একটা সময় ছিল যখন আন্তর্জাতিকস্তরে রাশিয়া ছাড়া ভারতের পাশে সারা পৃথিবীতে কেউ ছিল না৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানের পাশেই ছিল সারা বিশ্ব৷ সময় বদলেছে৷ এখন ভারতের পাশে সারা বিশ্ব রয়েছে৷ পাকিস্তানের পাশে রয়েছে শুধু চিন৷ বক্তা আর কেউ নন, স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী৷ হিন্দুস্থান পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদীর সাফ কথা, সারা ভারত জানে ‘‘বিজেপি সরকার এবং নরেন্দ্র মোদী সন্ত্রাসবাদ সহ্য করবে না৷ উড়ির ঘটনার পর আমি জনসমক্ষে বলেছিলাম সৈনিক রক্ত বৃথা যাবে না৷
পুলওয়ামার ঘটনার পরও বলেছিলাম – ওরা খুব বড় ভুল করেছে৷ যা করেছি, জনতার জন্য করেছি৷ সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়নি৷ যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম তখন যা ভাবতাম এখনও তা-ই ভাবি৷ মোদীর বক্তব্য, সারা বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে লড়াই করছে৷ আমাদের লক্ষ্য, সন্ত্রাসবাদকে ‘গ্লোবাল অ্যাজেন্ডা’হিসেবে তুলে ধরা৷ ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদতই পাকিস্তানের একমাত্র উদ্দেশ্য৷ পুলওয়ামার ঘটনার পর ভারত যা করেছে তা সারা বিশ্ব সঠিক মনে করেছে৷ বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইকের পর সারা বিশ্বই ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে৷
প্রসঙ্গত, ভারতে নির্বাচন মরশুমে মোদীর বিদেশ নীতি এবং পাকিস্তানে পুলওয়ামার জবাবি হামলা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে৷ মোদীর পাকিস্তান নীতি নিয়ে দেশ আড়াআড়ি বিভক্ত৷ কেউ বলছেন, মোদীর জমানায় কাশ্মীর অশান্ত হয়েছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে অশান্তি বেড়েছে৷ আবার অন্যপক্ষের মতে, পাকিস্তানকে মোদী যে ভাষায় জবাব দিয়ছেন পাকিস্তান সেই ভাষাই বোঝে৷ জম্মু ও কাশ্মীরে মোদী সরকার যে নীতি নিয়েছে , তা-ই সঠিক নীতি ফারুক বা ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতি বা ইউসুফ রাজা গিলানি – মোদীকে পছন্দ না করতে পারেন৷ কিন্তু ৭০ বছরে এই প্রথম কোনও ভারত সরকার কাশ্মীরকে শক্ত হাতে ধরেছেন৷ মোদী সরকার জম্মু ও কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা দিতে রাজি নয়৷ ফারুক, ওমর আবদুল্লা কাশ্মীরের আলাদা প্রধানমন্ত্রী চান৷ মেহবুবা ভারতে থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করার হুমকি দিচ্ছেন৷
তাঁর পাকিস্তান নাতির সমালোচকদের জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ মোদী বলেন, ‘‘আমি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলাম না বা যখন শপথও গ্রহণ করিনি, তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে শপথগ্রহণে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম৷ শুধু নিজের দেশের কথা ভেবেই ডেকেছিলাম৷ বিজেপি এবং বিজেপি সমর্থকদের মতামতের কথা ভাবিনি৷ আমি ভেবেছিলাম সিন্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় পৌঁছতে পারব৷ তারপর লাহোরেও গিয়েছিলাম৷ তার পরেও ওই ধরণের (সন্ত্রাসের) ঘটনা ঘটেছে৷ কেন সারা বিশ্ব মোদীকে বিশ্বাস করে বলুতো? কারণ দুনিয়া জানে মোদী হাত মেলানোর উদ্যোগ নিয়েছিল৷ সারা বিশ্ব জানে আমি বন্ধুত্বের পথে গিয়েছিলাম৷ তবে আমি যেকোনও নাশকতা রুখতেও প্রস্তুত৷ সারা বিশ্ব মোদীকে বিশ্বাস করে৷ পাকিস্তানও খুব চেষ্টা করেছিল৷ তবে কিছুই করতে পারেনি৷’’
মোদীর বক্তব্য, ‘‘প্রত্যেক দেশের স্বাধীন কৃটনীতি রয়েছে৷ কিছু ইস্যুতে আমরা ইরানের পাশে আছি৷ আবার কিছু ইস্যুতে আমরা আরব দেশগুলির পাশে৷ কিছু ইস্যুতে আমরা ইজরায়েলের পাশে৷ আবার কিছু ইস্যুতে আমরা প্যালেস্টাইনের পাশে৷ ভারতের বিদেশ নীতি ভারতের স্বার্থে৷ চিনের সঙ্গেও ভারতের পারস্পরিক সহযোগীতা এবং মতের আমিল – দু-ই রয়েছে৷ মতের অমিল থাকলেও আমরা স্বাভাবিক ভাবেই তা গ্রহণ করি৷ কিন্তু মতামতের অমিলকে আমরা পারস্পরিক বিরোধরে জায়গায় নিতে চাই না৷ চিন সীমান্তে বিরোধ রয়েছে৷ কিন্তু আমাদের সঙ্গে চিনের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে৷ আমরা পরস্পরকে সম্মান করি৷ আমরা দুই দেশই দুই দেশে বিনিয়োগ করি৷’’