দেশের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী এবং কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধী যাবতীয় রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় শিষ্টাচার জলাঞ্জলি দিয়ে অভব্যতার এক নজিরহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র ভাই মোদীর মতো একজন সৎ, দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিকেও চোর বলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন। এই ব্যক্তি (রাহুল) নিজেই দুর্নীতি ও তছরুপের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং বর্তমানে জামিনে মুক্ত। এহেন ব্যক্তি নিজের রাজনৈতিক উচ্চাশা চরিতার্থ করতে সক্রিয়। এই অসৎ লোকেদের দল হলো কংগ্রেস।
এই দলটির নেতারা বিভিন্ন কেলেঙ্কারি এবং অপরাধমূলক কাজে অভিযুক্ত। দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক। দলের নাম থেকে গোত্র অবধি সবই মিথ্যার বেসাতি। দলের পতাকা, নির্বাচনী প্রতীক, কার্যালয় এমনকী কার্যপদ্ধতি কোনো কিছুই নিজস্ব নয়। এই দল সংবিধান ও নৈতিকতার ধার ধারে না এবং নিজেকে জাতীয় কংগ্রেস বলে দাবি করে। প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় কংগ্রেস দলটিকে দুটুকরো করেন এবং কংগ্রেস (আই) তৈরি হয়। এটা বিস্ময়কর যে দেশের বুদ্ধিজীবী, সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিক, নেতারা কংগ্রেসের এই রাজনৈতিক অসততা নিয়ে মুখ খোলেন না। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে নীরব।
কিছুদিন আগে লখনৌতে রোডশোয়ের সময় কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ও জাতীয় সাধারণ সম্পাদিকার উপস্থিতিতে এবং উস্কানিতে সমবেত কংগ্রেস কর্মীরা স্লোগান দেয়— “চৌকিদার চোর হ্যায়, চোর হ্যায়”। এতে গলা মেলান খোদ সভাপতি। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বারবার চোর চোর বলতে ক্লান্তিহীন কংগ্রেসের নিজের মুখ আয়নায় দেখা উচিত। দেশবাসী জানে আসল চোর কে। লখনৌতে চৌকিদারকে চোর বলে দলের নেত্রী অভিযুক্ত রবার্ট বঢরাকে সহমর্মিতা জানাতে জয়পুরে গিয়েছিলেন। শ্রীমতী বঢরা ভুলে গেছেন তিনি দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। শ্রীমতী বঢরার আচরণ থেকে স্পষ্ট যে রবার্টের বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারি অভিযোগ কংগ্রেসের সমর্থন পুষ্ট।
দলের জাতীয় সভাপতি-সহ অন্যান্য নেতারা বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের অনুমান আগামী দিনে অভিযুক্তদের সংখ্যা আর বাড়বে। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় রাহুল নিজেই জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। শ্রীমতী সোনিয়া গান্ধীর একই দশা। শ্রীমতী বঢরার যশোবরাতে (সিমলা) ‘রবার্ট বঢরা স্টাইল’-এর কেনা প্রায় সাত একর জমিতে বেআইনি ভাবে তৈরি বাড়ি ও বাগান নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।
দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা চিদম্বরমের বিরুদ্ধে সরকারি ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে এবং বর্তমানে তিনি বিচারাধীন। অনেক অভিযুক্ত, কেউ কেউ আবার সপরিবারে ‘চৌকিদারের’ হাতে ধরা পড়েছেন। এবার দেশের টাকা যারা আত্মসাৎ করতে বিদেশে পালিয়েছেন তাদেরও দুঃস্বপ্ন দেখার সময় এসেছে। ‘চৌকিদারের’ কল্যাণে।
এখন দেখা যাক এই কংগ্রেস (আই) দলটির উৎপত্তি, উদয় কীভাবে, এর প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা যাক। এই দলটি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের মুখোশ পরে আছে। ৮০-র দশকে ইন্দিরা গান্ধী নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে কংগ্রেস দলটি দুটুকরো করেন। সে সময় আদালত দলের অন্য প্রধান নেতাদের (সংগঠন কংগ্রেস/ আদি কংগ্রেস) আবেদনের সপক্ষে কংগ্রেসের কার্যালয় (যন্তরমন্তর একালাকায় অবস্থিত), দলীয় পতাকা, নির্বাচনী প্রতীক চিহ্ন (জোড়া বলদ) ইত্যাদি ব্যবহারের আদেশ দেয় এবং ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস (আই) গঠিত হয়। এই নতুন দলের নির্বাচনী চিহ্ন ছিল ‘গাই বাছুর’। কালক্রমে এই নির্বাচনী চিহ্ন হয় ‘হাত’। এর পরবর্তী সময়ে জরুরি অবস্থা জারি হলে অধিকাংশ বিরোধীদল অস্তিত্ব লোপ করে জনতা দল গঠন করে। আসল কংগ্রেস (আদি কংগ্রেস) জনতা দলে মিশে যায়। সুতরাং বর্তমান কংগ্রেস হলো মূলত কংগ্রেস (আই)।
একই ভাবে তথাকথিত নেহরু গান্ধী পরিবারের ইতিহাস কী বলে জেনে নেওয়া যাক। ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নেহরু পরিবারের উত্তরাধিকারী বলে মানা হয়, প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এঁদের কেউই নেহরু বা গান্ধী নন। জওহরলাল নেহরুর কোনো ছেলে না থাকায় তার মৃত্যুর পর নেহরু বংশ শেষ হয়। জওহরলাল নেহরুর মেয়ে ইন্দিরার বিবাহ হয় ফিরোজ খানের সঙ্গে। ফিরোজ খানকে গান্ধীজী ‘গান্ধী’ পদবি ব্যবহারের অনুমতি দেন। তাই এইসব গান্ধী আসলে ফিরোজ খানের বংশধর আর সোনিয়ার সঙ্গে রাজীবের বিয়ের পর এই পরিবারকে খ্রিস্টান বলা হয়। সুতরাং এই পরিবারের রাজীব গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর পরিচয় কীভাবে কৌল ব্রাহ্মণ হতে পারে?
সম্প্রতি রাহুল জওহরলাল নেহরুর গোত্র কৌল (সারস্বত ব্রাহ্মণ) বলে দাবি করে পৈতা ধারণ করেছেন। এটাকে রাজনৈতিক অসততা ছাড়া আর কী বলা যায়। যে লোক রাম এবং রামসেতুর সত্যতা অস্বীকার করে সেই ব্যক্তি নিজেকে হিন্দুবলে দাবি করছে। মিথ্যার পসরা সাজিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চোর সাব্যস্ত করতে কোমর বেঁধেছে। লন্ডন এবং ইটালিতে এই পরিবারের প্রভূত সম্পত্তি আছে। এই পরিবারের বর্তমান সদস্যরা পরিবারের অন্য সদস্যদের (মেনকা, বরুণ) রাতের অন্ধকারে বাড়িছাড়া করেছে। এই হলো তথাকথিত নেহরু গান্ধী পরিবারেরর ইতিহাস। এই পরিবাবার এবং দলটি অসততার প্রতিরূপ।
নরেন্দ্র সহগাল (সায়গল)