এই ভয়টাই পেয়েছিলাম । ঠিক তাই হল ।
এবার নার্সদের ডাক্তার তৈরি করে হাসপাতালে ছাড়া হবে । তারা রোগী দেখবেন । চিকিৎসা করবেন । ওষুধ দেবেন । রোগীকে বাড়ি পাঠাবেন ।
শুধু প্রেসক্রিপশনে সইটা করবেন না । আর অঘটন ঘটলে ? কে দায় নেবেন ?
উত্তর নেই । হয়তো সরকার ধরে নিচ্ছে সব ঠিক ঠাক চলবে । চললে ভালো । খুব ভালো । সব থেকে ভালো যদি লোক অসুস্থ কম হয় । তাহলে ডাক্তার লাগবে না, ডাক্তার হওয়া নার্সও লাগবে না । বেঘোরে প্রাণ যাবে না ।
প্রশ্ন হল বুদ্ধিটা দিল কে ? অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ? অভিজিৎ চৌধুরী ? কে দিল এই অমূল্য বুদ্ধি ?
নার্সদের ডাক্তার তকমা দিয়ে দাও । তাহলেই মুশকিল আসান । প্রচুর পয়সা দিয়ে ডাক্তার নিয়োগ করতে হবে না । নার্সরাও আর মাইনে বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করবে না । এস এস কে এমে নার্সেস ইউনিটি সেন্টার আর আন্দোলনে বসবে না । সরকারের পয়সা বাঁচবে ।
সব দিক দিয়ে লাভজনক । কিছুটা কোয়ার্ক ডাক্তার দিয়ে ম্যানেজ করার মত । ডাক্তার নিয়োগ করতে পারছি না তো কি হয়েছে । নার্সের এক্সপেরিয়েন্স কি কম জিনিস ? সেটাতেই ম্যানেজ কর । রিটায়ারমেন্ট এর পর সিনিয়র নার্সদের ডাক্তার করে দাও । কিছুটা প্রমোটি আই এ এস দের মত । এমনিতে অনেক ডব্লিউ বি সি এস অভিজ্ঞতা, পারফরমেন্স, আনুগত্যে প্রমোটি আই এ এস হয়ে যান । সরকারটাও ভালো বোঝেন এবং চালান এঁরা । তাহলে নার্সরা পারবেন না কেন প্রমোটি ডাক্তার হতে ?
ভাবনাটা খারাপ নয় ।
কিন্তু পেছনের কারণটা ঠিক কি এই উর্বর চিন্তার পেছনে ?
স্বাস্থ্য ভবনের তথ্য বলছে ডাক্তারের পদ ফাঁকা প্রায় ১৩ হাজার ৮০০ জন । নার্সিং এর ফাঁকা পদ প্রায় ২৯ হাজার ৩০০ জন । ওয়ার্ড মাস্টারের ফাঁকা পদ ৮১৯ জন, ল্যাব টেকনোলজিস্ট এর ফাঁকা পদ প্রায় ১৯৩০ , গ্রুপ ডি, ক্ল্যারিকাল এবং অন্যান্য স্থায়ী পদে খালি রয়েছে ২২ হাজার ১৮০ টি পদ । শুধু স্বাস্থ্য দফতরের সব বিভাগ মিলিয়ে রিক্রুটমেন্ট হতে পারতো ৬৮ হাজার ০২৯ জনের । হয়নি ।
ক্রমশ এই সংখ্যাটা আরও বাড়ছে । সবটাই চলছে অস্থায়ী লোকজন, কম পয়সা দিয়ে । টাকা নেই সরকারের হাতে, অতএব এই চাতুরী । হাল আমলে ওয়ার্ড মাস্টারের গাল ভরা নাম দেওয়া হয়েছে ফেসিলিটি ম্যানেজার । তথ্য বলছে ২০১৯ এর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি সোয়া তিন লক্ষ আবেদনকারী মাথা পিছু ১৬০ টাকা সরকারের ঘরে জমা দিয়েছিল এন্ট্রান্স ফি হিসেবে । ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা মাস মাইনের স্বপ্ন দেখিয়ে ৮১৯ পদের জন্য মাথা পিছু টাকা নিয়ে সোয়া পাঁচ কোটি টাকা ঘরে তুলেছিল রাজ্য সরকার । প্রায় আড়াই বছর বাদেও আজও একজনকেও ফেসিলিটি ম্যানেজারের চাকরি দেয়নি সরকার ।
হাসপাতালগুলো চলছে তাহলে কিভাবে ? অবসরপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টারদের মাসে এখন ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে ৬৫ বছর বয়সের পরেও । আর বাকিটা ৬ হাজার টাকার ঠিকাদারদের দেওয়া ঠিকা কর্মীদের দিয়ে চালানো হচ্ছে জোড়াতালি মেরে । সেই কাজ যার জন্য সরকারের ঘর থেকে মাথা পিছু যেত ৩৭,৫০০ টাকা ।
ঠিক এই অঙ্কগুলোই এখন লুকিয়ে আছে নার্সদের “প্র্যাক্টিসানার ডাক্তার” করার পেছনে । বাস্তবে সরকারের পয়সা চলে যাচ্ছে ভাতা এবং ভিক্ষা বিলিতে । যথাযথ সাম্মানিক দিয়ে, সুযোগ সুবিধে দিয়ে সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ডাক্তার আর আনা যাচ্ছেনা ।
অতএব মানুষের জীবন নিয়ে খেলা শুরু হল । নার্সদের ডাক্তার করে দাও । চুলোয়ে যাক বিজ্ঞান, চুলোয় যাক মেডিক্যাল সায়েন্স । জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়ে কি দরকার ডাক্তার হওয়ার কসরত করার । নার্সিং ট্রেনিং নিয়ে ডাক্তার হয়ে যাও । মেড ইজি ফর্মুলা আর কি । বিনা পরীক্ষায় যদি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম দশে থাকা যায় তাহলে নার্স হয়ে ডাক্তারি করলে দোষ কি ? ফেলনা নয় যুক্তি ।
ঠিক সেটাই এখন করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী । দোষ ধরার তো কিছু নেই ।
এই প্রতিবেদন যখন লিখছি তখন এ বি পি আনন্দে স্ক্রোল হচ্ছে মেডিক্যাল কলেজের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজিতে চোখের চিকিৎসায় গত দু মাস ধরে গ্লাভস, সিরিঞ্জ, এমনকি প্যারাসিমাটল সহ বহু ওষুধ অমিল । চিকিৎসা থমকে গেছে । স্বাস্থ্য ভবনে বারবার বলেও জুটছে না কিছু । টাকা নেই, দেরী হবে, উত্তর আসছে অন্য প্রান্ত থেকে ।
মিলছে হিসেব ? এই হিসেবেই ফেলতে হবে প্র্যাক্টিসানার নার্স করার তত্বটাকে । যাঁরা তুমুল তীব্র সমালোচনা করছেন তাঁদেরও ভাবতে হবে কেন তাঁরা অমূলক সমালোচনা করছেন । দেখবেন মিলিয়ে দুয়ে দুয়ে চার হয়ে যাবে । অবাক হওয়ার তখন কিছুই থাকবে না । আপনিও তখন আর অবাক হবেন না ।
শুধু দেখতে হবে সরকারি হাসপাতালে এরপর প্রেসক্রিপশনে সইটা ঠিক কার থাকে । ওয়ার্ড মাস্টারের সই কি না সেটাই শুধু দেখে নেবেন ।
শরীরটাতো আপনার তাই, সই অবশ্য যারই হোক ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)