জল, স্থল ও বিমান বাহিনীকে ইন্টিগ্রেটেড থিয়েটার কম্যান্ডের অধীনে এনে ভারতীয় সামরিক শক্তিকে অনন্য সাধারণ উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার মহৎ উদ্যোগে ব্রতী নিরলস কর্মযোগী সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। ভারত মায়ের এই আকস্মিক অপূরণীয় ক্ষতি তে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে আপামর দেশবাসী সকলে শোকে বিহ্বল। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই মর্মান্তিক সংবাদ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে চলেছেন বেশ কিছু মানুষ! এদের প্রোফাইল দেখুন। প্রত্যেকেই হয় কমিউনিস্ট নতুবা জিহাদী মৌলবাদী। দেশের অপূরণীয় ক্ষতি তে এরা উল্লাসে মেতে উঠেছেন ঠিক যেমন ২০১০ সালে জেএনইউ ক্যাম্পাসে উৎসবে মেতে উঠেছিলেন দান্তেওয়াড়া তে মাওবাদীদের কাপুরুষোচিত আক্রমণে ভারত মায়ের ৭৬ জন বীর জওয়ান শহীদ হওয়ার পর।
আসলে, একশো বছর আগে সুদূর তাসখন্দে অশুভ আঁতাতের যে বীজ বপন করা হয়েছিল, আজ তা সমস্ত শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে সমাজে বিষ ছড়াতে ব্যস্ত। সুলতান আহমেদ খান তারিন, মহম্মদ শফি, মহম্মদ আলি প্রভৃতি মুজাহিদ হিসেবে খিলাফৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়ে জেহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ‘ইসলামীক আটোমান খলিফেট‘ এর স্বপ্নকে স্বার্থক করতে তুর্কির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পরে ১৯২০ সালে জেহাদী সাথীদের সাথে কাবুল পর্যন্ত পৌঁছান। কাবুলে রুশ কমিউনিস্ট নেটওয়ার্কের সংস্পর্শে এসে মস্কো আসেন এবং অবনি মুখার্জী ও মানবেন্দ্র রায়ের সাথে যুক্ত হোন এবং ঐ বছরেই সকলে মিলে তাসখন্দে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। ঐ সব ইসলামী জিহাদী মনোভাবাপন্ন মানুষদের সাথে ভারতের কমিউনিস্টদের আত্মিক সম্পর্ক কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই। ভারতের বামপন্থীদের ইন্টেলেকচুয়াল পাইয়োনিয়ার মানবেন্দ্র নাথ রায়ের মতে ভারতবর্ষে জাতির ধারনা কোনো কালেই ছিল না, ব্রিটিশরা আসার পরই নাকি ভারতে জাতির ধারনার উন্মেষ ঘটে! অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, ভারতে বামপন্থার পথ চলা শুরু হয়েছিল সুপ্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তাচ্ছিল্যভরে দূরে সরিয়ে রেখে জিহাদী শক্তিকে আপন বানানোর মাধ্যমে।
১৯৬২ ইন্দো-চীন যুদ্ধের দগদগে ক্ষত ও গ্লানি মোচনের জন্য যখন আপামর ভারতবাসী উন্মুখ, সেই যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এক বাম বুদ্ধিজীবী প্রতুল মুখোপাধ্যায়, লিন পিয়াও এর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে রচনা করলেন “তরীতে নির্ভর কর্ণধার” নামক একটি কবিতা। কবিতাটির শেষাংশ একটু তুলে ধরলাম……
চীনের চেয়ারম্যান মাও
আমাদের চেয়ারম্যান মাও
চীনের পথ সে তো আমাদের ও পথ
সেই পথে আগুয়ান ভারতের সর্বহারা।।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বামপন্থী নেতা নাম্বুদিরিপাদ কি বলছেন শুনুন…….
“….. the Chinese had entered territory that they thought was theirs and hence there was no question of aggression.”
