চাকরিজীবীদের সুদিন দিতে আরও ছাড় আয়করে, ইঙ্গিত খোদ মোদীর

আমাদের দেশে সামগ্রিক ক্রেতাচাহিদার সিংহভাগটাই আসে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের থেকে। কিন্তু কমছে ভোগব্যয়। দেশের জনগণ ভোগব্যয়ের জন্য খরচ কমাচ্ছেন এবং সেটাই ক্রেতাচাহিদা কমে আসার প্রধান কারণ। ব্যাঙ্কের সুদের হারা কমা থেকে নানা কারণে বাজারমুখী নন এই ক্রেতারা। এখন তাই মধ্যবিত্তদের আয় বাড়ানোই এখন লক্ষ্য মোদী সরকারের। সেটা করতেই কর কমিয়ে মধ্যবিত্তের হাতে টাকা দিতে চায় অর্থমন্ত্রক।

ব্যক্তিগত আয়করের হার, সুদ এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলির আয়করের বোঝা অনেকখানি কমিয়েও হাতেনাতে ফল কিছু মেলেনি। এবার তাই নতুন করে আয়করে ছাড়ের কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগেই এ‌মন ইঙ্গিত মিলেছ। এবার খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই ইঙ্গিত দিলেন। রবিবার থাইল্যান্ডে আদিত্য বিড়লা গ্রুপের একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বলেছেন, তাঁর সরকার কর কাঠামোকে আরও জনদরদী করে তুলতে চায়। লক্ষ্য, আরও বেশি করে বিদেশি পুঁজি দেশে নিয়ে আসা এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা।

নতুন শিল্পে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো আশা এই মুহূ‌র্তে দেখা যাচ্ছ না। দেশে উৎসবের মরসুমেও গাড়ি-বাড়ি-ভোগ্যপণ্যের বাজারে বিক্রি উৎসাহজনক নয়। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভাবনায় এখন ব্যক্তিগত আয়কর ব্যবস্থার সংস্কার। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণে বাজেটে ব্যক্তিগত আয়করদাতাদের জন্য করসীমায় বড় ধরণের রদবদল করতে পারে মোদী সরকার। সেই নতুন কর কাঠামোয় সবচেয়ে বেশি সাশ্রয় হতে পারে সেই সমস্ত করদাতার যাঁদের বছরে মোট আয় ১০ লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকার মধ্যে।

আয়কর দফতরের উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি’র সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে ব্যক্তিগত আয়করের সর্বোচ্চ কার্যকরী হার ৪২.৭৪ শতাংশ। এর মধ্যে সেস ও সারচার্জও রয়েছে। তুলনায়, ওই করের এশিয় গড় হল ২৯.৯৯ শতাংশ! হিসেব বলছে ভারতীয়রা বেশি কর দেন।

বর্তমান কর কাঠামোয় বছরে ১০ লক্ষ টাকার বেশি আয় হলেই ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। গত অগস্ট মাসে নতুন প্রত্যক্ষ কর বিধি নিয়ে অখিলেশরঞ্জন কমিটি যে রিপোর্ট অর্থমন্ত্রককে জমা দিয়েছে তাতে ওই কর হার কমিয়ে ২০ শতাংশ করা এবং বছরে ২ কোটি টাকার বেশি আয় করেন এমন ব্যক্তিদের থেকে ৩৫ শতাংশ প্রান্তিক হারে কর নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে, ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রে যাবতীয় সারচার্জ তুলে দেওয়ার সুপারিশও ওই রিপোর্টে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কর্পোরেট সংস্থাগুলির জন্য করের হার কমানোর পাশাপাশি করছাড় নেওয়ার বিভিন্ন সুবিধা প্রত্যাহার করেন। আগামী বাজেটেও ব্যক্তিগত আয়ের ক্ষেত্রে করের হার কমানোর পাশাপাশি করছাড় নেওয়ার একাধিক বর্তমান সুবিধা তুলে দিতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের ঊর্ধ্বসীমা ২ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২.৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছিল। এবার সেটাই বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমালেও অতিরিক্ত ব্যাঙ্কঋণ নেওয়ার আর বিশেষ আর্থিক ক্ষমতা নেই গৃহস্থ পরিবারগুলির। কর কমিয়ে তাদের হাতে আয় বাড়ানোই সহজ উপায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.