যারা আশা করছেন বাংলাদেশের হিন্দু নিধনে যাদবপুরের অতিবামপন্থীরা প্রতিবাদ করবে, তাঁরা তাঁদের এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানেনই না l এই বিশ্ববিদ্যালয় একসময় তৈরি হয়েছিল, NCE বেঙ্গল থেকে যাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশী সংস্কৃতি এবং আধুনিক শিক্ষার মিলনক্ষেত্র তৈরি করা l ত্রিগুণা সেন, হেমচন্দ্র গুহ, গোপাল সেন, করুনা রায় থেকে নীতিন সোম, ভোলা ঘোষের মত বহু মানুষ বিদেশের বিলাসবহুল জীবন ত্যাগ করে দেশ গড়ার কাজে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে গেছেন l কিন্তু গত 50 বছরের সেই যাদবপুরের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস গুরুহত্যা, বোঝাপড়ার রাজনীতি, কৃতঘ্নতা তথা মেরুদন্ডহীনতা এবং মিথ্যাচারের এক অসাধারণ ককটেল l কুমিল্লার খুনের প্রতিবাদ তাদের ব্যক্তিস্বার্থের পরিপন্থী l তাই সেটা তাঁরা করবে না l
- খুন : সোভিয়েত রাশিয়া আমাদের দেশে সাবভার্সন শুরু করে লালবাহাদুর শাস্ত্রী, দীনদয়াল উপাধ্যায়, রামমনোহর লোহিয়াদের হত্যা করে l আমাদের পশ্চিমবঙ্গের এই সময় প্রথম বলি, ডঃ গোপাল সেন l হ্যা l তথাকথিত, ইন্টেলেকচুয়াল বামপন্থী যাদবপুর ছাত্র ইউনিয়নের যাত্রা শুরু হয় নৃশংসভাবে গুরুহত্যার মাধ্যমে l তারপরে, সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের ভয়ে কেঁচোর মত কয়েক বছর গর্তে লুকিয়ে থাকা এবং রায়ের বিদায়ের পর আবার আত্মপ্রকাশ এবং টানা 44 বছর ইউনিয়ন ধরে রাখা l
- বোঝাপড়া: যাদবপুরে একসময় ছাত্ররা ছিল নক্সাল এবং শিক্ষকরা সেন্টার-লেফট l কর্মচারী সংসদ সিপিএম এবং এক্সেকিউটিভ কাউন্সিল বলাই বাহুল্য সিপিএম l উপাচার্য হিসেবে বেশ কয়েকজন ব্রাহ্মসমাজের মানুষ ছিলেন, যারা এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিন্দু বিরোধী জনগোষ্ঠী l শিক্ষক সংগঠন ধীরে ধীরে সিপিএম দখল করলে, নাক্সালরাও সিপিএম এর ধামাধরা হয়ে যায় l পরবর্তীকালে তৃণমূল ক্ষমতায় এলে রাজ্যপাল, সংসদদের অপমান করে নক্সালপন্থীরা প্রমান করেন যে তাঁরা সবচেয়ে কট্টর অনুপ্রাণিত l
- কৃতঘ্নতা ও মেরুদন্ডহীনতা: 11 মে 1994: শিক্ষক আন্দোলনে বন্ধ যাদবপুর l একজন এস এফ আই নেতাকে স্থাপত্য বিভাগে শিক্ষক বানাতে চায় সিপিএম l ওদিকে অসীম দাশগুপ্তকে ঘাটতিশূন্য বাজেট বানাতে হলে শিক্ষক পদে নিয়োগ অসম্ভব l একজন শিক্ষকের নামে মিথ্যা কেস দেয়া হল, যাতে তাকে তাড়িয়ে ওই ছাত্রকে আনা যায় l শিক্ষকরা প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করলেন l এদিকে CAT GRE GMAT দিয়ে যারা বসে আছে, তাদের রক্তচাপ বাড়ছে l অনশন শুরু করলো ছাত্ররা l রাত্রে আলো বন্ধ করে কয়েকশো রিফুজি কলোনির গুন্ডারা আক্রমণ করলো ছাত্রদের l মমতা ব্যানার্জী সেই রাতে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং শব্দ শুনে নেমে পড়েন গাড়ি থেকে এবং ছাত্রদের বাঁচান l একটি বারের জন্য মমতা ব্যানার্জীর প্রতি কোন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনি ছাত্র সংসদের নেতারা l
অথচ যখন মমতা ব্যানার্জী মুখ্যমন্ত্রী হলেন, তখন এই মেরুদন্ডহীন ইন্টেলেকচুয়াল নক্সালরা তাকে খুশি করার জন্য রাজ্যপাল এবং বাবুল সুপ্রিয়কে অপমান করতে পিছপা হয় নি l - মিথ্যাচার : রাশিয়া চীনের দালালি করলেও এঁদের মূল লক্ষ্য বাকী জীবন আমেরিকায় কাটানো l প্রসঙ্গত, গোপাল সেনের খুনি কিন্তু আজও কানাডায় আছেন সম্ভবতঃ l আমার ভ্রাতৃপ্রতিম শুভজিৎ ব্যানার্জীর একটা পোস্ট থেকে জানলাম,
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে Visa পাবার সময় একটি অংশে লিখতে হয় :
“In general, any immigrant who is or has been a member of or affiliated with the Communist or any other totalitarian party (or subdivision or affiliate thereof), domestic or foreign, is inadmissible.”
Chapter 3 – Immigrant Membership in Totalitarian Party, United States of America Citizenship and immigration services.
প্রবঞ্চক, মিথ্যাচারী নক্সালরা যদি সত্যিই তাদের গুরু মার্ক্সকে বিন্দুমাত্র সন্মান করতো, তবে তাঁরা আমেরিকায় না প্রবেশ করাকেই শ্রেয় মনে করতো l আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, কাল যদি এই শর্ত আমেরিকা হিন্দুদের উপর চাপিয়ে দেয়, দেশের কোন স্বয়ংসেবক তথ্য লুকিয়ে অর্থাৎ নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে, ওই দেশে যাবে না l কিন্তু যারা হিন্দু সন্তান হয়ে গরু খেতে পারে, তাঁরা নিজের স্বার্থে নিজের নিজের আদর্শ মার্ক্সকে অস্বীকার করবে তাতে আর আশ্চর্য হবার কি আছে l মার্ক্সই তো নিজেই তাদের এই দীক্ষায় দীক্ষিত করেছেন? যারা নিজের স্বার্থে যাদবপুরকে IIT হতে দেয়নি কিম্বা INSTITUTE OF EMINENCE তকমা পেতে দেয়নি, তাঁদের কাছে কুমিল্লা, নোয়াখালীর গনহত্যার প্রতিবাদ আশা করা যায় কি?
সুদীপ্ত গুহ