(A Traveller and the Road – The Journey of an Indian Communist, Mohit Sen). শুধু তাই নয়, কেরালার বাম নেতা ও জে জোসেফের নেতৃত্বে ঘোষনা করা হয়, এই যুদ্ধে আহত ভারতীয় সেনাদের রক্তদান পার্টি বিরোধী কার্যকলাপ বলে পরিগনিত হবে। ভি এস অচ্যুতানন্দ রক্তদানের পক্ষে সওয়াল করলে, তাকে পার্টি বিরোধী কার্যকলাপের দায়ে অভিযুক্ত করে পার্টির সেন্ট্রাল কমিটি থেকে অপসারিত করা হয়। আজও সমানে বহে চলেছে একই ট্রাডিশন। ২০০২ সালের ১৮ ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার সান্টা ফে তে ‘Come September’ শীর্ষক একটি বক্তব্যে বিশিষ্ট বামপন্থী লেখিকা অরুন্ধতী রায় কি বলেছেন একটু শুনুন …. “In India, not hundreds, but millions of us would be ashamed and offended if we were in anyway implicated with the present Indian Government’s fascist policies which, apart from the perpetration of state terrorism in the valley of Kashmir…… “
অর্থাৎ, স্বৈরাচারী ভারত সরকার কর্ত্তৃক কাশ্মীরে সংঘটিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের কারণে তার মত লক্ষ লক্ষ মানুষ লজ্জিত। কাশ্মীর উপত্যকায় প্রতিনিয়ত মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে ঘটে চলা নারকীয় হত্যালীলা নিয়ে কোনো শব্দ ব্যয় না করে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজের মাতৃভূমিকে স্বৈরাচারী বা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ পরিচালনাকারী বলাটা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা বামপন্থীরাই বলতে পারবেন। Freedom of expression এর দোহাই দিয়ে যদিও বা অরুন্ধতী রায়ের বক্তব্য কে উপেক্ষা করা যায় কিন্তু বিষ্ময়ে হতবাক হতে হয় যখন দেখা যায় এই দেশদ্রোহী বক্তব্য কে বিকৃত মতাদর্শের কিছু মানুষ এদেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে যুবা মননে কদর্যতার ছাপ ফেলতে উদ্যত হয়। হ্যাঁ, প্রতিটি জাতীয়তাবাদী চিন্তনে সিক্ত সংগ্রামী হৃদয় ভীষণভাবে অবাক হবে যখন জানবে যে এই বক্তব্যটিই বাম শাসিত কেরালা রাজ্যের কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ে বি এ ইংরাজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের উদ্দেশ্যে! ২০১৭ সালে সিপিআইএমের কেরালা রাজ্য সম্পাদক কোদিয়ারি বালাকৃষ্ণনের নিজের দেশের সেনা সম্পর্কে বিবমিষা উদ্রেককারী মূল্যায়ন শুনলে বিষ্ময়ে হতবাক হতে হয়। বালাকৃষ্ণনের মন্তব্য অনুযায়ী ভারতীয় সেনার কাজ মহিলাদের অপহরণ করে ধর্ষণ করা!
