কারণ কিছু কথা বলা সত্যিই খুব দরকার
এবার অলিম্পিকে প্রশ্ন উঠছে ভারত থাকতে বাকী দেশগুলো কীকরে এত মেডেল পেলো আর ভারত পেলো না?
হ্যাঁ, উচিত প্রশ্ন, সাথে আরো কিছু প্রশ্নেরও উত্তর দিই, (প্রসঙ্গত, অলিম্পিকে কোনো প্লেয়ার যেতে পারে বিশ্বের নিরিখে সেট করে স্কোর ক্লিয়ার করলে তবেই, অর্থাৎ ভারতের ইন্টারন্যাশনাল প্লেয়ার 100 তে 95 করলে ফ্রান্সের বা কোরিয়ার প্লেয়ারকেও একই ধরনের স্কোর করতে হবে অলিম্পিকে যেতে)
● মেডেল ট্যালিতে একদম প্রথমের দিকেই থাকা আমেরিকার মোট প্লেয়ার
= 610+ জন মত 35টি খেলাতে, গড়ে 17.5 জন খেলাপিছু
● আরেক টপার ও হোস্ট জাপানের মোট প্লেয়ার
= 550+ জন 37টি খেলাতে, গড়ে 14.9 জন খেলাপিছু
● আরেক টপার চীনের মোট প্লেয়ার
= 400+ জন 30টি খেলাতে, গড়ে 13.5 জন খেলাপিছু
● আর ভারতের হিসেবটা
= 125+ জন 18টি খেলাতে, গড়ে 7.0 জন খেলাপিছু
● চীন বা আমেরিকার শুটাররা একটি গোটা দিনে সরকারি খরচে কত গুলি ফাটায়?
= ভারতের শুটাররা ব্যক্তিগত খরচে সারামাসে যত গুলি ফাটানোর চেষ্টা করে, ততগুলো বা তার বেশি।
● বড় বিদেশী অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নরা থাকে কোথায়?
= বেশিরভাগই গেমস ভিলেজের বাইরে, ব্যক্তিগত ভাবে ভাড়া করা বিলাসবহুল হোটেলে যাতে দরকারি সব সুবিধে সাথে সাথেই পাওয়া যায় আর নিভৃতে থাকা যায় গেমস ভিলেজের হৈচৈ এড়িয়ে।
● জার্মানির সেকেন্ড প্রিয় খেলা
= বিশ্বের গোটা শুটিং সার্কিটের প্রাণকেন্দ্রই হলো জার্মানির মিউনিখ আর সুইজারল্যান্ডের খানিকটা।
● আমেরিকান ফুটবল বাদে আমেরিকার সর্বাধিক জনপ্ৰিয় খেলা
= বাস্কেটবল, বেসবল, আইসহকি,
তিনটিই অলিম্পিক ইভেন্টে রয়েছে, প্রথম দুটি এখনই এবং লাস্টেরটি উইন্টার অলিম্পিকে খেলা হয়।
পার্থক্যটা এখনো কোথায় কোথায় হয়ে আছে সেটা বুঝছেন? কম্পিটিশন লেভেল সেম টাফ হয়েও কিন্তু নানা দেশেই এরকম নানা পরিকাঠামোর সমস্যা দেখা গেছে আগেও।
Rio2016 প্রথম থেকেই ভারতে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে গেছিল একটি বিশেষ কারণে। খেলা শুরুর দুয়েকদিনের মধ্যেই ‘শোভা দে’ নামের একজন নিম্নরুচির মহিলা সাংবাদিক ভারতের প্লেয়ারদের ব্যাপারে বলেন “অনেক ঘোরাঘুরি আনন্দ হয়েছে এবার ফিরে এসো”, সেটা নিয়ে বীরেন্দ্র সেওয়াগ ঝড় তোলে ও লোকজন হিট খেয়ে অলিম্পিক দেখতে বসে যায়।
ভীষণ আশ্চর্য হলাম দেখে, এই বছরই প্রোফাইলের কয়েকজন বন্ধু ও তাদের বন্ধু এবং তাদেরও বন্ধুস্থানীয় কয়েকজন এবারের অলিম্পিক টীমের পারফরম্যান্স নিয়ে শোভা দে’র মতোই অবিকল একই টোনে একটার পর একটা বাজে মন্তব্য করেছে। কেউ কেউ তো প্লেয়ারদের খেলা ছেড়ে বিয়ে বা ব্যবসা করার কথাও বলেছে। কোথায় কে কোন কোচের সাথে বসেছে বা হেসেছে সেগুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এরকম নোংরা ব্যক্তিগত আক্রমণ এর আগে কখনোই দেখিনি।
প্লেয়ারদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে গার্জেন বা কোচের বদলে এরা সবাই নিজেরাই আগ বাড়িয়ে এত চিন্তা করছে দেখে ভালোই লাগলো। যদিও লাস্ট 4 বছরের 1460টি দিনে একটাও গঠনমূলক পোস্ট এদের ওয়ালে চোখে পরেনি, হয়তো এরা লাস্ট দেড় দুই বছরের খেলা দেখেইনি, কারণ দেখলেই জানতো কারা যেতে পারে অলিম্পিকে।
আরো কয়েকটা প্রশ্ন করবেন এদের, উত্তরটাও আমিই এখানেই দিয়ে দিলাম,
● বিশ্বে অলিম্পিকের দুই মাস আগে সবথেকে বেশি করোনা নিয়ে আতংক ছড়ানো হয়েছে কোন দেশের মিডিয়ায়?
