৩৬ বছর আগে মিউজিক ক্লাসে শেষ দেখা গেছিল তাকে। হাসিখুশি, ঝলমলে ১৫ বছরের কিশোরী ইম্যানুয়েলা অর্লান্ডিকে। মিউজ়িক ক্লাসের পর আর তাকে দেখা যায়নি। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছিল সে। তন্নতন্ন করে মেয়েকে খুঁজেছে অর্লান্ডি পরিবার ও পুলিশ। কিন্তু না, কোথাও পাওয়া যায়নি তাকে। কোথাও কোনও দেহাবশেষও মেলেনি।
এই এতটুকু সিটি স্টেট ভ্যাটিক্যান। সেখান থেকে কোথায় যেতে পারে ইম্যানুয়েলা? কেউ যদি তাকে তুলে নিয়ে যায় বা অপহরণও করে, কিংবা খুন করে, তা হলেও তো কোনও না কোনও হদিস পাওয়া যাবে। কিন্তু না।
তার উপরে ইম্যানুয়েলার বাবা ভ্যাটিক্যানের কর্মী। পুলিশের উপর সেই একটা চাপও ছিল।
এই করে গেছে একে একে ৩৬টা বছর। ইম্যানুয়েলার দাদা পিয়েত্রো অর্লান্ডির এখন ৬০ বছর। তিনি বোনকে খুঁজে পাওয়ার আশা ছাড়েননি।
হাওয়ায় একটা কথা ভেসেছে যে, কেউ একটা জানে ইম্যানুয়েলার কী হয়েছিল। কিন্তু ভয়ে সে মুখ খুলতে পারছে না। কে সে, কেন ভয়, কার ভয়, কী ঘটেছিল ইম্যানুয়েলার সঙ্গে?
সম্প্রতি অর্লান্ডি পরিবারের কাছে একটা উড়ো ছবি আসে। যাতে দেখা যায় এক এঞ্জেল ভ্যাটিক্যানের টিউটনিক সমাধিক্ষেত্রের একটি বিশেষ সমাধির দিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছে। বলা হচ্ছে ওই সমাধিতেই রয়েছে কিশোরী ইম্যানুয়েলার দেহ। ভ্যাটিক্যান রেকর্ড ঘেঁটে দেখে ওই সমাধিতে এক প্রিন্সেসকে উনবিংশ শতাব্দীতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। ভ্যাটিক্যান কর্তৃপক্ষ স্থির করেন, সমাধি খোঁড়া হবে।
সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকার কাছে এই সমাধিক্ষেত্রে এমনিতে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। লোহার কারুকার্যমণ্ডিত গেটের ভিতরে সার সার পাথরের সমাধি। গাছপালায় ঢাকা নিরিবিলি ওই সিমেট্রিতে বৃহস্পতিবার দেখা গেল পুলিশ ও ফরেন্সিক টিমের সদস্যদের। অনেক সাংবাদিক ও পর্যটকেরাও ছিলেন। আর ছিলেন ইম্যানুয়েলার আত্মীয়বন্ধুরা। ‘সত্য আমাদের মুক্ত করে’ আর ‘ওর দেহ কোথায়’ লেখা টি শার্ট পরেছিলেন তাঁরা। যাতে কোনও বিভ্রান্তি না থাকে, তাই ওই সমাধির ঠিক পাশের সমাধিটিও খোঁড়া হয়। এই দুটিতে দুই বোন, দুই প্রিন্সেসকে কবর দেওয়া হয়েছিল ১৮৩৬ ও ১৮৪০ সালে। কিন্তু সমাধি খোলার পর যা দেখা গেল তাতে আরও বিভ্রান্তি ও অস্বস্তিতে পড়ে গেল ভ্যাটিক্যান। দেখা গেল, ইম্যানুয়েলা তো দূর, সেই দুই প্রিন্সেসের দেহাংশও নেই। দুটি সমাধিই খালি।
সমাধান হলো না ৩৬ বছরের পুরনো রহস্যের। বরং উল্টে বাড়লো রহস্য। দুই প্রিন্সেসের দেহই বা গেল কোথায়!
ইতালির অর্লান্ডি পরিবারের শেষ আশাও মিলিয়ে গেল।