নাগাল্যান্ডের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক, এতে কোন সন্দেহই নেই। এই ঘটনা নিয়ে এরা সোচ্চার হয়েছেন এবং হওয়া ও উচিত অথচ এই এরাই নিরবিচ্ছিন্ন নীরবতায় ডুবে থাকেন যখন ১৩ই নভেম্বর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কর্নেল বিপ্লব ত্রিপাঠী, তাঁর স্ত্রী এবং তাদের মাত্র আট বছরের শিশুকে পৈশাচিক উল্লাসে হত্যা করে। জীবন পণ করে দেশের অখন্ডতা রক্ষা করে চলা সেনাবাহিনীর মনোবল ভাঙার চক্রান্তে শামিল পেট্রোডলারে লালিত জিহাদী ও বামপন্থীদের এই অপরিসীম বিকৃতির শেষ কোথায়? দেশ বিরোধিতার আকর বিকৃত রাজনৈতিক আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আরব ও চৈনিক সাম্রাজ্যবাদের উপর আস্থাশীল বিশ্বাসঘাতক বাম ও জিহাদীদের প্রতিনিধি জেএনইউ ছাত্রনেতা সার্জিল ইমাম শাহীনবাগ অস্থিরতার মধ্যমনি হয়ে আসাম সহ সমগ্র উত্তর পূর্ব কে আমার আপনার মাতৃভূমি থেকে আলাদা করার দাবি তুলছে। দেশের কিছু উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরাই কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদী; হামে চাহিয়ে আজাদী, জিন্নাওয়ালী আজাদীর স্লোগান তুলেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, নিজেদের বিকৃত রাজনৈতিক উত্তরাধিকার কে ছাপিয়ে আরো একধাপ এগিয়ে স্লোগান তুলছে “ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে, ইনশাল্লাহ ইনশাল্লাহ।”
একদিকে ‘মার্কসবাদ সর্বশক্তিমান, কারণ ইহা সত্য’ আর অপরদিকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মহম্মদুর রসুলুল্লাহ’ অর্থাৎ একদিকে কার্ল মার্কসের তত্ত্ব কে সর্বশক্তিমান হিসেবে প্রচার আর অপরদিকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই অথবা একদিকে বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষদের শ্রেণীশত্রু, প্রতিক্রিয়াশীল বলে দাগিয়ে দিয়ে তাদের উপর হিংস্র শ্বাপদের ন্যায় ঝাঁপিয়ে পরা আর অপরদিকে মৌলবাদী জিহাদী কর্তৃক মানব সভ্যতাকে হয় আপনি মুসলমান, না নয় কাফের বলে দ্বিধা বিভক্ত করা …… এই দুই জোড়া ফলায় দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে নবযৌবনের স্বভাবজাত বৈপ্লবিক মননকে সুকৌশলে জারিত করে তোলার অপচেষ্টা ক্রমাগত চলে আসছে। এখানেই না থেমে নিজেদের সুপ্রাচীন ঋদ্ধ ঐতিহ্যকে তাচ্ছিল্যভরা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে ‘হিন্দু রাষ্ট্র ইজ রেপিস্ট (Hindu state is rapist)’ লেখা ব্যানার নিয়ে এরাই কলকাতার রাজপথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
দেশমাতৃকাকে মাতৃরূপে স্বীকার করতে অস্বীকৃত হওয়া আদ্যন্ত জাতীয়তা বিরোধী মৌলবাদী জিহাদী ও বাম শক্তির এই অশুভ মেলবন্ধন কে কড়া হাতে দমন করা রাষ্ট্রের আশু কর্তব্য। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্য সরকার সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াতের এই মর্মান্তিক আকস্মিক প্রয়াণে উল্লসিত হওয়া বিজাতীয় এলিমেন্ট গুলোকে চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে উদ্যত হয়েছে কিন্তু আমাদের রাজ্যে এই চূড়ান্ত অসংবেদনশীলতার বিরুদ্ধে এখনো কোন কঠোর ভূমিকা নিয়ে রাজ্য সরকার রাষ্ট্রহীতের প্রতি সদর্থক মনোভাব দেখাতে পারেনি। কেন এই অসহায়তা; কিসের স্বার্থে? বৃহত্তর বাঙালি সমাজ দেশবিরোধী এই চরম নোংরামির বিরুদ্ধে সার্বিক প্রতিবাদে গর্জে ওঠার পরিবর্তে ‘বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম’ নিয়ে চিল্লানো কে সংগীতের মর্যাদা দিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছেন! এই বাঙালিকে কি বলবেন? আত্মঘাতী বাঙালি না-কি রাষ্ট্রহীতের চেতনা রহিত রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিধিতে দেউলিয়া হওয়া নির্লজ্জ বাঙালি??
ডঃ তরুণ মজুমদার