আজ “ভারত রত্ন” নানাজী দেশমুখজীর জন্মজয়ন্তী !

রাষ্ট্রঋষি চন্ডিকাদাস অমৃতরাও দেশমুখ ওরফে নানাজী দেশমুখ : লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে দেশ ও সমাজসেবার জন্য নিবেদিত প্রাণ এক মহাত্মা।

মহারাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৬ সালে : BITS, Pilani থেকে স্নাতক : জীবন সমর্পণ রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে : যোগদান পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে ….কর্মভূমি উত্তরপ্রদেশ …. শুরুতেই গোরক্ষপুর ….গুরু গোলওয়ালকরের নির্দেশে শুরু সঙ্ঘের কাজ ….. প্রথম সরস্বতী বিদ্যা মন্দির প্রতিষ্ঠার গৌরবও তাঁর ললাটেই …!

স্বাধীন ভারতে গান্ধীহত্যা পরবর্তী দুঃসময়ে আত্মগোপন করে চালিয়ে যান জাতীয়তাবাদী লেখালেখি : জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্তি : বাজপেয়ীজীর বাগ্মীতা ও নানাজীর সাংগঠনিক দক্ষতা…ঝড়ের গতিতে বিস্তারলাভ জনসঙ্ঘের…. জরুরী অবস্থা পরবর্তীতে লোকসভায়…লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ ও প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশায়ের অনুরোধ সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদে মন্ত্রীপদ প্রত্যাখ্যান :: সারা জীবন জুড়েই নজির রেখে গেছেন “আপনি আচারি ধর্ম”ব্রতে…!

৬৫ বছর বয়সে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন সক্রিয় রাজনীতি থেকে…….সমর্পণ করেছেন নিজেকে নতুন করে গ্রামনির্মাণের কাজে…..! জড়িয়ে ছিলেন আচার্য বিনোবা ভাবের “ভূদান” আন্দোলনের সাথে….জয়প্রকাশ ও লোহিয়ার কংগ্রেস-বিরোধী আন্দোলনেও….।

১৯৮০ থেকে ২০০০ : জাতীয়তাবাদী রাজনীতি যখন ভারতীয় রাজনীতিতে চালিকাশক্তির আসনে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে….তখন তিনি তার থেকে অনেক দূরে… উত্তর প্রদেশ/মধ্যপ্রদেশের সীমানায় চিত্রকূট পর্বতের পাদদেশে…. ।

শ্রী রাম তাঁর ১৪ বছর বনবাসের ১২ বছর কাটিয়েছেন যেখানে… সেখানে, অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর….অথচ স্থানীয় লোকজনের দুর্দশা চোখে দেখা যায় না : সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রাম নির্মাণে নিজেকে নিয়োজিত করার …. রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে “মন্দির নির্মাণ” একটা দিক….. আরেকটি দিক সমাজকে তা অনুভব করানো…. কারন, “রামমন্দির” আর পাঁচটা মন্দিরের একটা নয় : এই মন্দির ভারতবাসীর স্বাভিমান ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক : সমাজের প্রত্যন্ত স্তরের জনগণের উত্থান না হলে “রামমন্দির” আরো একটি মন্দির হয়ে থাকবে…”রামরাজ্য” আসবে না। রাজনৈতিক রথের দায়িত্ব বাজপেয়ী/আদবাণীজীর হাতে তুলে দিলেন, চাইলেই বড়ো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হতে পারতেন….. কিন্তু, নিবেদিত প্রাণ দেশসেবক তিনি… দেশমাতৃকার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যেখানে : সেখানেই তিনি।

১৯৫০ পরবর্তী সময়ে যখন ভারতে কংগ্রেসের বিপরীতে রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন : তখন তিনি ভারতীয় জনসঙ্ঘের কার্যকর্তা : আবার ১৯৮০ পরবর্তী সময়ে যখন জাতীয়তাবাদী রাজনীতি পায়ের তলায় জমি পেতে শুরু করেছে, তখন স্বেচ্ছায় সরে গিয়েছেন, মন দিয়েছেন সমাজ নির্মাণের মধ্যে দিয়ে জাতি ও রাষ্ট্র নির্মাণে : এই জন্যই তিনি রাষ্ট্রঋষি !

রাজ্যসভায় ছিলেন মনোনিত সদস্য হিসেবে: রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে অনেক দূরে, ক্ষমতার বৃত্ত স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করে….”পরমবৈভবশালী” ভারত নির্মাণে এমন আত্মসমর্পণ একজন স্বয়ংসেবকের পক্ষেই সম্ভব। ২০১০ এ নিঃশব্দে প্রয়াণ : কোলাহলের থেকে অনেক দূরে…..।

২০১৯ এ এসে রত্নগর্ভা “মা ভারতী”র এই পুত্র নতুন করে “ভারত-রত্ন” হলেন না, তিনি মা ভারতীর ‘সোনার ছেলে’ …মা ভারতীর ‘রতন’ তিনি ছিলেনই….ভারতবাসী তার স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদেরকেই আসলে ধন্য করলো।

রাষ্ট্র-ঋষি “ভারত রত্ন” নানাজী দেশমুখ কে প্রণাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.