কোনও একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছনো তো দূর, ‘গর্তরহস্য’ ক্রমেই আরও বাড়ছে। হাতিয়ার সেই এক, স্যাটেলাইট ইমেজ ( উপগ্রহ চিত্র )। কিন্তু এই এক হাতিয়ারকে কাজে লাগিয়েই দেশি-বিদেশি মিডিয়া বিভিন্নভাবে তাকে বিশ্লেষণ করছে। কারও মতে, এক বছর আগের স্যাটেলাইট ইমেজের সঙ্গে বর্তমানের ইমেজের বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই। অর্থাৎ বিস্ফোরণ যে হয়েছে, তার কোনও প্রমাণ নেই। কেউ দাবি করেছেন, বিস্ফোরণ সেরকম ব্যাপকভাবে না হলেও বিল্ডিংয়ের ছাদে অন্তত চারটি কালো স্পট দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, বড় ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বিস্ফোরণ হয়েছিল। আবার কেউ দাবি করেছেন, স্যাটেলাইট ইমেজকে খুব কাছ থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, অন্তত ১০ থেকে ১২টি গর্ত দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ বিস্ফোরণ হয়েছিল, এবং তা বেশ ভালোভাবেই হয়েছিল।
হ্যাঁ, বালাকোটের জইশ শিবিরে বিমান হামলার কথাই বলা হচ্ছে।
৪ মার্চ নিজেদের একটি উপগ্রহকে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পাঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর প্ল্যানেট ল্যাবস আইএনসি সংস্থা। এ ছাড়া এই মুহূর্তে সেই এলাকার কোনও উপগ্রহ চিত্র নেই। আর এই ছবিকে কাজে লাগিয়েই উঠে আসছে তিন রকমের বিশ্লেষণ। দেখে নিন, কে কী বলছে?
রয়টার্স: এই উপগ্রহ চিত্রকে হাতিয়ার করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বালাকোটের জাবা গ্রামে জইশের জঙ্গিঘাঁটি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোনও কিছু ভেঙে পড়ার প্রমাণ নেই। অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মাদ্রাসা-সহ মোট ছ’টি বাড়ি। ২০১৮ সালের উপগ্রহ চিত্রের সঙ্গে ২০১৯ সালের ৪ মার্চের উপগ্রহ চিত্রের বিশেষ কিছু ফারাক নেই। খালি একটাই ফারাক। ২৬ ফেব্রুয়ারির আগে ওই এলাকায় কিছু তাঁবু দেখা গিয়েছিল। সেগুলির হদিশ নেই। হয় সেগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথবা বায়ুসেনার অভিযানেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তবে ভারত সরকার যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরছিল, তার কোনও প্রমাণ মেলেনি বলেই তাদের দাবি।
শুধু তাই নয়, রয়টার্সের দাবি, এই ঘটনার পর দু’দিন ওই এলাকায় নিজেদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে তারা। স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিনিধিরা জানতে পেরেছেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ওই এলাকায় বিস্ফোরণ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেগুলি সবই হয়েছিল জঙ্গলের মধ্যে। চারটি গর্তও নাকি গ্রামবাসীরা দেখিয়েছেন প্রতিনিধিদের। এমনকী এই বিস্ফোরণে বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়েছে বলে দাবি করেছেন গ্রামবাসীরা।
দ্য প্রিন্ট: প্রিন্ট আবার একই উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে রয়টার্সের থেকে কিছুটা আলাদা সিদ্ধান্তে এসেছে। প্রিন্ট দাবি করেছে, সে রাতে বিস্ফোরণ হয়েছিল। এই বিস্ফোরণের ফলে প্রধান বিল্ডিং অর্থাৎ জইশ ঘাঁটির উপর চারটি কালো স্পট দেখা গিয়েছে। এই স্পটগুলিকে চিহ্নিত করে প্রিন্টের তরফে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় বায়ুসেনার ছোড়া মিসাইলের প্রভাবেই এই গর্তগুলি হয়েছে। অর্থাৎ পাকিস্তানের তরফে যে দাবি করা হচ্ছে, হামলায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তা ঠিক নয়। তবে বিস্ফোরণের ফলে কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারেনি প্রিন্ট।
এছাড়া প্রিন্টের আরও দাবি, যে এলাকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরের তাঁবু ছিল, সেখানেও বিস্ফোরণের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ সেদিন যে বিস্ফোরণ হয়েছিল, তা নিশ্চিত।
টাইমস নাও: রয়টার্সের দাবিকে খারিজ করে একদম উল্টো দাবি টাইমস নাও-এর। তাদের তরফে এই উপগ্রহ চিত্রকে আরও কাছ থেকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাদের দাবি, উপগ্রহ চিত্রে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি গর্ত রয়েছে মূল প্রশিক্ষণ শিবিরের ছাদে। এই গর্ত ভারতীয় মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া মিসাইলের ফলে হয়েছে বলেই দাবি তাদের। আরও বলা হয়েছে, এই হামলায় স্পাইস ২০০০ গ্লাইড বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল। এই বোমার নিয়মই হচ্ছে, যেখানে পড়ে, সেখান থেকে গর্ত করে ভেতরে ঢোকে। অর্থাৎ দোতলা বিল্ডিংয়ের ছাদে পড়ে গর্ত করে তা নীচে গিয়ে বিস্ফোরণ করেছে, এমনটাই দাবি টাইমস নাও-এর। আর সে জন্যই হয়তো বিল্ডিংটি ভেঙে পড়েনি। তবে ভিতরে ঢুকলে হয়তো ক্ষয়ক্ষতির আসল পরিমাণ বোঝা যাবে।