CAB কী?
=> এই সংশোধনীটি বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, পার্সী, জৈন ও বৌদ্ধদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করবে। এই বিলে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার সময়কাল ১১ বছর থেকে কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছে।
CAB গুরুত্বপূর্ণ কেন ?
=> এর ফলে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অমুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা নাগরিকত্ব পাবে। এটি তাদের জন্য ‚ যারা তাদের নিজেদেরই দেশে নির্যাতনের কারণে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল।
কারা নির্যাতিত হয়?
=> নিত্যনৈমিত্তিক ভাবে অমুসলিমদের পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে পালাতে হচ্ছে । সংখ্যালঘু মহিলারা সেখানে প্রতি মাসে অপহৃত হন এবং জোর করে তাদের ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়। প্রতিমূহুর্তেই সেখানে তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
এই বিলে কি ধর্মের ভিত্তিতে কোনো পার্থক্য করা হয়েছে?
=> না। ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে এক্ষেত্রে কোনও পার্থক্য করা হয়নি । ভারত সংবিধান মেনে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র । এই বিলে পাকিস্তান ‚ বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মুসলমানদের নাগরিকত্বকেও অস্বীকার করা হয়নি। অত্যাচারিত মানুষদের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য এটি কেবল এক পদ্ধতিগত পরিবর্তন মাত্র।
CAB কি মুসলিম বিরোধী?
=> পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা ১৫% থেকে হ্রাস পেয়ে ১.৫% হয়েছে। এই নিপীড়িত হিন্দুদের জন্য বর্তমানে ভারতই তাদের একমাত্র দেশ, কারণ এই ভারতেই তাদের পূর্বপুরুষেরা বহু শতাব্দী ধরে বাস করেছেন । আর এই বিলে শুধু হিন্দুদেরই নয় খ্রিস্টান, শিখ, পার্সী, জৈন এবং বৌদ্ধদেরও একইভাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
ভারতকে নিজেকেই যখন অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলা করতে হচ্ছে ‚ তখন কেন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করবে?
=>এরা ভারতে অর্থনৈতিক অভিবাসী নন বা নিছক চাকরি বা উন্নত জীবনের সন্ধানেও এখানে আসেননি। ধর্মবিশ্বাসে অমুসলিম হওয়ার কারণে তারা তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন ।
ভারত নাগরিকত্ব সংশোধনীর মাধ্যমে কোন বৃহত্তর বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করছে?
=> এই সংশোধনীর মাধ্যমে ভারত পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের জন্যে নাগরিকত্ব পাওয়া অনেক সহজতর করে দিচ্ছে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ভারত সারা বিশ্বে মানবাধিকারের প্রশ্নে এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠবে।
CAB মুসলিম বিরোধী নয়
=> এই সংশোধনীটি কখনোই মুসলিম বিরোধী নয়। পাকিস্তান , বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুদের জন্য এটি একটি অধিকার মাত্র।
CAB মানবাধিকারকে সুরক্ষিত করে
অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম হলো প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু হিন্দু, শিখ, পার্সী ও খ্রিস্টানরা পাকিস্তান ‚বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
প্রস্তাবিত বিলে পুরো পৃথিবী থেকে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং শিখদের ভারতে এসে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য নিখরচায় প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র এই তিনটি দেশ ( পাকিস্তান , বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান) এর অমুসলিম নাগরিকরাই এই সুবিধা পাবে।
CAB পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মুসলিমদের ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা থেকে বঞ্চিত করেনা । উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় ‚ গায়ক আদনান সামি যেমন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন ‚ বাকিরাও একইভাবে আবেদন জানাতে পারবে ।
“পাকিস্তান যদি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হত তবে ভারতে CAB এর দরকারই পড়ত না। পাকিস্তানে ঘটা ধর্মীয় নিপীড়নের জন্যই আমাদের এই কাজটি করতে হবে। ”
-হিমন্ত বিশ্ব শর্মা
নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে ডা. রাজেন্দ্র প্রসাদ নিয়ে কী বলেছিলেন?
‘‘ যারা এখনও অনেক কষ্ট ও বঞ্চনা ভোগ করছে সেইসব বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন ’’ (জানুয়ারী 26, 1951 তে দেওয়া বক্তৃতা থেকে)
CAB সম্পর্কে ভুল ধারণাবলী
শুধুমাত্র মুসলমানদের ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না, তবে অন্যান্য ধর্মের মানুষেরা অবশ্যই স্বাগত
=> বাস্তবতা: CAB অমুসলিমদের স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব দেবে না। এই আইনের অধীনে মুসলিমরাও নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে । বৈধ ভিসার অধিকারী প্রত্যেকের ভারতে প্রবেশের অনুমতি আছে।
এই বিলে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে মুসলিম শরণার্থী বা অন্য দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের সেই দেশে ফেরত পাঠানো হবে
=> বাস্তবতা : এই বিলে কোথাও একথা উল্লেখ করা হয়নি যে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের অধিকারী ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যান্য শরণার্থীদের স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফেরত পাঠানো হবে।
প্রচুর নির্যাতনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গা এবং বেলুচদের বাদ দেওয়াটা CAB এর সাম্যতা লঙ্ঘন করে
=> বাস্তবতা: বালুচরা লড়াই করছে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার জন্য ; সুতরাং এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যার মধ্যে ভারতকে টানা কখনোই উচিত নয়। আর রোহিঙ্গারা মায়ানমার থেকে এসেছে। এই বিলটি কেবলমাত্র পাকিস্তান , বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুদের নির্যাতন সম্পর্কে। তবুও বলা যায় ‚ রোহিঙ্গারা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছে এবং তাদের বিষয়টি বিচারাধীন আছে।
ভারতের সংবিধানে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ
=>বাস্তবতা : এটি স্পষ্টতই মিথ্যে । সুনির্দিষ্ট ধর্মের সদস্যদের বিভিন্ন সরকারী কর্মসূচী ও পরীক্ষায় সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে । সংখ্যালঘু বৃত্তির ব্যাপার টাও এই ভুল ধারণাটিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে সংশোধন করে দেয়।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ হলো এক ঐতিহাসিক ভুল সংশোধন করার উদ্যোগ। পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফঘানিস্তান থেকে নির্যাতনের শিকার হওয়া সংখ্যালঘুরা হল ভারতের প্রকৃত নাগরিক।
পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের দায়িত্ব নেওয়া হলো ভারতবর্ষের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব।
পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে নির্যাতনের শিকার হওয়া সংখ্যালঘুদেরকে কখনোই সেই মৌলবাদী দেশগুলির সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের অবৈধ অভিবাসীদের সাথে তুলনা করা যায় না।
‘‘ হিন্দু ও শিখরা পাকিস্তানে অবস্থান করছে, তারা যদি সেখানে থাকতে না চায় তবে তারা যেকোন উপায়ে ভারতে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের চাকরি দেওয়া এবং তাদের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করা হবে ভারত সরকারের প্রথম কর্তব্য। ’’
– ২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ এ একটি প্রার্থনা সভায় দেওয়া মহাত্মা গান্ধীর বক্তব্য!