যাঁরা ফেসবুকে নিজেদের কট্টর জাতীয়তাবাদী ও বিজেপির হিতৈষী বলে পরিচয় দেন, অথচ ক্রমাগত সেটিং থিওরী প্রচার করে চলেন তাঁদের কাছে কয়েকটি বিনীত প্রশ্ন।
1) যদি বিজেপি তৃণমূলের সাথে সেটিং করে থাকে তবে 2021 এর বিধানসভা ভোটের আগে মোদীজী, অমিত শাহজী সহ রাজ্য ও কেন্দ্র স্তরের সমস্ত বড় বিজেপি নেতারা পশ্চিমবঙ্গে ঘোরতর প্রচার করলেন কেন ? বস্তুত বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে যতটা প্রচার করেছে অন্য কোন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে এত প্রচার কোথাও করেছে বলে মনে হয় না। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে জয়লাভ বিজেপির কাছে একটা সেন্টিমেন্টাল ইস্যু ছিল, কারণ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী যে রাজ্যের বাসিন্দা সেই রাজ্যের ক্ষমতায় এসে প্রয়াত শ্যামাপ্রসাদ বাবুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী দেওয়ার একটা বিষয় ছিল। বিবিধ কারণে লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব না হলেও (সে সব কারণ নিয়ে অতীতে বহু পোস্ট হয়েছে) বিজেপির নেতারা চেষ্টার কোন কসুর করতে ছাড়েন নি। এত প্রচার আর প্রচেষ্টার পরেও সেটিং তত্ত্ব একই সাথে অত্যন্ত হাস্যকর ও দুর্ভাগ্যজনক।
2) উপনির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব থাকে না এবং শূণ্য আসনগুলিতে উপনির্বাচনে করানোটাই গণতান্ত্রিক রীতি। ভবানীপুর তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি এবং সেই ঘাঁটিতে মাননীয়ার মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ কে পরাজিত করা almost next to impossible ছিল। তা সত্ত্বেও ভবানীপুরে বিজেপি বিনা যুদ্ধে walk over দিয়েছে, এ কথা বলা যাবে না। প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা তিবরেওয়াল তো বটেই, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিং সহ রাজ্য বিজেপির প্রধান নেতারা যথেষ্ট প্রচার করেছিলেন। ভবানীপুরের হিন্দু অবাঙলী ভোটারদের কথা ভেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী পর্যন্ত প্রচার করে গেছেন। বিজেপির প্রচারের তীব্রতা দেখে তৃণমূল ও তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে প্রচার করেছে। শেষমেষ মাননীয়া একপেশে জয় পেলেও প্রচারে যে দুই পক্ষ তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিল এতে সন্দেহ নেই। এর পরেও সেটিং তত্ত্ব কেন ?
3) Post Poll Violence এবং অনান্য ইস্যু নিয়ে বিজেপির নেতারা রাস্তাঘাটে ও আদালতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই করে চলেছেন। আইনি লড়াই তে প্রিয়াঙ্কা তিবরেওয়াল এবং মাঠে ময়দানের লড়াইতে দেবশ্রী চৌধুরী, আগ্নিমিত্রা পাল, শুভেন্দু অধিকারী ইত্যাদি নেতারা যথেষ্ট নজর কেড়েছেন। তাঁদের লড়াই যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এই সব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিরোধীতাকে ক্রমাগত neglect করে ফাটা রেকর্ডের মতো “সেটিং সেটিং” করা হচ্ছে কেন ?
4) সেটিং তত্ত্বের প্রচারকরা এমনভাবে প্রচার করেন যেন কোন নতুন রাজ্যে ক্ষমতা দখল বিজেপির জন্য বাঁয়ে হাত কা খেল। অথচ প্রকৃত ঘটনা হল নতুন রাজ্যে একটা MLA সিট জেতাও যে কতটা কঠিন সেটা ভুক্তভোগী রাজনৈতিক দলগুলো জানে। তৃণমূল অনেক চেষ্টা করেও পশ্চিমবঙ্গের বাইরের রাজ্যে একটা MLA সিট জিততে পারে নি। সেখানে বিজেপি অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও আসাম ত্রিপুরা তে ক্ষমতা দখল করেছে। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের ভোট শেয়ার 4 গুণ বৃদ্ধি করে প্রায় 40% এ পৌঁছেছে। মনে রাখবেন 213 আর 77 এ যত তফাত 47.9% আর 38.1% এর মধ্যে অতটা তফাত নয়। এমন কি দক্ষিণ ভারতের চারটি রাজ্যে যেখানে বিজেপির প্রায় কোন শক্তি ছিল না, সেখানেও বিজেপি MLA জিতিয়ে বিধানসভাতে পাঠাতে শুরু করেছে। বিজেপির নেতারা শুধু সেটিং করে বেড়ালে এত সাফল্য আসতো কি ?
আমার যতদূর ধারণা যাঁরা সেটিং তত্ত্ব প্রচার করছেন তাঁরা আদেও বিজেপির হিতৈষী নন। এনারা floating voter ও নন। এনারা রীতিমত strategy করে এই সব মিথ্যা প্রচার ও কুৎসা করে চলেছেন যাতে বিজেপি সমর্থকদের মনোবল ভেঙ্গে যায় এবং জনমানসে বিজেপি সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরী হয়। বিজেপি তৃণমূলের সাথে সেটিং করে নিয়েছে এটা বারবার বলে জনগণের একাংশের মনে ঢুকিয়ে দিতে পারলে প্রধান বিরোধ দল হিসেবে বিজেপির বিশ্বাসযোগ্য বড় ধাক্কা খাবে। এর ফলে লাভবান হবে তৃণমূল ও বাম কং। অতীতে যাঁরা বাম সমর্থক ছিলেন তাঁরা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই হিন্দুত্ববাদী ও বিজেপি সমর্থক সেজেছেন যাতে বন্ধুর ছদ্দবেশে অন্তর্ঘাত ঘটাতে পারেন। আশার কথা এই ছদ্দবেশী গুপ্তচরেরা exposed হতে শুরু করেছেন। প্রকৃত বিজেপি সমর্থকদের উচিত এনাদের অপপ্রচারে কান না দেওয়া এবং এনাদের করা কুৎসা ও অপ্রপ্রচার গুলোকে ভদ্র ভাষায় যুক্তিসম্মতভাবে খন্ডন করা এবং প্রকৃত সত্য জনগণের সামনে তুলে ধরা।