উত্তরপ্রদেশকে একসময় অপমান করা হত অন্যতম বিমারু রাজ্য বলে। বিহার – মধ্যপ্রদেশ আর উত্তরপ্রদেশ অর্থাৎ ভারতের সবথেকে পিছিয়ে পরা রাজ্যগুলোকে বলা হত বিমারু রাজ্য। এই নামও অবশ্য এক বঙ্গসন্তানেরই দেওয়া। ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক আশীষ বোস তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে জমা দেওয়া একটি গবেষণাপত্রে এই শব্দটি উল্লেখ করেন।

অবশ্য এই অবমাননাকর নামের পুরোপুরি যোগ্যই ছিলো এই তিন রাজ্য। আক্ষরিক অর্থেই জঙ্গলরাজ চলত এখানে। রাজনৈতিক নেতারা উপর মহলে বসে ক্ষমতার ক্ষীর খেত আর রাজ্য চালাত সমাজবিরোধীরা। উত্তরপ্রদেশ আর বিহার যথাক্রমে সাম্প্রদায়িক হানাহানি আর কিডন্যাপিং এর জন্য আন্তর্জাতিক স্তরেও কুখ্যাত হয়ে ওঠে।

কিন্তু সেই দিনের অবসান হয়েছে এতদিনে। বাকি রাজ্যগুলোরও উন্নতি হলেও এদের মধ্যে উত্তর প্রদেশের উন্নতি আসলেই বিষ্ময়কর। যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পরে যেভাবে উল্কা উত্থান ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের‚ তা জাপান বা সিঙ্গাপুরের উত্থানের মতোই উদাহরণস্বরুপ হয়ে থাকার দাবিদার।

উত্তরপ্রদেশ এখন অর্থনীতিতে পশ্চিম বঙ্গ (৭.৫ শতাংশ)‚ তো অবশ্যই‚ তামিলনাড়ু (৯.১ শতাংশ), বা গুজরাট (৮.২ শতাংশ) এর মতো রাজ্যগুলিকেও ছাড়িয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে, উত্তরপ্রদেশ বর্তমানে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ র‌্যাঙ্কিং-এ ১৪তম থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে উত্তর প্রদেশ।

উত্তরপ্রদেশ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলি হল কর্ণাটক (৬.২ শতাংশ), রাজস্থান (৫.৫ শতাংশ), অন্ধ্রপ্রদেশ (৪.৯ শতাংশ), এবং মধ্যপ্রদেশ (৪.৬ শতাংশ)।

তথ্য মোতাবেক দেখা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ গত সাত বছরে প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্রুত উন্নতি করেছে।

বিনিয়োগ এবং স্টক মার্কেটের উপর নজর রাখা বিশিষ্ট অনলাইন ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম soic.in-এর একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে যে মহারাষ্ট্রের পরে জিডিপি শেয়ারে ইউপি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য।প্রতিবেদনে উত্তরপ্রদেশকে অর্থনীতির দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় রাজ্যে পরিণত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রচেষ্টাকেও তুলে ধরা হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা, সংযোগ এবং পরিকাঠামোর উন্নতির কারণে, রাজ্য GIS ২০২৩ -এর মাধ্যমে ৪০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছে, যেগুলি শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে। এর ফলে উত্তর প্রদেশে এক কোটিরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সার্বিক কর্মসংস্থান হওয়ার ফলে ইউপিতে সংগঠিত অপরাধল এখন শূন্যের পর্যায়ে নেমে এসেছে।

যদিও শেষ পাওয়া সরকারি সমীক্ষার হিসেবে উত্তরপ্রদেশ তৃতীয় স্থানে ছিলো। তবে বর্তমান ইউপির দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসাটা এটাই ইঙ্গিত করে যে প্রথম স্থানটি খুব তাড়াতাড়ি মহারাষ্ট্রের হাতছাড়া হতে চলেছে। আর এই কৃতিত্ব অবশ্যই উত্তর প্রদেশ প্রশাসনের প্রাপ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.