মোটা মোটা সোনার বার। সংখ্যায় হাজার ছয়েকের কাছাকাছি। ওজন সব মিলিয়ে প্রায় ৩০৩ কিলোগ্রাম। কিন্তু সবই ঝুটো। এই নকল সোনার বার উদ্ধার হয়েছে আই মনিটারি অ্যাডভাইসরি (আইএমএ) সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা, পঞ্জি স্কিমের মাস্টারমাইন্ড মহম্মদ মনসুর খানের বাড়ির সুইমিং পুল থেকে। বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর কর্তারা জানিয়েছেন, এই ঝুটো সোনা দেখিয়েই আমানতকারীদের লগ্নি করতে প্রলুব্ধ করতেন মনসুর।
সিট জানিয়েছে, মনসুরের বেঙ্গালুরুর অ্যাপার্টমেন্টের সাত তলার সুইমিং পুলের নীচে লোকানো ছিল এই বিপুল পরিমাণ নকল সোনা। সম্ভবত দেশ ছেড়ে পালাবার আগে বাড়ির সুইমিং পুলে লুকিয়ে রেখে গিয়েছিলেন মনসুর। দুবাই থেকে দেশে ফেরার পর গত মাসেই দিল্লির বিমানবন্দরে আইএমএ-র মালিক মহম্মদ মনসুর খানকে পাকড়াও করে ইডি। চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্ত তিনি।
মোটা অঙ্কের সুদের লোভ দেখিয়ে নিজের সংস্থার অধীনে চিট ফান্ডের ব্যবসা ফেঁদে বসেন মনসুর। নাম রাখেন পঞ্জি স্কিম। তাতে বিনিয়োগ করেছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। সময় পেরিয়ে গেলেও পাওনা টাকা না মেলায় একের পর এক অভিযোগ জমা পড়তে থাকে মনসুর ও তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে। ২০১৮ সাল থেকে আইএমএ-র উপর নজর পড়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-সহ অন্যান্য সংস্থার। তার মধ্যেই, চলতি বছর জুন মাসে মনসুর আচমকা বিদেশে পাড়ি দিলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই বিনিয়োগকারীরা। প্রায় ২৩ হাজার আমানতকারীদের তরফে লিখিত অভিযোগ পুলিশের কাছে। মনসুরের নামে লুক-আউট নোটিস জারি করে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
এর পর ঘটনার জল গড়ায় অনেক দূর। তদন্তে নামে ইডি। জানা যায়, দেশ ছেড়ে পালাবার আগে একটি অডিয়ো ক্লিপ রেখে গিয়েছিলেন মনসুর যাতে বলা হয়েছিল বিভিন্ন আধিকারিককে ৪০০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন তিনি। কর্নাটকের কংগ্রেস বিধায়ক রোশন বেগও এই ঘটনায় জড়িত বলে দাবি করেছিলেন মনসুর। তার পর থেকে রোশন বেগকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা।
এর মধ্যেই মনসুর খানের নাগাল পায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। যার পর, ইন্টারপোলকে চাপ দিতে শুরু করে ইডি, যাতে তাঁর বিরুদ্ধে ব্লু কর্নার নোটিস জারি করা যায়। দেশে ফেরার মুহূর্তেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। মনসুরের সঙ্গেই পাকড়াও করা হয়েছে আরও ২৫ জনকে। যার মধ্যে রয়েছে আইএমএ-র ১২ জন ডিরেক্টর, একজন কর্পোরেটর ও তার স্বামী, বেঙ্গালুরু (উত্তর) সাব ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার-সহ অনেকে।