নাগরিকত্ব বিতর্কের মধ্যে মুখ খুললেন ভাগবত (Mohon Bhagabat)। সঙ্ঘ (RSS)হিন্দু বলতে কি বোঝে, সেই কথাটি সহজ করে বুঝিয়ে দিলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত।

সিএএ ও এনআরসি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে কোনও কোনও মহল প্রচার করতে শুরু করেছে ভারতবর্ষকে হিন্দু রাষ্ট্র করতে চায় বিজেপি। প্রচারের ভাবটা এমন, যেন হিন্দু রাষ্ট্র মানেই মুসলিম বাদ। কিংবা অন্য কোনও ধর্মাবলম্বী বাদ। বিরোধী একাধিক নেতাও ইতিমধ্যেই এমন মন্তব্য করেছেন। ভোট রাজনীতির খেলায় নেমে অনেকেই সংখ্যালঘুদের হিন্দু রাষ্ট্রের জুজু দেখিয়ে বাজিমাত করতে চাইছেন।

এবার সে গুড়ে বালি ঢাললেন ভাগবত স্বয়ং। সঙ্ঘের দর্শনে হিন্দু একটি সংস্কৃতি। সঙ্ঘের নামের মধ্যেও কোথাও হিন্দু শব্দটি নেই। যা আছে তা হল রাষ্ট্রবাদ। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ। সঙ্ঘের প্রাতঃস্মরণীয়দের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম, মৌলনা আবুল কালাম আজাদের মত বহু প্রণম্য মানুষ রয়েছেন যাঁরা জন্মসূত্রে মুসলমান। নীতিগত ভাবে সঙ্ঘের চোখে হিন্দু-মুসলিম ভেদ নেই। সঙ্ঘ মনে করে ভারতে জন্মানো সব মুসলিমই হিন্দু। তাঁদের পূর্বপুরুষ হিন্দু তো বটেই একই সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির বাইরেও কেউ নয়।
বুঝে বা না বুঝে, জেনে বা না জেনে, সঙ্ঘের বক্তব্যের অপব্যখ্যা করার রেওয়াজও কংগ্রেস শাসিত ভারতে অনেকদিনের।

এবার অবশ্য প্রতিবাদ এসেছে এনডিএর ঘরের ভেতর থেকে। মোদি সরকারের সামাজিক ন্যায় মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রিপাবলিকান পার্টির রামদাস আঠেওয়াল ভাগবতের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ভারতে এক সময় সবাই বৌদ্ধ ছিল। যদিও ভগবান বুদ্ধকে হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর অবতার হিসেবেই গণ্য করা হয়। ভারত ভূখণ্ডের সনাতন ধর্মকেই সাধারণ ভাবে হিন্দু ধর্ম বলা হয়। আর এই সনাতন ধর্মের মধ্যেই নিহিত হয়ে আছে দেশের বহু মতাবলম্বী আধ্যাত্মিকতা ও আধ্যাত্মিক রীতিনীতি যা এক কথায় হিন্দু ধর্ম যা আদতে হিন্দু সংস্কৃতি। রামদাস আঠেওয়াল বলেছেন, মোহন ভাগবত
যদি হিন্দু না বলে ভারতীয় বলতেন, তাহলে ভাল হত। বোঝা যাচ্ছে যে সমস্যাটা ভাগবতের শব্দ চয়নে। কিছু কংগ্রেসী ও শৌখিন বামেদের মত আম্বেদকরের আদর্শে অনুপ্রাণিত আঠেওয়ালের কেন হিন্দু শব্দে আপত্তি তা বোঝা কঠিন।

মিম নেতা ওয়েসিও হিন্দুত্বের ধারনাটিকে সংস্কৃতি হিসেবে না দেখে ধর্ম হিসেবে দেখতেই পছন্দ করছেন। সংবিধানের রেফারেন্স টেনে বলেওছেন, এ দেশের কোনও ধর্ম নেই। একথা ঠিক তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান থেকে তিনি এমনটা বলবেন, এটাই প্রত্যাশিত। দেশের ধর্ম না থাকলেও সংস্কৃতি আছে। সনাতন সংস্কৃতি বা হিন্দু সংস্কৃতি। ‘বিবিধের মাঝে’ যে ‘মহান মিলন’ সেই মহান মিলন হল সনাতন হিন্দু সংস্কৃতি। যে সংস্কৃতির মধ্যে অবলীলায় ঢুকে পড়েছে, আমিষ নিরামিষ, শাক্ত বৈষ্ণব। ঢুকে পড়েছে ফকির, সহজিয়া প্রেম। এসেছে বাউল। নেড়া নেড়ি। এসেছেন সত্যনারায়ণ। ধর্ম নয়। এই হিন্দু আসলে সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির পথে হেঁটে কি ভারতবর্ষ একদিন হিন্দু রাষ্ট্র হতে পারে?
ভাগবতের বক্তব্যের পর উঠতেই পারে এই আলোচনা।

তবে ভাগবতের গণতন্ত্র প্রেম, বলা ভাল, সঙ্ঘের গণতন্ত্রের প্রতি একনিষ্ঠতা, তাঁকে দিয়ে প্রত্যেক বক্তৃতার শেষে যে কথাটি বলায়, এবারও সেই কথাটিই বলিয়ে নিয়েছে।
আরএসএস প্রধান বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমারা এটাই মনে করি। তবে আপনার ভিন্ন মত থাকতেই পারে।’

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.