হাউস বা গভর্নমেন্ট হাউস। দীর্ঘ ছ’দশক পরিচর্যার অভাবে ধুঁকছিল ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপত্য। অবশেষে ২০১২ সালে এর ইতিহাস সংরক্ষণে ব্রতী হয় রাজ্য সরকার। সংরক্ষণবিদ ও বিশিষ্ট স্থপতি মনিষ চক্রবর্তীকে দেওয়া হয় ইতিহাস পুনরুদ্ধার এবং ভবনটিকে নতুন করে সারিয়ে তোলার কাজ। ২০১৩ সালে ঐতিহাসিক এই ভবনটিকে হেরিটেজের তকমা দেয় রাজ্য সরকার। লন্ডনে পুরোনো বাড়ির গায়ে ‘ব্লু প্লাক’ বা নীল ফলকের কথা অনেকেই জানেন, সেখানকার ঐতিহ্যবাহী গর্বের স্মারক এটি। এবার ঐতিহ্যবাহী ভবন হিসাবে ব্যারাকপুরের গভর্নর জেনারেল হাউসের সদরে বসল ‘ব্লু প্লাক’। সেই সঙ্গে এর দরজা খুলে দেওয়া হল পর্যটকদের জন্যও।
এই গভর্নর জেনারেল হাউসের জন্মবৃত্তান্ত বেশ প্রাচীন। ছোটোলাট লর্ড ওয়েলেসলি ঘিঞ্জি কলকাতা থেকে সামান্য ফুরসৎ পেতে কলকাতা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ব্যারাকপুরে গভর্মমেন্ট হাউস তৈরির উদ্যোগ নেন। সপ্তাহান্তে ছুটি কাটানোর জন্য হুগলি নদীর তীরে নির্জন এই জায়গার থেকে ভালো বিকল্প আর কী-ই বা হতে পারে। তবে সেই কাজ শেষ করে যেতে পারেননি তিনি। ১৮২৩ সালে হেস্টিংসের আমলে শেষ হয় সেই ভবনের নির্মাণ। গভর্নর জেনারেল তো বটেই ছোটো-খাটো ব্রিটিশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সম্মানীয় অতিথি-অভ্যাগত এবং পরবর্তীতে ভাইসরয়েদেরও সপ্তাহান্তিক আস্তানা হয়ে উঠেছিল ব্যারাকপুরের এই গভর্নর হাউস।ইতিহাস সংরক্ষণ তো বটেই, গভর্নমেন্ট হাউসের এই নতুন রূপদান আকৃষ্ট করবে দেশ-বিদেশের ব্রিটিশ শাসকদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী, আগ্নেয়াস্ত্র এবং ছোটো-বড়ো স্মারকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে মিউজিয়ামও। আর্থ-সামাজিক চেহারা ফিরবে গোটা অঞ্চলটির। সে-ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী হেরিটেজ কমিশনের কর্মকর্তারা।
তবে এখনও ব্যারাকপুর কিংবা কলকাতার বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে সুপরিচিত নয় ব্যারাকপুরের এই লাটভবন। তাই সাধারণের কাছে তার গুরুত্ব এবং বর্ণময় ইতিহাসকে তুলে ধরতেই পুনরায় ‘ব্লু প্লাক’ স্থাপনের বন্দোবস্ত করে রাজ্য সরকার।