= ভারত (মধ্য ও উত্তর ভারতে মানসিক আতংক এতই বেশি ছড়ানো হয়েছিল যে বেশিরভাগ ভালো রেজাল্ট বাইরের দিক থেকেই আসছে)
● করোনার আতঙ্কে কোন দেশের সরকারকে বাধ্য হয়ে কিছু প্লেয়ারদের বাইরের দেশে প্র্যাকটিস করতে পাঠানো হয় তড়িঘড়ি?
= ভারত
● পার্সোনাল লেভেলে বড় পুল বা ভালো জিমের অভাব থাকতেও কোন দেশে এই দুটিই দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ ছিল?
= ভারত
● কোন দেশ এথলিটদের একদম আলাদা করে সমস্ত পরিকাঠামো ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে রেখেছিল?
= ভারত নয়, এটি চীন
● কোন দেশে হাটেবাজারে ভিড় হলেও মাঠে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল?
= ভারত
● শারীরিক কসরতের খেলাতে কোন দুটি অঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
= লাংস আর হার্ট
● কোন দেশে রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা ইচ্ছেমত ভাষণ দিতে ভিড় করলেও এথলিটদেরকে নাকের ওপরে সারাক্ষণ একটা মোটা মাস্ক ছাড়া বেরোতে দেওয়া হয়নি?
= ভারত
● তিন চার মাস পরপর প্লেয়ারদের যে রিফ্রেশমেন্ট দরকার, তাতে অলিম্পিকের যোগ্যতা থাকা প্লেয়ারদের দরকারি সুযোগ সুবিধাসহ বাইরে ঘুরতে বেরোতে যেতে দেওয়া হয়নি কোন দেশে?
= ভারত
● কোন দেশে ভোটে বিপুল জয় পাওয়ার পরও অলিম্পিকের এক বছর আগেই অলিম্পিকে মেডেল আনা খুবই ভাল কৃতিত্ব রাখা প্লেয়ার ফ্রেন্ডলী খেলমন্ত্রীকে খেলমন্ত্রক থেকে সরানো হয়?
= ভারত
● কোন দেশে অলিম্পিকের তিনটি সপ্তাহ আগেই খেলমন্ত্রকের মন্ত্রী আবার চেন্জ করে অলিম্পিকের বিপরীত লবির একজন মন্ত্রীকে খেলদপ্তরের ভার দেওয়া হয়?
= ভারত
● ক্রিকেট এবং ফুটবল দুটিই নন অলিম্পিক স্পোর্টস, একসাথে দুটিই কোন দেশে সবথেকে বেশি দেখা হয়?
= ভারত
● অলিম্পিক স্পোর্টস কম দেখে তার বদলে ভারতে এই খেলাদুটি দেখে কারা?
= আমি, আপনি, সব্বাই
● কোন দেশে একজন এথলিট এবং একজন সাধারণ মানুষের জন্যে অস্ত্র আইন বা জিম বা পুল বা ইলেক্ট্রিসিটির পারমিশন একইরকম লেভেলের নিয়মগুলো জটিল ও দিনদিন আরো জটিলতর হচ্ছে?
= ভারত
● কোন দেশে বরাবর সবথেকে বেশি মেডেল আনা ক্যাটাগরিতে আগের ভালো কোচিং পারফরম্যান্স রাখা অভিজ্ঞ কোচকে বাদ দিয়ে নতুন একজন অনভিজ্ঞ কোচকে দলের দায়িত্ব দিয়ে অলিম্পিকে মেডেল আনতে পাঠানো হয়েছে?
= ভারত
আগে হোমওয়ার্ক এর হিসেব সমান হোক তারপরেই নাহয় ক্লাসে মেডেল কটা কে আনলো সেটা খোঁজ করা যাবে।
মননে চিন্তায় অলিম্পিক না এলে অলিম্পিকের মেডেলও দেশে আসবে না। সম্ভবই নয়, কারণ এটা কয়েক ঘন্টার বা দিনের খেলা না, এটা চার বছরের একটানা প্রচেষ্টা, বরাবরই।
আমরা নিজেরাও তো যাইহোক একটু আধটু সিরিয়াস খেলাই খেলি, প্লেয়ার থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্ট এর কাছে আমাদের নিজেদের অভিযোগই কম নয় এবারের অলিম্পিকের ফলাফল নিয়ে। কিন্তু প্লেয়ারদের গালাগাল দেওয়ার মতো মানসিকতা নেই কারোর।
আপনারাও দুঃখ পেয়েছেন, সমালোচনা করুন, পজিটিভ টিপস মেল করুন খেলমন্ত্রকে, টুইট করুন, মন্ত্রীদের ট্যাগ করে পোস্ট দিন।
কিন্তু হাতে একটা স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট নিয়েই দুইদিনে ‘ক্রিকেট বুঝে অলিম্পিক এক্সপার্ট’
হয়ে গিয়ে আগেকার দিনের অবুঝ দাদু দিদাদের মতো করে নিজেদেরই প্লেয়ারদের “অনেক খেলেছিস এবার ঘরে আয়” ধরনের কথাবার্তা বলাটা কি সত্যিই আপনাদের মানায়?
শোভা দে’র ছেলেমেয়ে না হয়ে এমন কাজ করুন যা আপনাদের সত্যিই শোভা দেবে।
সন্দীপন মন্ডল