একটা কথা আছে মন্দিরময় দক্ষিণ ভারত।কিন্তু আসলে গোটা ভারতই মন্দিরময় (ছিল একদা) ! মন্দির কথার মানেই ছিল মন্দ্রিত আবাসস্থল- মানুষেরও ,দেবতারও!
আসলে ‘উত্তর’ ভারতে মানুষ তার আবাস ও আশ্রয়স্থল সহ যেভাবে ক্রমাগত আক্রমণের সামনে পড়তে পড়তে মাটিতে মিশে গিয়েছে একেবারে বলা চলে তেমন দুর্ভাগ্য হয়নি দক্ষিণভারতে চোলম, পান্ডিয়ান,চেরম্ বংশাবলির সশক্ত শাসনব্যবস্থায়! বহিরাগত দস্যুরা পাত্তা পায়নি ।একমাত্র তালিকোটার যুদ্ধ ,সেও এক নক্কারজনক বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস, সেখানেই বিজয়নগরের পতন ঘটে বর্তমানে যা কর্ণাটক রাজ্যে অবস্থিত। হাম্পির মন্দিরগুলিই তাই ভগ্নাবস্থায় দেখা যায়। অন্যথা উত্তরে পুরীজগন্নাথ মন্দির থেকে শুরু করে দক্ষিণে মীনাক্ষীআম্মান মন্দির আর পদ্মনাভস্্বামী মন্দির এখনও হাজার বছরের পুরাতন ঐতিহ্যময় উপাসনার ধারা অবিচ্ছিন্নভাবে বহন করে চলেছে। কোন মন্দিরেই দেবতার সম্পত্তি নিতান্ত কম নয় ! দস্যুদের চোখ কি পড়ে নি সেসবের উপরে !
যাঁরা এখনও দাবি করেন যে শুধু সম্পদের লোভে মন্দির আক্রমণ করত তাদেরকে একটা প্রতিপ্রশ্ন করতে অনুরোধ করব যে নালন্দা ধ্বংস করে কোন খাজানার দখল নিতে চেয়েছিল তারা?

আজ ক্রমাগত ‘দক্ষিণভারত’ ‘দক্ষিণভারত’ বলে বলে তাকে একটা আলাদা পরিচিতি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উত্তরের অবশিষ্ট ধ্বংসাবশেষের নির্মাণশৈলী দেখলেই বুঝতে পারবেন এগুলি আলাদা করে ‘উত্তরে’র বা ‘দক্ষিণে’র হতে পারে না । এগুলি এক্সক্লুসিভলি ‘ভারতীয়’ স্থাপত্যকলার নিদর্শন যা বেশি সংখ্যায় দক্ষিণভারতে অক্ষত রয়েগিয়েছে কিন্তু উত্তরে বিশেষ করে গাঙ্গেয় সমভূমে রক্ষা করে উঠতে পারি নি আমরা,ভারতীয়রা ।কাশী ,মথুরা, সোমনাথ কাহিনীটা একই ।

আবার খাজুরাহ, বৃহদেশ্বর, মীনাক্ষীআম্মান,পদ্মনাভস্বামী গল্পগুলিও একই ।

বড় বড় মন্দিরের খবর হয়ত সবাই রাখতে পারে ,ছোট ছোট এমন হাজারো মন্দির রয়েছে তাদের খবর কেই বা রাখে !
মানুষ হয়ত বাসা বদল করে এক ঘর ছেড়ে দিয়ে নতুন ঘর বানায় কিন্তু মন্দির নিজেই একেকটা সংস্কারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান ,যেগুলির ভিত্তিও সহজে ভেঙ্গে ফেলা যায় না ।তার পরেও এত সংস্কারবিহীন পরিত্যক্ত এবং ভগ্নমন্দির দেখতে পাওয়া যায় কেন ভারতে,বিশেষ করে উত্তরে?

দেবমূর্তি কেনই বা পুকুর খনন করতে গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় এত?
যেমন ছবিতে যে মন্দিরের অবশিষ্টাংশ দেখা যাচ্ছে সেটি রাজস্থানের একটি প্রাচীন মন্দিরের, কোন দক্ষিণের মন্দিরের নয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.