য লড়াই করছি?’পুরো বিশ্বের পাশাপাশি এমনকি চীন পাকিস্তানকে কারগিল শিখর থেকে সেনাবাহিনী ফিরিয়ে আনতে চাপ দিয়েছিল। ।
পারভেজ মোশারফ দাবি করেছেন যে কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তান জিতেছিল, তবে সত্যটি হল যে পাকিস্তান তার সৈন্যদের কার্গিলের উঁচু চূড়ায় মারা যেতে ত্যাগ করেছিল। অনেক পাকিস্তানি সেনার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে তাদের পেটে ঘাস ছিল, যার অর্থ তাদের কাছে খাবার কিছুই ছিল না।মোশারফ তাঁর বইয়ে লিখেছিলেন যে ‘সেনাবাহিনী যা অর্জন করেছিল তা কূটনীতিতে হারিয়ে গিয়েছিল।’ তবে নওয়াজ শরীফ এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন যে ‘আমি যখন আমেরিকার সাহায্য নিতে গিয়েছিলাম, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে রাজি হয়েছিল, ততক্ষণে ভারতীয় সেনাবাহিনী ছিল পাকিস্তান সৈন্যদের কাছ থেকে এই অঞ্চলটি খালি করে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছিল। আমিই পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বিব্রতকর পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচালাম। ’মোশারফের মতে তিনি নওয়াজ শরীফকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কথা বলতে বলেননি, তবে নওয়াজ শরীফ বলেছিলেন যে তিনি যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছিলেন, মোশাররফ তাকে বিমানবন্দরে নামিয়ে
শরীফকে আমেরিকার সাথে কথা বলার জন্য বললেন, যাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা পারত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামনের আক্রমণ থেকে বাঁচতে।
প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই পাকিস্তানে জবাদিহিতার কোনও ব্যবস্থা নেই। আজ কার্গিল যুদ্ধজয়ের ২২ বছর পূর্তি। ১৯৯৯ সালে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে তৎকালীন কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় ঢুকে পড়ে পাক সেনা।

পাকিস্তানি সেনারা নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ভারতের সীমান্তে ঢুকে পড়েছিল। তাদেরকে পিছু হঠাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শুরু করা হয় ‘অপারেশন বিজয়’।২ মাস ধরেছিল চলেছিল ভারত-পাক যুদ্ধ। ভারতীয় সেনাদের মরণপণ লড়াইয়ের মুখে শেষপর্যন্ত ১৯৯৯ সালের ২৬ জুলাই পিছু হঠতে বাধ্য হয় পাক সেনা।অপারেশন বিজয়ের মতোই ভারতীয় বায়ু সেনাবাহিনীর অপারেশনের নাম ছিল ‘অপারেশন সফেদ সাগর’।প্রতিবছর এই দিনটিকে কার্গিল বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৫২৭ জন বীর ভারতীয় সেনা শহিদ হন। ১৩০০-র বেশি জওয়ান আহত হয়েছিলেন। ১৪-১৮ হাজার ফুট উচ্চতায় চলেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর দেশরক্ষার লড়াই।ভারতীয় জওয়ানদের শুধু পাকিস্তানি সেনা জওয়ানদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ছিল না। তাঁদের লড়াই করতে হচ্ছিল প্রবল ঠান্ডার বিরুদ্ধেও। যে সময়ে কার্গিল যুদ্ধ হচ্ছিল, তখন, বেশ কিছু অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে আরও কম।২৬ জুলাই ১৯৯৯, আজকের দিন পাকিস্তানি সেনাদের পিছু হঠতে বাধ্য করে ভারতীয় সেনারা। কার্গিলের ওই যুদ্ধে জয় হয় ভারতের। কার্গিলে ভারতীয় তেরঙা উত্তোলন করে ভারতীয় সেনা।আজ যুদ্ধজয়ের কথা মাথায় রেখে টোলোলিং, টাইগার হিলের লড়াইকে স্মরণ করতে লাদাখের দ্রাস এলাকায় কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়ালে ৫৫৯টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।

আজ কার্গিল যুদ্ধজয়ের ২২ বছর উদযাপন করা হচ্ছে। দিল্লিতে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ছিলেন সেনাবাহিনীর তিন প্রধানও।কার্গিল বিজয় দিবসের দিন আত্মবলিদান করা ভারতীয় সেনা জওয়ানদের প্রতি নিজের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজসকালে তিনি বীর যোদ্ধাদের স্মরণে টুইট করেন। তাতে গত বছরের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের অংশ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে তিনি কার্গিল দিবস প্রসঙ্গে বলছিলেন। বীর যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছিলেন তিনি।  এদিন প্রধাণমন্ত্রী  মোদী  লেখেন, ‘আমরা বলিদান ভুলিনি। আমরা সেই বীরত্ব মনে রেখেছি। আজ কার্গিল বিজয় দিবসে আমরা সেই সব জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি যাঁরা কার্গিলে আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্যে নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের এই বীরত্ব আমাদের প্রতিদিন অনুপ্রেরণা দেয়”.

ভাবুন, এত বড় ভুলের জন্য দায়ী সেনাপ্রধান পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন এবং এই যুদ্ধে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বদানকারী সেনা অফিসার পদোন্নতি পেয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে এই সিদ্ধান্তে আসতে পারে যে পাকিস্তান ফ্যান্যাটিক ফোর (চার সেনা কর্মকর্তা যারা কারগিল হামলার পরিকল্পনা করেছিল) এর শিকার হয়েছিল এবং কারগিল একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা অভিযানহিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল।

সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.