ব্যারাকপুর থেকে গাড়িতে বারাসত গেছেন কোনদিন ? এমনি না গেলেও ওখানকার বিখ্যাত কালীপূজা দেখতে হয়তো গেছেন । এবারে গেলে খেয়াল করবেন মিনিট কুড়ি যাবার পর বাস কন্ডাক্টর হাঁক মারবে #নীলগঞ্জ বাজার, বাস এসে দাঁড়াবে হাটতলায ।
সপ্তাহে দুদিন এখানে বিশাল হাট বসে, আশেপাশের গ্রাম থেকে আনা শাক সবজিতে জমে ওঠে রাস্তার পাশে হাটতলা । ভ্যানে লরিতে বোঝাই হয়ে চলে যায় তা প্রতিবশী শহুরে মানুষগুলোর পেট ভরাতে ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই হাটতলার পাশে বিরাট এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছিল যুদ্ধবন্দী (PoW) শিবির, রাখা হয়েছিল বার্মা রণাঙ্গনে আটক আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের …….।
সেদিনটা ছিল ২৫শে সেপ্টেম্বর, সাল ১৯৪৫ । মাঝরাতে আশপাশের গ্রামের লোকজন শুনতে পেলো টানা গুলির আওয়াজ । রাতের নিস্তব্ধতাকে খানখান করে দিল শতাধিক মানুষের মরণ চীৎকার……….. পরদিন সকালে ভীতচকিত গ্রামবাসীদের চোখের সামনে দিয়ে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো একটার পর একটা কালো ব্ল্যাক মারিয়া ভ্যান । ফোঁটা ফোঁটা রক্ত তখনও চুঁইয়ে পড়ছে সেখান থেকে । গন্তব্য ব্যারাকপুর সেনা ছাউনি, লোকজন সেখানে প্রস্তুতই ছিল । ভ্যানগুলি থেকে একের পর এক নিহত সেনার লাশ ছুড়ে ফেলা হয় গঙ্গায় ।
১৯৯৭ এ ডিক্লাসিফায়েড হওয়া ফাইল অনুযায়ী সেরাতে খুন হয়েছিল হাজার দেড়েক আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনা । ঐ একই রাতে অধুনা বাংলাদেশের ঝিকরগাছাতে অবস্থিত বন্দীশিবির থেকেও হাজার দুয়েক আজাদী সেনাকে খুন করা হয় । বিশেষজ্ঞদের মতে মৃতের সংখ্যা এর কয়েকগুণ হবারই সম্ভাবনা কেননা দুটি শিবির মিলিয়ে যুদ্ধবন্দীদের সংখ্যাটা ছিল প্রায় দশহাজারের কাছাকাছি । তাদের মতে সামরিক বাহিনীর হাতে থাকা সবকটি ‘classified Top Secret file’ প্রকাশ করলে হয়ত জানা যাবে যে আরো বহু সংখ্যক আজাদী সৈনিককে সেরাতে ইংরেজরা গুলি করে হত্যা করেছিল ।
দুটি ঘটনার নৃশংসতা হার মানিয়েছে নাজী জমানার অসউইচ বা স্ট্যালিনের গুলাগ শিবিরের গণহত্যাকে । এত মানুষ একসাথে তো জালিনওয়ালাবাগেও মারা যায়নি !
এই নারকীয় হত্যার ঘটনা যখন চারিদিকে জানাজানি হয়ে গেল তখন আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতারা কি করলেন ? দু সপ্তাহ পরে পণ্ডিত নেহেরু বিবৃতি দিলেন ……..
It is reported to me that a camp prison situated at Nilganj, near Calcutta, where over one thousand Indian National Army Prisoners are kept, firing took place on or about 25th September, by the guards of these prisons. It is stated a large number of rounds were fired and as a result five of the prisoners died on the spot and many were wounded …. firing on the prisoners within the four wall of prison is always a dreadful thing.
( UP, Allahabad, Oct 10, 1945, Press Statement of Pt. Jawaharlal Nehru. Amrita Bazar Patrika, 11.10.1945 )
নেহেরু নিজেই স্বীকার করলেন যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চলেছে অথচ তাতে মারা গেলেন মাত্র পাঁচ জন ! আর ক্ষমতায় আসার পর কি করলেন তিনি ?
ফাইলগুলোকে উন্মুক্ত না করে চূড়ান্ত গোপনীয় করে রাখলেন……….কিসের ভয়ে পন্ডিতজী ?
এ তো গেল পন্ডিতজী ও তার বশংবদ কংগ্রেস নেতাদের কথা, কিন্তু ভারতবর্ষের জনদরদী, মেহনতী মানুষের মসীহা কমিউনিস্টরা চুপ করে থাকলেন কেন ? যারা সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ভিয়েতনাম আক্রমণ করলে ভারতে বন্ধ ডাকেন, রাস্তায় মিছিল অবরোধ করেন, তারাও কিন্ত সেদিন মুখ খোলেন নি । কেন কমরেড, বিপ্লব দীর্ঘজীবি হবেনা বলে ?
দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৭৮ বছর……
নীলগঞ্জের ঐ বন্দীশিবির এখন কেন্দ্রীয় পাট গবেষণাগার (CRIJAF) । বাতানুকূল অফিস আর ঝাঁ চকচকে কোয়াটার্সের আড়ালে হারিয়ে গেছে সেদিনের বন্দীশিবির । তবু নিশুতি রাতে কান পাতলে আজও শোনা যায় সেই সমস্ত বীর নির্ভীক মৃত সেনার দীর্ঘশ্বাস, বিনা বিচারে যারা খুঁজে ফেরে তাদের হত্যার কারন ! ????????????
তথ্যসূত্র : YouTube (INA Genocide Newsclip)
*নেতাজি সুভাষচন্দ্র – – – কিছু বিতর্ক, কিছু তথ্য, ড: মধুসূদন পাল
*চক্রব্যুহে নেতাজি , কেশব ভট্টাচার্য, জয়শ্রী পৌষ ১৪০৬